শুকিয়ে মরছে হালদা নদী কৃষি ও মাছের ক্ষতি
Published: 8th, April 2025 GMT
এক রাবার ড্যামেই শুকিয়ে মরছে হালদা নদী। শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় মিঠাপানির মাছের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পানির অভাবে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সেচ ব্যাহত হচ্ছে।
ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে বাঁধটি অপসারণের সুপারিশ করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। কিছু শিল্পগোষ্ঠীর আপত্তির কারণে প্রচেষ্টা মাঠে মারা গেছে। গত ৩১ মার্চ বাঁধটি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও মানা হয়নি।
পাবর্ত্য চট্টগ্রামের মানিকছড়ি উপজেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে সৃষ্ট হালদা নদী ফটিকছড়ি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এ নদীর ভূজপুর এলাকায় একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। এই ড্যামের ভাটিতে হালদায় পানি নেই বললেই চলে। এই অবস্থার জন্য রাবার ড্যামকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিন দেখা যায়, ফটিকছড়ির ভূজপুর থেকে রোসাংগিরি পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারে পানি নেই। অসংখ্য চর জেগে উঠেছে নদীতে। নদীটির বেশির ভাগ অংশে তলদেশ শুকিয়ে চৌচির। বালু চরের নিচু এলাকা দিয়ে সামান্য পরিমাণে পানি নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ছে। বালতি ভরে সবজি ক্ষেতে দিচ্ছেন চাষিরা।
ভূজপুর, পাইন্দং, হারিয়ালছড়ি, দৌলতপুর, সুন্দপুর, সুয়াবিল ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, যুগ যুগ ধরে চাষিরা হালদা নদীর বিভিন্ন চরে সবজি ও বোরো ধান চাষ করে আসছেন। এই নদীর পানির ওপর নির্ভর করে ফটিকছড়ির ৫-৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকা। কিন্তু নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
সাবেক চেয়ারম্যান শফি নুরী জানান, রাবারড্যামের কারণে হালদার ভাটি এলাকা শুকিয়ে গেছে। চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষক। দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এই অবস্থা।
পাইন্দং এলাকার বাসিন্দা মো.
হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘হালদার চরে ১০০ শতক জমি আছে আমার। সেখানে শুধু সবজির চাষ হতো। নদীর পানিই ছিল চরের উর্বরা শক্তির মূল উৎস। রাবার ড্যামের কারণে বর্তমানে পানি না থাকায় চরের জমিতে সবজি চাষ করা যাচ্ছে না।’
একই ধরনের কথা বলেছেন হালদাপারের বাসিন্দা ও ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিনও। তিনি জানান, হালদার জন্য যতই বড় বড় প্রকল্প আসছে, হালদা ততই মরে যাচ্ছে। একই সঙ্গে হালদায় মা মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামানের ভাষ্য, সমিতিরহাট, রোসাংগিরি, দৌলতপুর, সুয়াবিল, ধুরুং, সুন্দরপুর, ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং, নারায়ণহাটসহ কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির সেচ হালদা নদীর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু রাবার ড্যামের কারণে ভাটি এলাকার এই ইউনিয়নগুলোতে পানি আসতে পারছে না। যে কারণে হালদা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকার ফসলি জমি অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়েছে।
ফটিকছড়িতে হালদা নদীর পানিশূন্যতার জন্য রাবার ড্যামকে দায়ী করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া। তাঁর ভাষ্য, এই বাঁধের কারণে ভূগর্ভস্থ পানি শুকিয়ে গেছে। হালদাও ধ্বংস হয়ে গেছে। বাঁধের ওপরে যে পানি জমা আছে, তা নিয়ে চলছে দ্বন্দ্ব। বুয়েট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের যৌথ প্রতিবেদনে এই বাঁধ অপসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু কিছু শিল্প গ্রুপের কারণে তা বস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ৩১ মার্চ বাঁধ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও মানা হয়নি। মা মাছের এবারও ডিম না ছাড়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। গত বছরও একই কারণে রুই জাতীয় মাছ ডিম ছাড়েনি। মৎস্য দপ্তরও মাথা ঘামাচ্ছে না।
উপজেলা প্রকৌশলী তন্ময় নাথ জানান, রাবার ড্যামের কারণে উজান এলাকার মানুষ সুফল ভোগ করলেও ভাটি এলাকায় পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। রাবার ড্যামের কারণে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মাছের প্রজনন নষ্ট হবে ও ভাটির দিকে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
চট্টগ্রামের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, হালদায় মৎস্যসহ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে। পানি না থাকলে হালদা ঘিরে নেওয়া বাকি উদ্যোগগুলোও ব্যর্থ হয়ে যাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নদ নদ র প ন এল ক র মৎস য উপজ ল র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
স্ত্রী-ছেলেসহ তিন খুনের দায় স্বীকার, ১০ দিনের রিমান্ড
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জে তিন খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. ইয়াসিন পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দায় স্বীকার করেছে। শনিবার বিকেলে তাকে তোলা হয় জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বেলায়েত হোসেনের আদালতে। সেখানে ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান।
শুক্রবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া এলাকায় ময়লার স্তূপ খুঁড়ে ইয়াসিনের স্ত্রী লামিয়া আক্তার (২২), চার বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ ওরফে রাফসান লাবিব ও লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না আক্তারের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকেই এলাকাবাসী ইয়াসিনকে (২৪) ধরে পুলিশে দেন। সে মিজমিজি দক্ষিণপাড়ার মো. দুলালের ছেলে। আগে ইয়াসিন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাত। পুলিশ জানিয়েছে, ছিঁচকে চোর ও মাদকাসক্ত হিসেবেও পরিচিত সে।
শুক্রবার রাতেই লামিয়ার মেজো বোন মুনমুন আক্তার বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে ইয়াসিন ছাড়াও তার বাবা মো. দুলাল (৫০) ও বোন মোসা. শিমুকে (২৭) আসামি করা হয়েছে। মুনমুন জানিয়েছেন, লামিয়া সিদ্ধিরগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ৫ বছর আগে ইয়াসিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বড় বোন স্বপ্নাও লামিয়ার সঙ্গে পশ্চিমপাড়ার ভাড়া বাসায় থাকতেন। ৭ এপ্রিল দুপুরে ওই বাসায় বোনদের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ কথা হয়। এর পর থেকে তাদের মুঠোফোনটি বন্ধ ছিল।
মামলায় মুনমুন উল্লেখ করেছেন, মাদকাসক্ত ইয়াসিন কোনো কাজ করত না। প্রায় সময় টাকার জন্য লামিয়াকে মারধর করত ও হত্যার হুমকি দিত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার ইয়াসিন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।