দেশের কৌশলগত চারটি খাতে প্রয়োজনীয় নীতিগত পদক্ষেপ নিলে প্রতিবছর এসব খাতে প্রায় ৩৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। খাত চারটি হচ্ছে আবাসন, শিল্পে ব্যবহৃত রংশিল্প, তৈরি পোশাক ও ডিজিটাল আর্থিক সেবা।

চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রাইভেট সেক্টর ডায়াগনস্টিক (সিপিএসডি) প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন(আইএফসি)।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের আবাসন খাতে ডিজিটাল ম্যাপিং, জমি নিবন্ধন ও জমির অতিরিক্ত দাম নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান করা গেলে এ খাতে প্রতিবছর ২৩ লাখ ৭ হাজার কর্মসংস্থান বাড়বে। আবার শিল্পের রঙের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লাগে; শুল্কের হারও অনেক বেশি। এটি ঠিক করা গেলে এ খাতে সাড়ে ছয় লাখ কর্মসংস্থান বাড়বে।

এ ছাড়া ডিজিটাল আর্থিক সেবায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মার্চেন্টদের লেনদেন সীমা বাড়ানোর মতো কিছু জটিলতার সমাধান করা হলে এ খাতেও ৪ লাখ ৬০ হাজার কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশের ক্ষেত্রে পাঁচটি বাধার কথা উল্লেখ করা হয়। এগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ সমস্যা, অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, দুর্নীতি, বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক খাত ও করহার।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনুষ্ঠানস্থলে দুটি পৃথক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন। আলোচনা দুটি সঞ্চালনা করেন আইএফসির বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হোল্টম্যান।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে আইএফসির সুপারিশগুলো কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন প্রশ্ন করা হয় লুৎফে সিদ্দিকীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তা নতুন কিছু নয়। আগে থেকেই এসব সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, এখন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে যত বেশি সম্ভব কর্মসংস্থান বাড়ানো। প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ উঠে এসেছে তা সরকারের কাজে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন, বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদীর, অনন্ত গ্রুপের এমডি শরিফ জহির, এবিসি রিয়েল এস্টেটের এমডি শ্রাবন্তী দত্ত ও নিপ্পন পেইন্টের হেড অব অপারেশনস অরুণ মিত্রা।

দেশে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রধান চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন শরিফ জহির। তিনি বলেন, অবকাঠামো অন্যতম বড় সমস্যা। এটি সমাধান করা গেলে বর্তমান কর্মসংস্থানের পরিমাণ দুই-তিন গুণ বাড়ানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া পরিবহন ও সরবরাহ খাত, গ্যাস-বিদ্যুতের মতো বিভিন্ন পরিষেবা এবং শুল্ক-কর নিয়েও নিয়মিত সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানান তিনি। শরিফ জহির বলেন, সবগুলো সমস্যাই সমাধানযোগ্য। তবে এ জন্য একটি সুস্পষ্ট পথনকশা থাকা আবশ্যক।

আবাসন খাত নিয়ে শ্রাবন্তী দত্ত জানান, ঢাকা শহরে জমির অতিরিক্ত দামের কারণে সাধারণ মানুষের জন্য কম খরচে আবাসন সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মোট ব্যয়ের ৫০ শতাংশের বেশি চলে যায় জমির পেছনে। ঢাকার বাইরে কম দামে জমি পাওয়া যায়; কিন্তু যোগাযোগ ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা কম থাকায় এ ধরনের আবাসনের চাহিদা কম থাকে। এ ক্ষেত্রে আবাসন কোম্পানিগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, দীর্ঘমেয়াদি জামানত সুবিধা, করছাড় ও প্রণোদনাসহ বেশ কিছু নীতি সহায়তা প্রয়োজন।

সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আবাসনের জন্য স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য বাস্তবসম্মত না। গৃহঋণে সুদহার কম থাকায় ব্যাংকগুলো তাতে কম আগ্রহী হয়। এ ছাড়া আইনি অনেক জটিলতাও রয়েছে। এ জন্য সরকারকে গৃহঋণের জন্য পৃথক আরও প্রতিষ্ঠান তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।

দেশে রং ও তার কাঁচামাল আমদানিতে বাড়তি শুল্ক কমানোর দাবি জানান অরুণ মিত্রা।

আলোচনায় বিকাশের কামাল কাদীর বলেন, বিদেশিরা এখানে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই এ প্রতিবেদন দেখবেন। তাই প্রতিবেদনে যেসব চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো যেন ভবিষ্যতে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র র জন য সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

যেভাবে ঘোরাবেন টাকার চাকা

জীবনের চলতি পথে প্রতি ধাপে টাকার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। টাকা সুখ এনে দিতে পারে না। প্রয়োজনের সময়ে টাকার অভাব মানুষের জীবনকে কতটা দুর্বিষহ ও বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে সে কথা বোধ করি কম-বেশি সবারই জানা।
ভেবে-চিন্তে খরচ
টাকা আপনার হাতে আছে। তাই বলে অকারণে কিংবা মামুলি বিনোদনের জন্য তা খরচ করবেন না। খরচ যদি করতে হয়, ভেবে-চিন্তে করুন। ঠিক যতটুকু করা প্রয়োজন, ততটুকুর মধ্যে সামলে রাখুন নিজের টাকা খরচের লোভ।
অপেক্ষা বিপদের
রক্ত পানি করা টাকা খরচ করে বাবা-মা আপনাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছেন মূলত পড়াশোনা করানোর উদ্দেশ্যেই। এ ব্যাপারটি যত দ্রুত আপনি উপলব্ধি করবেন, ততই মঙ্গল। এর পাশাপাশি এ উপলব্ধি করতে পারাও ভালো যে, পড়াশোনার ক্ষতি না করে টিউশনি বা লেখালেখি বা অন্যান্য কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করে সামান্য পরিমাণে হলেও অর্থ উপার্জন করা যায় কিনা। এতে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য নিজেকে যেমন ঝালাই করে নিতে পারবেন, তেমনি পেয়ে যাবেন স্বাবলম্বী হওয়ার প্রাথমিক পাঠ। না হয় সামনে বিপদের অপেক্ষায় থাকুন!
খরচের লাগাম
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া ও হালকা হাত-খরচের জন্য সব শিক্ষার্থীকে বাসা থেকে কম-বেশি টাকা দেওয়া হয়। আপনি যদি বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ হয়ে থাকেন, চেষ্টা করুন মুহূর্তের আনন্দের জন্য সেই টাকা দেদার উড়িয়ে না দিয়ে, বরং সেখান থেকে প্রতিদিন সামান্য করে হলেও জমানোর। ভালো হয় যদি স্কুলজীবন থেকে এ অভ্যাসটি গড়ে তুলতে পারেন। 
ভাবুন তো, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ হয়ে যাবে, তখন নিশ্চয়ই জাদুর মতো করে এক লহমায় সবার কপালে চাকরি জুটবে না। বিশ্বাস করুন, বেকারত্বের দিনগুলো ভয়াবহ রকমের মানসিক বিষাদের। এ সময়ে এতদিনের হাত-খরচ থেকে জমানো টাকাগুলো আপনার দারুণ উপকারে আসবে। নাহয় এর কষ্ট আপনাকে ভোগ করতে হবে। 
সঙ্গী বাছাই
বন্ধু-বান্ধব কিংবা একান্ত মনের মানুষ– এ সময়ে সঙ্গী বাছাইয়ে ভুল করে ফেলেন অনেকে। সেই ভুলের মাশুল তো কাউকে কাউকে জীবন দিয়েও দিতে হয়। u

সম্পর্কিত নিবন্ধ