Samakal:
2025-04-12@21:23:24 GMT

ভাড়া করা লোকে সরকারি সেবা

Published: 8th, April 2025 GMT

ভাড়া করা লোকে সরকারি সেবা

সরকারি কর্মচারী না হয়েও দিনাজপুর সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নিয়মিত কাজ করছেন স্বপন রায়। সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি অর্থ নিয়ে সেবা দিচ্ছেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সেবাপ্রার্থীরা।
শশরা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর ও নামজারি রিপোর্ট দেওয়াসহ যাবতীয় কাজ করার কথা তহশিলদার আবুল কাশেমের। কম্পিউটারে অদক্ষ হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে তিনি কার্যালয়ে স্বপন রায় নামে একজন কম্পিউটার অপারেটর রেখেছেন। স্বপন সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে কয়েক গুণ বেশি টাকা আদায় করছেন।
সরেজমিন শশরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করছেন স্বপন রায়। বারান্দায় থাকা ঝাড়ুদার সাগর কেউ এলে কী সমস্যা তা জেনে পাঠিয়ে দিচ্ছেন তাঁর কাছে। খাজনা আদায়, নামজারি রিপোর্টসহ সব কাজ করে দিচ্ছেন স্বপন রায়। এ সময় বসে থাকতে দেখা যায় তহশিলদার বা ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আবুল কাশেমকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের কয়েকজন কর্মচারী জানান, ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খাজনার জন্য নগদ টাকা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। সেবাপ্রত্যাশীরা খাজনা অনলাইনের মাধ্যমে জমা দেবেন। ৮ দশমিক ২৫ একর পর্যন্ত মওকুফি খাজনা। এতে বছরে শতকপ্রতি সর্বোচ্চ ২০ টাকা করে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু স্বপন নামের এই ব্যক্তি সেবাপ্রত্যাশীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। অথচ তিনি কার্যালয়ের কেউ নন। তাঁর স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনো নিয়োগপত্র নেই। তাঁর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি বা জানানোও হয়নি। 
কৃষক ফিরোজুল ইসলাম বলেন, ‘২৯ শতক জমির খাজনা দিতে আইছি। ২৪ হাজার টাকা চাইছে। টাকা দিতে পারি না, কাজও হয় নাই।’ একই এলাকার কৃষক সিরাজুল বলেন, ভূমি অফিসে গেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে ৪ হাজার টাকা চান। টাকা দেওয়ার পরও ঘোরানো হয় দিনের পর দিন। সেবা ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। ৩ বিঘা জমির খাজনা দিতে হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। আমরা তো জানি না, স্বপন অফিসের কেউই না।
শশরা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর আনাফ বলেন, ভূমি অফিসে স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম সামলানোর কথা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে। তবে স্বাভাবিক এ কার্য ব্যবস্থাপনা অস্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে এখানে। স্বপন রায় এ অফিসের কেউ নন। অথচ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, নথি তাঁর দায়িত্বে রাখা হয়েছে। তাঁকে কে, কীভাবে নিয়োগ করলেন– খতিয়ে দেখা দরকার।
এ বিষয়ে স্বপন রায় বলেন, দুই বছর ধরে এখানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করছি। কর্মকর্তারা তাদের বেতন থেকে আমাকে টাকা দেন। চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে বলেন, ‘মৌখিক চুক্তি হয়েছে।’ সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, মানুষ ইচ্ছায় দিলে নেই। কাউকে জোর করা হয় না।
ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক আজাহার আলী বলেন, আমি তিন মাস হলো যোগ দিয়েছি। এসেই স্বপন রায়কে কাজ করতে দেখছি।
তহশিলদার আবুল কাশেম বলেন, স্বপন আগে থেকেই ছিলেন। তাঁর স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী কোনো নিয়োগ নেই। নিয়োগ ছাড়া সরকারি অফিসের কম্পিউটারে বসে কেউ কাজ করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পারেন না। আমি কম্পিউটার চালাতে পারি না। তাই কাজের স্বার্থে তাঁকে রাখতে হয়েছে।
সদর ইউএনও ফয়সাল রায়হান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিবেদন দেওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স বপন র য় অফ স র ক ক জ কর করছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রূপনগরে শিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ খেলার জায়গা উদ্বোধন

এলাকাভিত্তিক খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিশুদের জন্য রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর আবাসিক এলাকায় ভ্রাম্যমাণ খেলার জায়গা (মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড) উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে স্কুল অব লাইফ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ও হেলথ ব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার সম্মিলিত উদ্যোগে এটির উদ্বোধন করা হয়। এই আয়োজনে সহযোগিতা করেন রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা।

আয়োজকেরা জানান, প্রতি শনিবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রূপনগর আবাসিক এলাকার ১৫ নম্বর সড়কে নিয়মিত মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ডে খেলাধুলার আয়োজন করা হবে। খেলাধুলার মধ্য থাকবে দাবা, লুডু, ক্যারম, দড়ি লাফ ও ব্যাডমিন্টন। এ ছাড়াও থাকবে ছবি আঁকা, হস্তশিল্প ও সামাজিকীকরণের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মাঠ ও পার্কের অপ্রতুলতা ঢাকা শহরের একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের ৩৭টিতে কোনো খেলার মাঠ বা পার্ক নেই। শিশুদের খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এলাকাভিত্তিক মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড তৈরি একটি কার্যকর সমাধান। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে, শহর হবে প্রাণবন্ত ও বাসযোগ্য।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্কুল অব লাইফের চেয়ারম্যান চিকিৎসক অনুপম হোসেন বলেন, ঘরবন্দী জীবনে শিশুরা হাঁপিয়ে উঠেছে। করোনাকালে দীর্ঘদিন ঘরে থাকার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এলাকাভিত্তিক স্বল্প ব্যবহৃত বা অব্যবহৃত রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড তৈরি করে খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরি করা যায়। এতে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ ও সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার মানসিকতা গড়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ-পার্ক নেই। অর্থ ও স্থান সংকুলান বিবেচনায় সিটি করপোরেশনের পক্ষে দ্রুত বড় আকারের মাঠ-পার্ক তৈরি সম্ভব নয়। তবে খুব কম খরচে ও স্বল্প জায়গায় শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে এলাকাভিত্তিক খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের স্থান গড়ে তোলা সম্ভব। নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্কুল অব লাইফের সদস্যসচিব সাবরিনা নওরিন লিমু, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মকর্তা, মিরপুর সেকশন- ৭ এর রূপনগর আবাসিক এলাকার ১৫ নম্বর সড়কের এলাকাবাসী ও শিশু-কিশোরেরা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মিঠুন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ