ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না এলাকায় সবজি ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছিলেন এক কৃষক। রাস্তার পাশের জমিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সারের সঙ্গে মাজরা ও লাল পোকা দমনে ব্যবহার করছিলেন থায়ামেথোক্সাম (২০%) ও ক্লোরান্টরানিলিপ্রোল (২০%) গ্রুপের কীটনাশক। কিছুদূর এগিয়ে সাধুহাটি গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, টমেটো ক্ষেতে ফল ছিদ্রকারী পোকামাকড় দমনে পানির সঙ্গে এবামেকটিন গ্রুপের কীটনাশক মেশাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর তিনি ক্ষেতে স্প্রে করেন।
এসব কীটনাশক নির্ধারিত মাত্রায় দেওয়া হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি দুই কৃষক। কিছুদিন ধরে সদর উপজেলার নগরবাথান, সাধুহাটি, হলিধানী, পবহাটিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে এমন অসংগতি পাওয়া গেছে। কৃষক জানিয়েছেন, নিজেদের ধারণা ও দোকানির পরামর্শে এসব স্প্রে করেন তারা। এক্ষেত্রে সঠিক মাত্রা, প্রয়োগ ও নির্দিষ্ট দিনের ব্যবধানও মানা হয় না। এতে প্রায়ই মাত্রাতিরিক্ত স্প্রে করছেন তারা।
সবজি তোলার ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে না সময়ের ব্যবধান। হাতেগোনা কিছু কৃষক কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুসরণ করছেন। দরিগোবিন্দপুর গ্রামের চাষি আল মমিন প্রায় এক বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, ফল ও ডোগা ছিদ্রকারী পোকা দমনে এক সপ্তাহ পর পর ১৬ লিটার পানিতে ১৫ মিলি ওষুধ (কীটনাশক) দিতে হয়। গরমের সময় প্রায় প্রতিদিনই দিতে হচ্ছে। স্প্রে করার এক থেকে দু’দিন পর বাজারজাত করেন সবজি।
কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে, উপজেলায় সবজির আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বেগুন ৩২০ হেক্টর, টমেটো ১৭০, শিম ৮৫, লাউ ২৫০ হেক্টরসহ অন্যান্য সবজি রয়েছে। ধানের আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টরে। এসব ফসলে আইসোসাইক্লোসেরাম, এবামেকটিন, ক্লোরান্টরানিলিপ্রোল, থায়ামেথোক্সামসহ নানা গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।
বোতলের লেবেল বা প্যাকেটে লেখা নির্দেশনা ও কৃষি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেগুনে ফল ও ডোগা ছিদ্রকারী পোকা দমনে আইসোসাইক্লোসেরাম ১৬ লিটার পানিতে ৯ দশমিক ৬ মিলি ব্যহারের নিয়ম রয়েছে। কৃষক ১৬ লিটার পানিতে ১৫ মিলি পর্যন্ত ব্যবহার করছেন। এটি প্রয়োগের অন্তত ১৪ দিন পর সবজি সংগ্রহের কথা থাকলেও কৃষক দু-এক দিন পরই বাজারজাত করেন।
টমেটোর পোকামাকড় দমনে ১৬ লিটার পানিতে ১৯ দশমিক ২ মিলি এবামেকটিন মিশিয়ে প্রতি এক শতক জমিতে ২ লিটার স্প্রে করার নিয়ম। কৃষক প্রতি ১৬ লিটারে ১৬ মিলি ব্যবহার করছেন। সাত দিন অন্তর এটি ব্যবহার করতে হয়। এটি প্রয়োগের ২১ দিন পর ফল সংগ্রহের নির্দেশনা থাকলেও সাত দিনে সংগ্রহ করার তথ্য মিলেছে। ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনে থায়ামেথোক্সাম গ্রুপের কীটনাশক ১৬ লিটার পানিতে ৮ মিলি মেশানোর কথা থাকলেও কৃষক ১৫ মিলি পর্যন্ত ব্যবহার করছেন। অনুমোদিত মাত্রায় এটি প্রয়োগ করলে দু’দিন পর বেগুন ও টমেটো সংগ্রহ করা যাবে। ১৪ দিন পর সংগ্রহ করা যাবে শিম।
এক সপ্তাহ পর পর স্প্রে না করলে মাজরা পোকা দমন হয় না বলে দাবি সাগান্না এলাকার কৃষক আব্দুর রশিদের। তিনি বলেন, ৮-১০ বছর আগের তুলনায় এখন পোকার সংক্রমণ হয় বেশি। কীটনাশক প্রয়োগের নিয়ম দোকানি ও কেম্পানির লোকদের কাছ থেকে নেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেও দেন। টমেটো চাষি রাশেদুল ইসলামের ভাষ্য, স্প্রে করার এক সপ্তাহ পর সবজি তুলে বাজারজাত করেন। তাঁর দাবি, এতে বিষের প্রতিক্রিয়া থাকে না। এবামেকটিন ১৬ লিটার পানিতে ১৬ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করেন। কৃষি বিভাগ থেকেও মাত্রা বলে দেওয়া হয়।
থায়ামেথোক্সাম ও ক্লোরান্টরানিলিপ্রোল গ্রুপের কীটনাশক পানির সঙ্গে মিশিয়ে ধানে স্প্রে করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। সারের সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করলে পোকা দমনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির উপকারী জীবাণুও মরে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অপরিমিত ব্যবহারে পোকামাকড়ের কীটনাশক সহনশীল ক্ষমতা বাড়ছে। ফলে স্প্রে করলেও বেড়ে যাচ্ছে সংক্রমণ।
জানা গেছে, জেলায় পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে কীটনাশক বিক্রির লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান আছে ২ হাজার ৫৮৮টি। এ লাইসেন্স দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয়। উপজেলার বহাটি বিশ্বাসপাড়ার কীটনাশক বিক্রেতা নজরুল ইসলাম লিটন বলেন, কোম্পানির প্রতিনিধি কিংবা গায়ের নির্দেশনার ভিত্তিতেও কৃষককে কীটনাশক প্রয়োগ করতে বলা হয়।
কৃষককে উঠান বৈঠক বা মাঠে গিয়ে কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানান একটি কোম্পানির জেলা বিপণন কর্মকর্তা সুবোধ বকশি। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধির বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মাত্রা মানতে বললেও অনেক সময় কৃষক বিশ্বাস করেন, বেশি দিলে কাজ করবে। তখনই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়।
কৃষকদের ফসলে পোকার ধরনভেদে মাত্রা বলে দেওয়া হয় বলে জানান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর এ নবী। তিনি বলেন, অনেক কৃষক দোকান থেকে শুনে ও নিজেদের মতো করে স্প্রে করেন। এতে মাত্রা ঠিক না থাকায় পোকামাকড়ের কীটনাশক সহনশীলতা বাড়ে।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, চাহিদামতো উৎপাদনে ও চাহিদা পূরণে সবজি চাষে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। সেটি নির্দেশনা মেনে হতে হবে। অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাজারজাত করলে মানবদেহের ক্যান্সারসহ জটিল রোগের কারণ হতে পারে।
কীটনাশক প্রয়োগের পর নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধান মেনে সবজি বাজারজাত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন ফলিত পুষ্টি ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারটান) ঝিনাইদহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সোনিয়া শারমিন। তিনি বলেন, এ নিয়ম মানলে সেটি নিরাপদ হবে। সবজি বা ফল খাওয়ার আগে এক লিটার পানিতে দুই চামচ লবণ ও চার চামচ ভিনেগার দিয়ে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে কীটনাশক চলে যায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ১৬ ল ট র প ন ত ব যবহ র করছ ব যবহ র কর কর মকর ত দ ন পর উপজ ল করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রূপনগরে শিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ খেলার জায়গা উদ্বোধন
এলাকাভিত্তিক খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিশুদের জন্য রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর আবাসিক এলাকায় ভ্রাম্যমাণ খেলার জায়গা (মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড) উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে স্কুল অব লাইফ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ও হেলথ ব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার সম্মিলিত উদ্যোগে এটির উদ্বোধন করা হয়। এই আয়োজনে সহযোগিতা করেন রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা।
আয়োজকেরা জানান, প্রতি শনিবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রূপনগর আবাসিক এলাকার ১৫ নম্বর সড়কে নিয়মিত মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ডে খেলাধুলার আয়োজন করা হবে। খেলাধুলার মধ্য থাকবে দাবা, লুডু, ক্যারম, দড়ি লাফ ও ব্যাডমিন্টন। এ ছাড়াও থাকবে ছবি আঁকা, হস্তশিল্প ও সামাজিকীকরণের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মাঠ ও পার্কের অপ্রতুলতা ঢাকা শহরের একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের ৩৭টিতে কোনো খেলার মাঠ বা পার্ক নেই। শিশুদের খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এলাকাভিত্তিক মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড তৈরি একটি কার্যকর সমাধান। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে, শহর হবে প্রাণবন্ত ও বাসযোগ্য।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্কুল অব লাইফের চেয়ারম্যান চিকিৎসক অনুপম হোসেন বলেন, ঘরবন্দী জীবনে শিশুরা হাঁপিয়ে উঠেছে। করোনাকালে দীর্ঘদিন ঘরে থাকার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এলাকাভিত্তিক স্বল্প ব্যবহৃত বা অব্যবহৃত রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড তৈরি করে খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরি করা যায়। এতে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ ও সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার মানসিকতা গড়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ-পার্ক নেই। অর্থ ও স্থান সংকুলান বিবেচনায় সিটি করপোরেশনের পক্ষে দ্রুত বড় আকারের মাঠ-পার্ক তৈরি সম্ভব নয়। তবে খুব কম খরচে ও স্বল্প জায়গায় শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে এলাকাভিত্তিক খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের স্থান গড়ে তোলা সম্ভব। নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্কুল অব লাইফের সদস্যসচিব সাবরিনা নওরিন লিমু, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মকর্তা, মিরপুর সেকশন- ৭ এর রূপনগর আবাসিক এলাকার ১৫ নম্বর সড়কের এলাকাবাসী ও শিশু-কিশোরেরা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মিঠুন।