মুরাদনগরে আ.লীগকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে
Published: 8th, April 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এই অভিযোগ নাকচ করে উপদেষ্টা বলেছেন, স্থানীয় একজন চাঁদাবাজের সহযোগীদের রক্ষার জন্য তাঁর ওপর এই দোষারোপ করা হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মোল্লা মজিবুল হক অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়বিষয়ক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও তাঁর চাচাতো ভাই ওবায়েদ উল্লাহর সহযোগিতায় মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা–কর্মীদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এসব নেতা–কর্মী মুরাদনগরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছেন। আর এসব কর্মকাণ্ডে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা বাধা দেওয়ায় তাঁদের গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, মুরাদনগরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কমিটিতে উপদেষ্টা আসিফের চাচতো ভাই ওবায়েদ উল্লাহকে আহ্বায়ক করে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতা–কর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের ঘনিষ্ঠ সহচর গোলাম কিবরিয়াকে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রমজানের শুরুর দিকে শ্রীকাইল ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি আনোয়ারকে এনসিপির ব্যানারে সজ্জিত গাড়ি দিয়ে এলাকায় আনা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির ২০–২৫ জন নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, গত ২৪ মার্চ মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ সিএনজিস্ট্যান্ডে ওবায়েদ উল্লাহ সিরিয়াল ভেঙে সিএনজি নিতে চাইলে অন্য সিএনজিচালকরা বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওবায়েদ উল্লাহ সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজীবসহ তরুণদের ডেকে এনে অন্য সিএনজিচালকদের মারধর করেন ও তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ছাড়া সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কুমিল্লার পুলিশ সুপার পরিবর্তন, নতুন পুলিশ সুপার এসেই মুরাদনগর ও বাঙ্গুরা থানার ওসিকে বদল করে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর নির্যাতন করছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় তাঁরা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান।
মুরাদনগরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা গত ৫ আগস্টের পরও মামলা-হামলার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তিনি দাবি করেন, মুরাদনগরে এনসিপিতে যাঁরা আছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা–কর্মী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি তাঁর নজরে এসেছে। স্থানীয় একজন চাঁদাবাজের সহযোগীদের রক্ষার জন্য তাঁর ওপর এই দোষারোপ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, ‘গত ২৪ মার্চ রাতে মুরাদনগরে একজন চাঁদাবাজকে (আবুল কালাম নামে ইউনিয়ন পর্যায়ের এক শ্রমিক দল নেতা) ছাড়াতে থানায় হামলা করেছিল বিএনপি। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে থানায় হামলা করা হয়। থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পুলিশ আহত হয়, এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে থানায় গিয়েছিল, তাঁদেরও আহত করা হয়। থানায় হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। সেই ঘটনায় জড়িতদের পুলিশ খুঁজছে। ওই অপরাধীদের শেল্টার দেওয়ার জন্যই সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা ব্লেম (দোষারোপ) দেওয়া হচ্ছে। অথচ থানায় হামলার ঘটনাটা সারা দেশের মানুষ দেখেছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে হামলার ভিডিওও প্রকাশিত হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র দনগর উপজ ল কর ম দ র ব এনপ র উপদ ষ ট কর ম র আওয় ম ঘটন য় স এনজ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা
মুরাদনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর এই কাজের কদর না থাকলেও বৈশাখ রাঙাতে এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো চাহিদা নেই মৃৎশিল্পের। এই পেশায় নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাই প্রায় সারাবছরই অধিকাংশ নারী মৃৎশিল্পীকে অবসর সময় কাটাতে হয়। পুরুষ মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে নববর্ষের আগে সব কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন পুরোনো এই পেশায়। মৃৎশিল্প থেকে সারা বছর কারিগররা আয়ের মুখ না দেখলেও বৈশাখী মেলা ঘিরে থাকে বাড়তি উপার্জনের সম্ভাবনা। এবারও মাসজুড়ে প্রতিটি কুমারপাড়ায় ছিল ব্যস্ততা।
কামাল্লা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের পালপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুটছেন, কেউ সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কেউবা খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাতিল, মাটির চুলা, শিলপাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ। এ ছাড়া রয়েছে মাটির তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র।
কামাল্লা গ্রামের সন্ধ্যা রানী পাল ও শিখা রানী পাল জানান, এখন মাটির জিনিসের তেমন কদর না থাকায় সারাবছর টানাপোড়েনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। পূর্বপুরুষের পেশা হওয়ায় ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারছেন না। সারাবছর অবসর সময় পার করলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের চাহিদা থাকায় এই সময়ে ব্যস্ততা থাকে তাদের।
কথা হয় মৃৎশিল্পী হরি ভূষণ পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বছরের এই একটি উৎসব ঘিরে তাদের অনেক আশা থাকে। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির খেলনা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় কিছু আয় হয়। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পী কানন বালা জানান, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলা থেকে শখের বসে অনেকে মাটির সামগ্রী, বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনেন। তাই এই সময়ে কর্মব্যস্ততা বাড়ে তাদের।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের খুশি পাল বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের পর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন নেই। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের ভাষ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যে হারিয়ে গেছে, বিষয়টি তা নয়। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মাটির তৈজসপত্রর চাহিদা এখন প্রচুর। মুরাদনগরে যদি বেসরকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এই শিল্প থেকে ভালো সুফল পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিআরডিবি ও সমবায় কার্যালয় থেকে যেন সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মুরাদনগরে কোনো মৃৎশিল্পের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, তাই মৃৎশিল্পীদের এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজে সরকারি সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।