সড়কের ওপর কলাপাতায় ঢাকা ছেলের মরদেহ পড়ে আছে। সেখানে ছুটে এসে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না মো. রিয়াদ। যে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে তাঁর ১৬ বছর বয়সী ছেলে অনীক মারা গেছে, সেটির মালিক তিনি নিজেই। ট্রাকটিও ঘটনাস্থলেই ছিল। সেখানে হাঁটু গেড়ে বসে বিলাপ করছিলেন রিয়াদ। বলছিলেন, ‘ও খোদা, তুঁই ইয়ান কিল্লা, অন এই ট্রাক দি আঁই কিরমু।’
ট্রাক্টরকে ট্রাকে পরিণত করে মাটি ও ফসল পরিবহন করা হয় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। এ ধরনের একটি ট্রাকের মালিক মো.
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বেলা দেড়টায় মৌলভিবাজার থেকে পশ্চিম দিকে যাওয়ার রাস্তায় তাঁরা অনীকের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন কয়েকটি কলাপাতা দিয়ে মৃতদেহটি ঢেকে দেন। নূর ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো অনীকের বাবা রিয়াদ ট্রাকটির মালিক। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে রিয়াদ ছেলের মৃতদেহ দেখতে পান। বুক চাপড়ে তিনি বলতে থাকেন, এখন এই ট্রাক দিয়ে কী করবেন তিনি।
সন্দ্বীপ থানার উপপরিদর্শক চয়ন দাশগুপ্ত ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাকটির মালিক অনীকের বাবা মো. রিয়াদ। আজ মান্না নামে একজন চালাচ্ছিলেন ট্রাকটি। ঘটনাস্থলে কড়া ব্রেক ধরার ফলে ট্রাকে থাকা অনীক চাকার নিচে পড়ে পিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করে। দুর্ঘটনার পর ট্রাকের চালক মান্না পালিয়েছেন।
ট্রাক্টর থেকে ট্রাকে রূপান্তর করা এসব বাহনে মালামাল বহন করা হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
জীবনে বহু কিছু করার পর ‘ধৈর্য-সহ্যে’ কপাল খুলছে গোলাম রসুলের
সবে সন্ধ্যা নেমেছে শহরের বুকে। খুলনা নগরের সেন্ট যোসেফ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের ফুটপাতে ছোট একটা দোকানের সামনে বেশ ভিড়। অর্ডার দিয়ে কেউ টুলে বসে আছেন, কেউ আবার প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন। বিক্রেতা দুজনের চার হাত যেন চলছে সমানতালে। একজন ছোট ছোট ফুচকা বানাচ্ছেন, তো আরেকজন ভেলপুরির প্লেট সাজাচ্ছেন। আবার কখনো একজন পেঁয়াজ–শসা কুচি করে নিচ্ছেন আর আরেকজন বিল রাখা বা টিস্যু এগিয়ে দেওয়ায় ব্যস্ত।
নগরের আহসান আহমেদ রোডের সেন্ট যোসেফ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের একটি ছোট ফুচকা ও ভেলপুরির ভ্রাম্যমাণ দোকানের চিত্র এটি। দোকানের নামটাও বেশ অন্য রকম। ‘ধৈর্য-সহ্য ছোট ফুচকা ও ভেলপুরি স্টোর’। দোকানটি চালান গোলাম রসুল নামের একজন। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত চলে এই ভ্রাম্যমাণ দোকান। এই দোকানের ছোট ফুচকা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
গোলাম রসুলের বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের পুরাতন ঘোষগাতী গ্রামে। সাত ভাই–বোনের সংসারে রসুলের বড় ভাই ভাজাপোড়া খাবারের ব্যবসা করতেন। বুঝতে শেখার পর থেকেই তাই এতেই হাতেখড়ি হয় রসুলের। তবে তাতে ঠিক পোষাচ্ছিল না। তাই বছর ৩০ আগে কিছু করার আশায় খুলনা শহরে আসেন গোলাম রসুল। তবে এই শহরে পুরোপুরি থিতু হতে পারেননি। নানা টানাপোড়েনে কখনো খুলনা, কখনো মোল্লাহাট, আবার কখনো ঢাকায় কেটেছে তাঁর সময়। ৪৮ বছরের এই জীবনে নানা রকম কাজ করেছেন। ব্যবসাও করেছেন অনেক কিছুর। তবে সেসব ব্যবসায় কেবল লোকসানই হয়েছে তাঁর। অবশেষে ‘ছোট ফুচকায়’ তাঁর কপাল খুলেছে।
কাজের ব্যস্ততার মধ্যেই কথা হয় গোলাম রসুলের সঙ্গে। রসুল বলেন, ‘আগে রিকশা চালাইছি। নানা রকম ব্যবসাও করছি। গ্রাম থেকে কিনে মাওয়া ফেরিঘাট আর ঢাকায় ডাব বেচছি। ওই ব্যবসায় অনেক মার খাইছি। মানুষ টাকা দেয় নাই। এখনো ৬০-৭০ হাজার টাকা পাব। ডাব ব্যবসায় মার খেয়ে দুই বছর আগে আবারও খুলনা শহরে আসি কিছু করা যায় কী না সেই জন্যি।’ খুলনা এসে আবারও রিকশার প্যাডেল ঘোরাতে থাকেন রসুল একই সঙ্গে মাথায় ঘুরতে থাকে চিন্তা। এরপর শীতের পিঠা বিক্রি শুরু করেন। শীত শেষ হতে আবারও অনিশ্চয়তা। এখন কী হবে!
গোলাম রসুল বলেন, ‘গরম চলে আসল, কী করব বুঝে পাচ্ছিলাম না। পরে খুলনার ৭ নম্বর ঘাট থেকে কিনে ভেলপুরি বেচছি। কিন্তু এতে হচ্ছিল না। এরপর চিন্তা করলাম আনকমন কিছু করা যায় কি না। গত বছরের কোরবানির ঈদের পর থেকে শুরু করি ছোট ফুচকা বিক্রি।’
দোকানটি চালান গোলাম রসুল নামের একজন। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত চলে এই ভ্রাম্যমাণ দোকান