‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ দেখা দিলে কী হবে, প্রশ্ন শুনানিতে
Published: 8th, April 2025 GMT
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার শুনানিতে আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে অংশ নেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার। এ মামলার শুনানির শুরুতেই ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন তোলেন, ডিফেন্সের লইয়ারকে (আসামিপক্ষের আইনজীবী) প্রসিকিউশনে (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে) নিয়ে নিচ্ছেন। যদি কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট (স্বার্থের সংঘাত) দেখা দেয়, তখন কী হবে?
ট্রাইব্যুনালের এই প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, কোনো একটি মামলায় একজন আইনজীবী একটি পক্ষ নিয়েছেন। যদি সেই আইনজীবী পরে সেই মামলায় বিপরীত পক্ষ নেন, তখন সেটা ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ হবে। কিন্তু একজন আইনজীবী একটি মামলায় আসামিপক্ষ, আরেকটি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের হলে তা ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ হবে না।
বিচারপতি মো.
শুনানির পর ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বিষয়ে সাংবাদিকেরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করেন। তখন তিনি বলেন, আজকে একজন ডিফেন্স লইয়ার আছেন, আগামীকাল প্রসিকিউশনে আসতেই পারেন। সেটা খুব বড় ইস্যু না। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হবে না। একই মামলায় একজন আগে অন্যপক্ষে থাকলে পরে বিপরীত পক্ষে গিয়ে দাঁড়াতে পারবে না। এটা হচ্ছে খুবই পরিচিত ও সাধারণ বিধান।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অন্তত চারজন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বর্তমান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন।
গত ২৭ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে যোগ দেন আইনজীবী আবদুস সাত্তার। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের আগে তিনি আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০২২ সালে হওয়া একটি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন তিনি।
ফজলে করিমকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতিজুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে এক দিন জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ১৬ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদের দিন ধার্য করা হয়েছে।
অন্যদিকে ফজলে করিম অসুস্থ, এমনটি উল্লেখ করে জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। সেই আবেদনের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ এপ্রিল।
একই মামলায় যুবলীগ কর্মী মো. ফিরোজকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে তাঁকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে ৯ জন শহীদ এবং ৪৫৯ জন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
শুনানি শেষে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলায় আরও অনেকের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সবাইকে চিহ্নিত করার তৎপরতা চলমান আছে। সে কারণে আদালত আরও তিন মাসের সময় দিয়েছেন। আগামী ৭ জুলাই এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
তিন পুলিশ সদস্যকে হাজিরের নির্দেশজুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলায় পুলিশের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে ১৫ এপ্রিল হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তাঁরা হলেন সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী ও ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন। এই তিনজনই অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
আইসিসিতে পাঠানো হবে নাগণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ট্রাইব্যুনালেই করা হবে। কোনো অবস্থাতেই বিষয়টি নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিসিতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত) পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর।
ট্রাইব্যুনালে আজ শুনানি শেষ হওয়ার পর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আইসিসি যদি আমাদেরকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট (কারিগরি সহায়তা) দেয়, এইখানে বিচার হবে তারা আমাদের বিভিন্ন টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবেন, সেটা আমরা অবশ্যই গ্রহণ করব। যেমনটি আমরা জাতিসংঘের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তারা আমাদের প্রসিকিউটর এবং ইনভেস্টিগেটরদের বিভিন্ন ট্রেইনিং দিয়ে সাহায্য করেছেন। যে তদন্ত তাঁরা করেছেন সেই রিপোর্ট আমাদেরকে দিয়েছেন।... সুতরাং সেই ধরনের সহযোগিতা যদি আইসিসি থেকে আসে, আমরা সেটা গ্রহণ করব। কিন্তু মামলাগুলো বিচারের জন্য আইসিসিতে প্রেরণ করা হবে না, এটাই এখন পর্যন্ত আমাদের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ষ ট রপক ষ র ত জ ল ইসল ম ম নবত ব র ধ র সময় স অপর ধ র আম দ র আইস স সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনায় ৩৮ নাগরিকের নিন্দা
মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দেশের ৩৮ নাগরিক। একই সঙ্গে মেঘনা আলমকে দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তি দিতে এবং ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আইনজীবী, আইনের শিক্ষক ও মানবাধিকারকর্মী রয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের পর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় তাঁর কোনো হদিস ছিল না। পরে ১০ এপ্রিল রাতে তাঁকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে হাজির করা হয় বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তারের সময় তাঁকে তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে দেওয়া হয়নি।
বিবৃতিতে ৩৮ নাগরিক বলেন, এই পদক্ষেপের বিস্তৃত প্রভাব নিয়ে তাঁরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিপীড়নমুক্ত করার যে লক্ষ্য ছিল, তা এমন কর্তৃত্ববাদী পদক্ষেপের কারণে ক্ষুণ্ন হয়েছে। যেভাবে মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও মানবিক মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধার নীতি থেকে বিচ্যুতি তুলে ধরেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই পরিস্থিতিতে মেঘনা আলমকে দ্রুত এবং শর্তহীন মুক্তি দেওয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে জরুরিভাবে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন কী কারণে তাঁকে আটক করা হয়েছে তা দ্রুত তদন্ত করা যায়, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যায় এবং মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের জন্য তাঁকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়। একই সঙ্গে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, আবেদা গুলরুখ, ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, ওমর ফারুক, কাজী জাহেদ ইকবাল, মানজুর-আল-মতিন, প্রিয়া আহসান চৌধুরী, তাসলিমা ইয়াসমিন প্রমুখ।