একজন শিক্ষার্থীর পরবর্তী শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাগত জীবনের মাইলফলক হিসেবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার গুরুত্ব অপরসীম। তাই পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করতে পড়াশোনার মনোযোগিতার পাশাপাশি পরীক্ষার কক্ষে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখা ও সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা দেওয়া অপরিহার্য। পরীক্ষার কক্ষে শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্বিক চাপ বেড়ে যায়, তাই অতিরিক্ত মানসিক চাপে কিছু নিয়ম মেনে পরীক্ষা দিলে সাফল্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে প্রস্তুতি

পরীক্ষার কক্ষে একজন শিক্ষার্থীর সঠিক সময়ে পৌঁছানো জরুরি। কারণ, দেরি করে পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশ করলে মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, যা শিক্ষার্থীর ফলাফলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই পরীক্ষার দিন যথাসময়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রয়োজনীয় উপকরণসমুহ (প্রবেশপত্র, পেনসিল, অনুমোদিত ক্যালকুলেটর ইত্যাদি) নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রের উদ্দেশে যাত্রা করতে হবে, যেন যথাসময়ে পরীক্ষার কক্ষে পৌঁছানো যায়।

পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের পর প্রথম কাজ

পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের পর প্রথম কাজ হলো মানসিক স্থিরতা অর্জন করা। তাই পরীক্ষার হলে প্রবেশের পর প্রথমে নিজ আসনে শান্ত হয়ে বসে প্রয়োজনীয় আলো–বাতাস আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, মানসিক অস্থিরতা পরীক্ষার ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই পরীক্ষার হলে অতিরিক্ত অস্থির না হয়ে শান্ত থাকতে চেষ্টা করবে।

প্রশ্নপত্র পড়ার সময়

পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর প্রশ্নপত্র পাওয়ামাত্র তা মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে, যাতে করে একজন শিক্ষার্থী প্রশ্নটি সঠিকভাবে বুঝতে পারে। প্রয়োজনে একটি প্রশ্ন একাধিকবার পড়তে হবে। এতে করে প্রশ্নের সহজ বা কঠিনতার মান নির্ধারণ করা যায়। এরপর কোন প্রশ্নটির জন্য বেশি সময় দেওয়া উচিত বা কোন প্রশ্নটির জন্য কম সময় দিতে হবে, তা বুঝে সময় ভাগ করুন।

আরও পড়ুনএসএসসি–২০২৫ পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের শেষ মুহূর্তের করণীয়০৬ এপ্রিল ২০২৫

সময় ভাগ করা

যেহেতু এসএসসি পরীক্ষায় সাধারণত অনেকগুলো প্রশ্ন থাকে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তা সমাপ্ত করতে হয়, তাই সময় বিভাজন করে প্রশ্নের উত্তর দিলে সব প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর প্রদান করা সম্ভবপর হয়। সময় বিভাজনের ক্ষেত্রে সময়সীমার মধ্যে প্রতিটি প্রশ্নের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় প্রদান করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কঠিন প্রশ্নগুলোর উত্তর পরে করুন, তবে যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকে, তবে সেটি ছেড়ে দিন এবং অন্য প্রশ্নে চলে যান এবং উত্তরগুলো যাচাই করার জন্য পরীক্ষার শেষ ১৫-২০ মিনিট বরাদ্দ রাখতে হয়।

আরও পড়ুনপেছাল গণিত পরীক্ষা, এসএসসি-২০২৫-এর নতুন রুটিন প্রকাশ১৯ মার্চ ২০২৫

উত্তর লেখার কৌশল

পরীক্ষার উত্তরে পরিষ্কার এবং সংক্ষিপ্তভাবে লেখা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যেটি জানেন, সেটা খুব পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করুন। কখনোই খুব বড় বা জটিল উত্তর লেখার চেষ্টা করবেন না, কারণ এতে সময় অপচয় হতে পারে। পরীক্ষার কক্ষে সবার প্রথম কাজ হলো আত্মবিশ্বাস তৈরি করা। সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে শুরু করুন, কারণ এতে আপনি মনের মধ্যে একধরনের আস্থা পাবেন এবং পরে কঠিন প্রশ্নের সঙ্গে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন। তাই সহজ প্রশ্নে ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে সঠিক উত্তর দিন এবং আপনার আত্মবিশ্বাস তৈরি করুন। প্রতিটি প্রশ্নের সঙ্গে কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া থাকে, যেমন ‘বর্ণনা করুন’, ‘বিশ্লেষণ করুন’, ‘উদাহরণ দিন’ ইত্যাদি। এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে হাতের লেখা স্পষ্ট ও পাঠযোগ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকে, সে ক্ষেত্রে অন্য প্রশ্নে চলে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রশ্নের ধারাবাহিকতা ও যথার্থতা হলো একটি আদর্শ উত্তরের পূর্বশর্ত। তাই প্রশ্নসমূহ শান্তভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর প্রদান করে সময়মতো পরীক্ষা শেষ করতে হবে।

আরও পড়ুনএসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য জরুরি ৯টি নির্দেশনা৪ ঘণ্টা আগে

পরীক্ষার শেষে উত্তর যাচাই করা

পরীক্ষার শেষের দিকে, আপনার লিখিত উত্তরগুলো পুনরায় দেখে নিন। কিছু উত্তর ভুল হতে পারে বা অসম্পূর্ণ থাকতে পারে। শেষের কয়েক মিনিটে যদি কোনো ভুল বা অসম্পূর্ণ উত্তর থাকে, তবে তা সংশোধন করুন। তবে উত্তরে অতিরিক্ত কিছু লেখার চেষ্টা করবেন না, যেহেতু সময় কম থাকে এবং এটি আপনার মূল উত্তরকে প্রভাবিত করতে পারে।

উপসংহার

এসএসসি পরীক্ষার কক্ষে সফল হতে হলে, শুধু পড়াশোনা বা প্রস্তুতি নয় বরং সঠিক মানসিকতা, সময় ব্যবস্থাপনা এবং পরীক্ষার কৌশলগুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা চলাকালীন কিছু মনস্তাত্ত্বিক চাপ ও অস্থিরতা থাকতেই পারে, তবে সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। পরীক্ষার কক্ষে সঠিক মনোভাব এবং পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে সফলতা আসবে।

লেখক: মো.

রাসেল খান, সহকারী প্রধান শিক্ষক, তেতুলবাড়িয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নলছিটি, ঝালকাঠি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ র ক ত ই পর ক ষ প রব শ র র প রথম র জন য মন য গ র পর প

এছাড়াও পড়ুন:

রাগ-ক্ষোভ ভুলে পড়াশোনায় ফিরেছেন, ৫১ বছর বয়সে দিচ্ছেন এসএসসি পরীক্ষা

রাগে-অভিমানে প্রায় ৩৫ বছর আগে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন দেলোয়ার হোসেন। দীর্ঘ সময় পর তাঁর সেই ভুল ভেঙেছে। আবার পড়ালেখায় ফিরেছেন, অংশ নিচ্ছেন চলতি বছরের এসএসসি (দাখিল) পরীক্ষায়। ৫১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জানান, ছোটবেলা থেকেই উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। অতীত ভুলে এবার সেই স্বপ্ন পূরণের পথেই হাঁটছেন তিনি।

দোলোয়ার হোসেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের করমদোশী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। গতকাল দেশে একযোগে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় তিনি উমরগাড়ি দারুল খায়ের সুন্নাহ দ্বিমুখী মাদ্রাসা কেন্দ্রে অংশ নেন।

এলাকার কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, দেলোয়ার ছোটবেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন। পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় তিনি মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হন। পরে ভর্তি হন জামনগর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণিতেও তিনি সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পান। ১৯৯০ সালে একই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পরীক্ষা চলার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনার জেরে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। রাগে–ক্ষোভে তিনি পড়ালেখা ছেড়ে দেন।

এ প্রসঙ্গে দোলোয়ার বলেন, ‘উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন আমার ছোটবেলা থেকেই। পড়ালেখাতেও ভালো ছিলাম। নবম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে প্রথম বা দ্বিতীয় হতাম। এসএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে পাশের এক পরীক্ষার্থীর ষড়যন্ত্রে আমাকে বহিষ্কার করা হয়। আমি এই ঘটনা মেনে নিতে পারিনি। রাগে-ক্ষোভে আমি পড়ালেখা ছেড়ে দিই। কিন্তু আমার মেয়েদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে এবং ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই আবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো; সবার দোয়া চাই।’

দেলোয়ার হোসেনের সংসারে স্ত্রী ও তিনি। মেয়েদের সবাইকে তিনি পড়াশোনায় ব্যস্ত রেখেছেন। ২০২১ সালে জামনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এর কিছুদিন পর শিক্ষিত হওয়ার সুপ্ত বাসনা আবার তাঁর মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সবার অগোচরে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার উমরগাড়ি দারুল খায়ের সুন্নাহ দ্বিমুখী মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ক্লাস করতে না পারলেও শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন এবং বাড়িতে বসেই পড়ালেখা করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পাশে থাকতে ছাত্রদলের জরুরি নির্দেশনা
  • হত্যার ভয় দেখিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণ
  • বোরহানউদ্দিনে হত্যার ভয় দেখিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
  • কামারখন্দে এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা
  • শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ রোধ করতেই হবে
  • নাটোরের নিখোঁজ সেই এসএসসি পরীক্ষার্থীকে পাওয়া গেছে
  • রাগ-ক্ষোভ ভুলে পড়াশোনায় ফিরেছেন, ৫১ বছর বয়সে দিচ্ছেন এসএসসি পরীক্ষা
  • আমিরাতে বসে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ৮০ জন
  • মৌলভীবাজারে শাহ নিমাত্রার (রহ.) দরগাহের ওরস বন্ধের দাবিতে কর্মসূচির ঘোষণা, উত্তেজনা
  • বাবার লাশ বাড়িতে রেখে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে গেল রিমা