শহরের সড়কে ম্রো জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী প্লুং বাঁশির সুরের মূর্ছনা। সঙ্গে বাজছে ঢোল। বাদ্যের তালে তালে বিচিত্র বর্ণিল পোশাকে শোভিত নারী-পুরুষেরা এগিয়ে যাচ্ছেন একটি বার্তা নিয়ে। বার্তাটি বর্ষবরণের। চৈত্রের প্রখর আলোয় উৎসবে মেতেছে গোটা পাহাড়।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী স্কয়ার থেকে সর্বজনীন বৈসাবি উদ্‌যাপন কমিটির ব্যানারে এমন শোভাযাত্রা শুরু হয়। পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী ঢোল, প্লুং বাঁশি বাজিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে পানখাইয়াপাড়ার নিউজিল্যান্ড মোড়ে এসে বেলা সাড়ে ১১টায় শেষ হয় এই শোভাযাত্রা। চাকমা, মারমা, ম্রো, চাক, ত্রিপুরা, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর প্রায় এক হাজার নারী-পুরুষ তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

পুরোনো বছর বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে খাগড়াছড়িতে এখন সাজ সাজ রব। উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে নানা আয়োজন। বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু ও চাংক্রান উৎসব ঘিরে পাহাড়িরা মিলিত হচ্ছেন মিলনমেলায়। অনেকে কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়ে এরই মধ্যে বাড়িতে এসেছেন। প্রাণের এই উৎসবের রং লেগেছে সব বয়সের মানুষের মনে।

১২ এপ্রিল থেকে শুরু হবে পাহাড়িদের প্রধান এই সামাজিক উৎসব। এই উৎসব ঘিরে সব সম্প্রদায়ের কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটছে। তাই একে প্রাণের উৎসব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আজ সকালের বর্ণিল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে জেলায় বৈসাবির প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল।

আগামীকাল বুধবার থেকে শহরের পানখাইয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় শুরু হবে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার আয়োজন। এ জন্য মারমা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

ঐতিহ্যবাহী পোশাকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শোভাযাত্রা। আজ সকালে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী স্কয়ারে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জনগ ষ ঠ র

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানদের ফিরিয়ে দিন হাত জোড় করছি

‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। 
আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনী। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছুটির দিনে ওটিটিতে দেখতে পারেন যে সিনেমা ও সিরিজ
  • হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের
  • সন্তানদের ফিরিয়ে দিন হাত জোড় করছি
  • কক্সবাজারে রাখাইন সম্প্রদায়ের তিন দিনের সাংগ্রাইং উৎসব শুরু
  • শাকিবের জন্য এলাহি আয়োজন
  • হবিগঞ্জে বোরো ধান কাটা উৎসব উদযাপন
  • হাওরে ধান কাটার উৎসব
  • সাংগ্রাই জলোৎসবে মৈত্রী বর্ষণে পরিশুদ্ধ হৃদয়
  • মারমাদের মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব যে কারণে হয়, যেভাবে এল
  • ‌‌‌‘সন্তানের উসিলায় আজীবন পহেলা বৈশাখ ভিন্নভাবে পালন করতে পারব’