এক্সে বিক্রি হবে অব্যবহৃত ইউজার নেম, দাম কত জানেন?
Published: 8th, April 2025 GMT
অব্যবহৃত ও নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টের ইউজার নেম বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন খুদে ব্লগ লেখার ওয়েবসাইট এক্স (সাবেক টুইটার)। নতুন এ উদ্যোগের আওতায় প্ল্যাটফর্মটিতে দীর্ঘদিন অব্যবহৃত বা নিষ্ক্রিয় ইউজার নেম (হ্যান্ডল) অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করা হবে। তবে চাইলেই অব্যবহৃত ইউজার নেম কেনা যাবে না, শুধু এক্সের ‘ভেরিফায়েড অর্গানাইজেশন’ হিসেবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদন করে পছন্দের ইউজার নেম কিনতে পারবে। এসব ইউজার নেমের দাম সর্বনিম্ন ১০ হাজার মার্কিন ডলার থেকে পাঁচ লাখ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
প্রযুক্তিবিশ্লেষক নিমা ওউজি জানিয়েছেন, সম্প্রতি এক্সের ওয়েব অ্যাপে ‘হ্যান্ডল ইনকোয়ারি’ নামে একটি নতুন সুবিধা চালু হয়েছে। সুবিধাটি কাজে লাগিয়ে ভেরিফায়েড অর্গানাইজেশনগুলো চ্যাটবটের মাধ্যমে এক্সের যেকোনো অব্যবহৃত ইউজার নেম কেনার জন্য অনুরোধ পাঠাতে পারবে। হ্যান্ডল বা ইউজার নেমটি যদি বিক্রির উপযোগী হয়, তবে এক্স তিন দিনের মধ্যে তা জানিয়ে দেবে। এরপর অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে ইউজার নেমটি নতুন মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হবে। চাইলে নামটি প্রতিষ্ঠানের অন্য কোনো অ্যাকাউন্টেও স্থানান্তর করা যাবে।
আরও পড়ুনএক্স সত্যিই কি বিক্রি করে দিয়েছেন ইলন মাস্ক৩০ মার্চ ২০২৫ইউজার নেম বিক্রির উদ্যোগ এক্সের জন্য নতুন নয়। ইলন মাস্কের মালিকানায় যাওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের নাম মুছে তা নতুনদের মধ্যে বিতরণের পরিকল্পনা করছিল। শুধু তা–ই নয়, ২০২৩ সালের মে মাসে বিপুলসংখ্যক অব্যবহৃত অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছে এক্স।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই উদ্যোগ এক্সের আয়ের একটি বিকল্প উৎস হতে পারে। বর্তমানে বিজ্ঞাপন, গ্রাহকসেবা ও ডেভেলপার সুবিধার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি আয় করে থাকে। অব্যবহৃত ইউজার নেম বিক্রির মাধ্যমে আয় বাড়ানোর পাশাপাশি এক্স বর্তমান ব্যবহারকারীদের নিয়মিত সক্রিয় থাকার বিষয়েও উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তবে নতুন এ উদ্যোগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য জানায়নি এক্স।
সূত্র: টেক ক্র্যাঞ্চ
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক স র
এছাড়াও পড়ুন:
ক্ষুধার ওপর কর, চাপ বাড়ছে গরিবের জীবনে
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতির চাপে চরম সংকটে পড়েছেন দেশের রিকশাচালক, দিনমজুর, শিক্ষার্থীসহ নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত নাগরিকরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এর অন্যতম কারণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষরা এখন এক বেলা খাবার বাদ দিচ্ছেন, বোতলজাত পানি কিনতে পারছেন না, রুটি-বিস্কুটেই পেট চালিয়ে নিচ্ছেন। অথচ এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর রয়েছে ৭.৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)। এই করনীতি গরিবের জীবনে চাপ আরও বাড়িয়ে তুলছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে তরুণদের দ্বারা পরিচালিত গবেষণা সংস্থা ‘ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক’।
দেশের ১,০২২ জন নাগরিকের ওপর পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে, ৯৯ শতাংশ উত্তরদাতা কোনো না কোনো সময় খাবার বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন কেবল অর্থাভাবে। তাদের মধ্যে অধিকাংশের আয় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে, এবং এর নিচেও আয়ের সংখ্যা কম নয়।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৬০ শতাংশ সকালের নাশতা বাদ দেন। দুপুর বা বিকেলের খাবারও বাদ দিতে হয় অনেক সময়। কারণ খাবার কেনার সামর্থ্য অনেক সময় তাদের থাকে না।
ভাতের বিকল্প সস্তা ও পেট ভরানো খাবারের মধ্যে বিস্কুট, কলা, পরোটা, ডিম এগিয়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিস্কুট। ৫২৩ জন উত্তরদাতা এটিকে তাদের প্রিয় ও সাশ্রয়ী খাবার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিস্কুটের ওপরও রয়েছে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যাট কার্যত গরিবের খাবার থেকে কর আদায় করার শামিল। খাদ্যপণ্য হিসেবে যেসব আইটেম গরিব মানুষের নিত্যদিনের রসদ, তাদের ওপর ভ্যাট বসিয়ে বাজেট ভারসাম্য আনা সামাজিক ন্যায়ের পরিপন্থি।
জরিপে ৯০৪ জন বলেছেন, তারা বোতলজাত পানি কিনতেই পারেন না। বোতলজাত পানিকে তারা বিলাসদ্রব্য বিবেচনা করেন।
জরিপ বলছে, ৮৯৭ জন মনে করেন আগের বাজেট তাদের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেয়নি। ৭০১ জন সরাসরি বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য বিবেচনায় এখানে ভ্যাটের হার অনেক বেশি। এই শ্রেণির মানুষের জন্য একটি টাকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কর নীতিতে সামান্যতম পরিবর্তনই দরিদ্র এই শ্রেণির জন্য একবেলার খাবার পাওয়া না পাওয়ার পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
তবে হতাশার মাঝেও এবার নতুন সরকারের কাছে আশাবাদী হয়েছেন অনেকে। জরিপে ৭১২ জন অংশগ্রহণকারী বলেছেন—তারা আশা করছেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার এবারের বাজেটে তাদের কথা শুনবে। তাদের দাবি, ‘সহানুভূতির দরকার নেই, দরকার ন্যায্যতার।’
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০৫ জন বলেছেন—নিম্নআয়ের মানুষের জন্য কর কমানো উচিত। ১৯৫ জন বলছেন, ভর্তুকি ও সহায়তা বাড়ানো দরকার। ১৯৩ জন চান—ধনীদের ওপর কর বাড়ানো হোক।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের দাবি, পণ্যের দাম কমানো, জনবান্ধব বাজেট, ভ্যাট হ্রাস এবং বাজারদর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই যেন বাজেটের মূল লক্ষ্য হয়। তবে অনেকেই কোনো প্রত্যাশা করেননি সংশয় বা নিরাশার কারণে।
চলতি অর্থবছরের মাঝপথে এসে গত জানুয়ারিতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। ওই তালিকায় বেকারিপণ্য, বিস্কুট ও কেকও ছিল। এসব পণ্যে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এরপর সমালোচনার মুখে গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ করা হয়। গত রমজানে নিত্যপণ্য বিবেচনায় নিয়ে এক মাসের জন্য কর ছাড় দেওয়া হলেও, এসব পণ্যে ৭.৫ শতাংশ কর বহাল রয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, রমজানে যখন এই খাদ্যপণ্যগুলোকে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়, তখন বছরের বাকি সময়ে তা আবার কীভাবে ‘অপ্রয়োজনীয়’ পণ্য হয়ে পড়ে?
গবেষণার উপসংহারে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর ভ্যাট দরিদ্রদের ওপর অসামঞ্জস্যভাবে চাপ সৃষ্টি করছে এবং তাদের সাশ্রয়ী খাবার পাওয়ার সুযোগ আরও সীমিত করে তুলছে। সরকারের উচিত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট বাতিল করা অথবা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা। এতে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমবে এবং মৌলিক পুষ্টি নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে বিলাসপণ্যের ওপর কর বাড়িয়ে একটি ন্যায্য অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব।