এফডিসি পরিদর্শনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
Published: 8th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) পরিদর্শন করলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত দায়িত্বের অংশ হিসেবে আজ এফডিসি পরিদর্শন করেন তিনি।
এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন শুটিং ফ্লোর ঘুরে দেখার পাশাপাশি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন মাহফুজ। এরপর জহির রায়হান মিলনায়তনে এফডিসি নিয়ে নিজের পরিকল্পনা ও ভাবনার কথা জানান। এফডিসিকে কম্পোজিট ফিল্ম সিটি বানানোর কথাও বলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে এফডিসির বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে দেখার পাশাপাশি পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতির কার্যালয়েও যান। সেখানে পরিচালক ও শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলেন মাহফুজ আলম। শিল্পী সমিতিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনয়শিল্পী আনোয়ারা। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়ক নাঈম, অভিনয়শিল্পী আলীরাজ, সুব্রত, রুমানা ইসলাম মুক্তি, শিবা শানু প্রমুখ।
আরো পড়ুন:
‘দাগি’র বিশেষ প্রদর্শনীতে প্রতিবাদ
বিয়ে করলেন পর্দার ‘তোপসে’
এফডিসি ঘুরে দেখে মাহফুজ আলম বলেন, “এফডিসিতে মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত অনেকগুলো দপ্তর আছে। এগুলো দেখার উদ্দেশ্যে এখানে আসা। আসার পর অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। এখানে অনেকগুলো সংকট আছে। কর্মকর্তা–কর্মচারী যারা আছেন, তাদেরও অনেক চাহিদা আছে। আমি সরেজমিনে দেখতে এলাম, যাতে বিষয়টা আমার বোধগম্য হয়, কী চলছে, কীভাবে চলছে।”
এফডিসির সম্ভাবনা অনেক। এ তথ্য উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, “আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, এফডিসির সম্ভাবনা অনেক। ঢাকার একেবারে প্রাণকেন্দ্রে এত বড় জায়গা নিয়ে তৈরি এফডিসিতে যে সুযোগ-সুবিধাগুলো আছে, সেগুলো সাধারণত যেকোনো রাষ্ট্রের ফিল্ম সিটি বা এ রকম কোনো জায়গাতে থাকে। বিষয়টা এমন, কম্পোজিট একটা ব্যাপার— যেখানে শুটিং, এডিটিং, ডাবিংসহ সব সুযোগ-সুবিধা একসঙ্গে পাওয়া যাবে। সম্পাদনা থেকে শুরু করে প্রি-প্রোডাকশন, পোস্ট প্রোডাকশনের সব কাজ একই জায়গায় হয়। আমি মনে করি, আমার দায়িত্বকালের মধ্যে এফডিসিকে কম্পোজিট ফিল্ম সিটি বানিয়ে দেওয়ার। এফডিসি যাতে লাভজনক হয়ে ওঠে, তাহলে এখানে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, তাদের সবার বেতন–ভাতা থেকে শুরু করে প্রণোদনা সবই এখান থেকে দেওয়া সম্ভব হবে। এফডিসি নিয়ে এটাই হচ্ছে আমার একমাত্র লক্ষ্য। আশা করি, এখানে আপনারা যারা আছেন, সবাই সহযোগিতা করবেন।”
এফডিসিতে একটা প্রকল্প চলমান আছে, কথার এক পর্যায়ে তাও তুলে ধরেন মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, “এফডিসিতে একটা প্রকল্প চলছে। কবিরপুর ফিল্ম সিটিতে আরেকটা প্রকল্পের কাজ চলছে। এই দুইটা জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করব যেসব ইস্যু আছে, তা শেষ করতে। এখানে রিসোর্সগুলো যাতে ঠিক হয়, আপনারা সবাই যাতে কাজের সুযোগ পান এবং যারা ফিল্ম মেকার, প্রযোজক আছেন— তারা যাতে খুব সহজে কাজ করতে পারেন। যাতে ভালো মানের ফিল্ম বাংলাদেশে তৈরি হয়।”
এফডিসির এমডি মাসুমা রহমানও কথা বলেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের এখানে প্রত্যেকটা কর্মকর্তা-কর্মচারী স্যারের (মাহফুজ আলম) কাছে, আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। স্যারের ভরসায় আমি আপনাদের কথা দিয়েছিলাম, আমরা ছয় মাসের মধ্যে নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে দেখাব। বারবার আমাদের বেতন–ভাতা, বোনাস হয় না প্রত্যেকবার মন্ত্রণালয় থেকে চেয়ে নিয়ে আসতে হয়, ঋণ করে আনতে হয়— এটা আমারও যেমন ভালো লাগে না, স্যারও বিব্রত হন। আপনাদের পক্ষ থেকে স্যারকে আমি কথা দিয়েছি, আমাদের যদি একটু সুযোগ দেওয়া হয়, স্যারকে একটা সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যেতে পারব।”
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র কর মকর ত এফড স ত উপদ ষ ট এফড স র
এছাড়াও পড়ুন:
সিজেএম আদালত ভবন নির্মাণে গতি নেই
দেশের ৬৪ জেলা সদরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ হয়নি ১৬ বছরেও। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৪১টি জেলায় ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে নির্মিত ভবন স্থানীয় আইনজীবীদের অনাগ্রহে ৯ বছরেও উদ্বোধন করা যায়নি। জেলা আদালত থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে এ ভবন নির্মাণ হওয়ায় আইনজীবীরা সেটি ব্যবহার থেকে বিরত রয়েছেন। অথচ ভবনটি নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়ছে প্রায় ২৮ কোটি টাকা।
এদিকে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অন্তত ২৫ জেলার বিভিন্ন আদালতে দেড় শতাধিক বিচারককে এজলাস ভাগ করে বিচারকাজ পরিচালনা করতে হচ্ছে। দুপুরে একটি আদালতের বিচারকাজ শেষে একই এজলাসে বিকেলে অন্য আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে বিচারিক কর্মঘণ্টা অপচয়ের পাশাপাশি বিচারপ্রার্থীদেরও ভোগান্তি হচ্ছে।
আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, ৬৪ জেলা সদরে বহুতলবিশিষ্ট সিজেএম আদালত ভবন নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০০৯ সালে। প্রথম পর্যায়ে তিন দফায় পাঁচবার প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এর আওতায় ৪১ জেলায় ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়। বাকি ২৩ জেলায় ভবন নির্মাণের জন্য এবার দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পের সারসংক্ষেপ চূড়ান্ত করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে গত বছরের জুনে পরিকল্পনা কমিশনে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় ওই প্রস্তাব পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। এর আলোকে সুপারিশ বাস্তবায়নে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) মেহেদী হাসান সমকালকে বলেন, ডিপিপি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। এটি শিগগিরই পরিকল্পনা কমিশন হয়ে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। জুনের মধ্যে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তিনি জানান, আগামী অর্থবছরের শুরুতেই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সিজেএম ভবন নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে জেলা জজদের প্রতি দেওয়া অভিভাষণে উষ্মা প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সুপ্রিম কোর্টে গত ২১ অক্টোবর দেওয়া ভাষণে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বর্তমানে অনেক জেলায় বিচারকদের চেম্বার ও এজলাস শেয়ার করতে হয়। ফলে কর্মঘণ্টার পূর্ণ ব্যবহার করতে না পারায় মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা কমে যায়।’
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে গাজীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ ২২টি জেলায় জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলেও ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। স্থানীয় বিরোধে সৃষ্ট আইনি জটিলতায় খাগড়াছড়িতে জমি অধিগ্রহণ থমকে আছে। ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী, পাবর্ত্য জেলায় ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথক আইন রয়েছে। বিষয়টি জটিল হওয়ায় সম্প্রতি ভূমি অধিগ্রহণ আইন এবং পার্বত্য ভূমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত দুটি আইন সমন্বয় করে জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
২৩টি জেলায় আদালত ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো– গাজীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, নরসিংদী, শেরপুর, নেত্রকোনা, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ফেনী, চাঁদপুর, কক্সবাজার, নাটোর, নওগাঁ, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বাগেরহাট, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও বরগুনা। ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। ২০২৮ সালের জুনে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
এদিকে বগুড়া, পঞ্চগড়, পাবনা, ভোলাসহ অনেক জেলায় আদালত ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রণালয় থেকেও পরিদর্শনে গিয়ে অনিয়মের চিত্র দেখে স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। যারা সদুত্তর দিতে পারেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আর্থিক অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দাপ্তরিক প্রাক্কলন ও অগ্রগতির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, একক প্যাকেজটির কার্যক্রম বিভক্ত করা হয়েছে, চুক্তিতে অত্যাবশ্যকীয় কিছু কাজ বাদ দেওয়া হয়েছে, বাস্তব কাজের পরিমাণ ও পরিমাপ কমানো হয়েছে, ইন্টারনাল স্যানিটারি ও ওয়াটার সাপ্লাই এবং ইন্টারনাল ইলেকট্রিফিকেশন কাজের জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে একেবারেই অপ্রতুল অর্থের প্রাক্কলন করায় ব্যয় অত্যধিক বেড়েছে। এ ধরনের অনিয়মের দায়ভার প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
নারায়ণগঞ্জের নতুন সিজেএম ভবন ব্যবহার থেকে আইনজীবীদের বিরত থাকা প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরকার হুমায়ূন কবির সমকালকে বলেন, ‘দুই আদালত দুই জাগায়। যাওয়া-আসা, সময়, যানজট ইত্যাদি সমস্যার কারণে সিজেএম আদালত ভবন ব্যবহার থেকে আইনজীবীরা বিরত রয়েছেন। তবে সরকার চাইলে নতুন ভবনটি চালু করা সম্ভব।’ তাঁর মতে, সিভিল মামলাগুলো বিদ্যমান (পুরোনো) আদালতে এবং নতুন ভবনে জজ আদালতসহ ফৌজদারি-সংক্রান্ত মামলাগুলোর বিচার করা হলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। এর পর নতুন আদালতের পাশে আরও ভবন নির্মাণ করে পুরোনো আদালতকে নিয়ে আসতে হবে।