ভারতের রাজস্থানে নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতা জ্ঞানদেব আহুজা। আলওয়ার এলাকার একটি রামমন্দির তিনি পবিত্র করলেন গঙ্গাজল ছিটিয়ে। কেননা, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী নেতা টিকারাম জুলি ওই মন্দিরে ঢুকেছিলেন। বিগ্রহ স্পর্শ করেছিলেন।

টিকারাম জুলি কংগ্রেসের দলিত নেতা। দলিত হওয়া সত্ত্বেও গত রোববার রামনবমী উপলক্ষে তিনি আলওয়ারের রামমন্দিরের অভিষেক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। স্পর্শ করেছিলেন বিগ্রহকে। ফলে বিগ্রহসহ গোটা মন্দির ‘অপবিত্র’ হয়ে যায়। অপবিত্র মন্দিরকে পবিত্র করতেই জ্ঞানদেব আহুজা মন্দিরে ও বিগ্রহে গঙ্গাজল ছিটিয়েছেন।

বিজেপির এই সাবেক বিধায়ক নিজেই বড় মুখ করে এই কথা জানিয়েছেন। টিকারামের মন্দিরে যাওয়ার খবর শুনে জ্ঞানদেব বলেন, ‘দলিত নেতা টিকারামের লজ্জিত হওয়া দরকার। তিনি হিন্দুত্ব বিরোধীই শুধু নন, সনাতন বিরোধীও। তাঁর অপবিত্র ছোঁয়ায় কলুষিত হয়েছে পবিত্র মন্দির ও বিগ্রহ। মন্দিরে গঙ্গাজল ছিটিয়ে আমি তা পবিত্র করব।’

কথা রেখেছেন আলওয়ারের রামগড় কেন্দ্রের এই সাবেক বিজেপি বিধায়ক। গত সোমবার তিনি সদলে ওই মন্দিরে যান। গঙ্গাজল ছিটিয়ে ‘পবিত্র’ করেন মন্দির ও বিগ্রহ। কংগ্রেস নেতা টিকারামকে তিনি ‘পাপী’ বলে সম্বোধন করেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এই খবরে বলা হয়েছে, বিজেপি নেতা জ্ঞানদেব আহুজা কংগ্রেসের দলিত নেতা টিকারামের নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করতে চাননি। তাঁর কথায়, ওই পাপীর নাম নিলে আমার মুখ অপবিত্র হবে। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবে পাই না, এই ধরনের অপবিত্রদের কেন মন্দিরে আহ্বান জানানো হয়।’

রাজ্যে এ নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক কাজিয়া।

কংগ্রেস নেতা টিকারাম জুলি গণমাধ্যমে বলেন, ‘দলিতদের বিষয়ে বিজেপির মনোভাব কেমন, আহুজার এই আচরণই তার প্রমাণ। ওই দল দলিতদের এখনো অস্পৃশ্য মনে করে। তাই মন্দিরে গঙ্গাজল ছিটায়। এই আচরণ ব্যক্তিগতভাবে আমার বিরুদ্ধে আক্রমণই শুধু নয়, অস্পৃশ্যতার মতো সামাজিক ব্যাধিও ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ মারাত্মক অপরাধ।’

টিকারাম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি মদন রাঠোরকে এ ঘটনার জবাবদিহি করতে হবে। জানাতে হবে, বিজেপি এই দলিতবিরোধী মনোভাব অনুমোদন করে কি না।

বিজেপি নেতার ওই আচরণের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার গোটা রাজ্যে কংগ্রেস প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে।

রাজ্যের সাবেক কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ সিং দোতাসরাসহ দলীয় নেতারা প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। গেহলট বলেন, ব্রাহ্মণ্যবাদী বিজেপি যে দলগতভাবে দলিতবিরোধী, আহুজার এই আচরণই তার প্রমাণ। সেই কারণে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এখনো নীরব। আহুজার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা তাই নেওয়া হয়নি।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি দোতাসরা বলেন, বিজেপির হৃদয়ে যে দলিতদের প্রতি ঘৃণা ছাড়া আর কিছু নেই, এই ঘটনা ও তাদের নেতৃত্বের নীরবতা তার প্রমাণ। শুধু দলিতদেরই নয়, বিজেপি ঘৃণা করে কৃষকদের, নারীদের, শ্রমিকদেরও। বোঝা যায় না, তাদের মনে কেন এত ঘৃণা জমা রয়েছে।

এই ঘটনার নিন্দা না করলেও বিজেপি দলগতভাবে তাদের এ ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছে। দলের মুখপাত্র লক্ষ্মীকান্ত ভরদ্বাজ গণমাধ্যমকে বলেন, আহুজা যা করেছেন, তার দায় তাঁর। দল এ জন্য দায়ী নয়। বিজেপি অস্পৃশ্যতায় বিশ্বাস করে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ঞ নদ ব অপব ত র মন দ র

এছাড়াও পড়ুন:

স্ত্রী-ছেলেসহ তিন খুনের দায় স্বীকার, ১০ দিনের রিমান্ড

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জে তিন খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. ইয়াসিন পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দায় স্বীকার করেছে। শনিবার বিকেলে তাকে তোলা হয় জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বেলায়েত হোসেনের আদালতে। সেখানে ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান।

শুক্রবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া এলাকায় ময়লার স্তূপ খুঁড়ে ইয়াসিনের স্ত্রী লামিয়া আক্তার (২২), চার বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ ওরফে রাফসান লাবিব ও লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না আক্তারের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকেই এলাকাবাসী ইয়াসিনকে (২৪) ধরে পুলিশে দেন। সে মিজমিজি দক্ষিণপাড়ার মো. দুলালের ছেলে। আগে ইয়াসিন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাত। পুলিশ জানিয়েছে, ছিঁচকে চোর ও মাদকাসক্ত হিসেবেও পরিচিত সে।
শুক্রবার রাতেই লামিয়ার মেজো বোন মুনমুন আক্তার বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে ইয়াসিন ছাড়াও তার বাবা মো. দুলাল (৫০) ও বোন মোসা. শিমুকে (২৭) আসামি করা হয়েছে। মুনমুন জানিয়েছেন, লামিয়া সিদ্ধিরগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ৫ বছর আগে ইয়াসিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বড় বোন স্বপ্নাও লামিয়ার সঙ্গে পশ্চিমপাড়ার ভাড়া বাসায় থাকতেন। ৭ এপ্রিল দুপুরে ওই বাসায় বোনদের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ কথা হয়। এর পর থেকে তাদের মুঠোফোনটি বন্ধ ছিল।

মামলায় মুনমুন উল্লেখ করেছেন, মাদকাসক্ত ইয়াসিন কোনো কাজ করত না। প্রায় সময় টাকার জন্য লামিয়াকে মারধর করত ও হত্যার হুমকি দিত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার ইয়াসিন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ