সিলেটে বিক্ষোভ থেকে আবাসিক হোটেলে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা
Published: 8th, April 2025 GMT
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে একটি আবাসিক হোটেলে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে নগরের মিরবক্সটুলা এলাকার রয়্যাল মার্ক হোটেলের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) আবদুল মতিন সরকার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় কারও নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মো.
মামলার বাদী আবদুল মতিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, হামলাকারীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হামলা করেছে বলে মনে হয়েছে। হামলার সময় হামলাকারীরা মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। পাশাপাশি হামলা ও ভাঙচুরের সময় তাঁরা গুলতি, হাতুড়ি ও শাবল ব্যবহার করেছেন। গুলতি দিয়ে সড়ক থেকে তাদের ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত কাচ ভাঙচুর করা হয়।
আবদুল মতিন আরও বলেন, ১৪তলা ভবনের মধ্যে দ্বিতীয় তলায় শুধু কেএফসি ছিল। হামলাকারীদের তাঁদের হোটেলের কর্মীরা বারবার জানিয়েছেন, কেএফসির সঙ্গে হোটেলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁরা ফিলিস্তিনের পক্ষে হোটেলের সামনে ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে ব্যানার ও ফিলিস্তিনের পতাকা টাঙিয়ে রেখেছেন। এরপরও হামলাকারীরা তাঁদের কোনো কথা শোনেননি। হামলাকারীদের আটকাতে গিয়ে হোটেলের সাত থেকে আটজন কর্মচারী আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, হামলাকারীদের ভিডিও চিত্র ও ছবি সংগ্রহ করে পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছেন। সেগুলো দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব। হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকে সিলেট নগর বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল। বিকেলের দিকে নগরের মিরবক্সটুলা এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতা কেএফসি ভাঙচুর করে। এরপর বাটা, ইউনিমার্ট, আলপাইন রেস্তোরাঁসহ প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাইব্যুনালে ৩৩৯ অভিযোগ, ২২ মামলায় গ্রেপ্তার ৫৪
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ৩৩৯টি অভিযোগ জমা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ২২ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭০ বেসামরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬২ ও ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন। ইতোমধ্যে ৫৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যা, আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো, চানখাঁরপুলে হত্যাকাণ্ড ও রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা ব্যক্তিকে গুলি করা মামলায় তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শিগগির এগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, মামলা তদন্তের স্বার্থে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এক হাজারের বেশি মানুষের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। পরোয়ানা জারির পরও ৮৭ আসামি পলাতক।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড, সুপিরিয়র কমান্ড, সরাসরি সম্পৃক্ত এবং যাদের কারণে রাষ্ট্র এমন হয়েছে, তাদের আগে বিচার করতে চাই। আমরা ভুক্তভোগীদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, বিচার কার্যক্রমে গতি আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের বেশ কিছু ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এটি হতে পারে। যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। কবে নাগাদ বিচার শুরু করা যাবে– প্রশ্নে তিনি বলেন, সময় বেঁধে দিয়ে বিচার করা যাবে না। সেটি যুক্তিযুক্তও নয়।
মতবিনিময়ের শুরুতে তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেড়-দুই হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। ২৫ হাজারের মতো ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। সব ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আমরা সেটি প্রমাণ করতে সক্ষম হবো এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোপন বন্দিশালা থেকে টাইম বোমা উদ্ধার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমিসহ গুমের মামলার তদন্তে যাওয়া দলের সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে টাইমার বোমা রাখা হয়েছিল। তবে ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত যেন ফাঁস না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, গুমের বিষয়ে আমরা উত্তরায় একটা বড় বন্দিশালায় তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক কিছু আমরা আবিষ্কার করেছি। টাইমার বোমা দেখেছি। হয়তো এ বোমা রাখা হয়েছিল তদন্তকারী দলকে হত্যার পরিকল্পনা থেকে। আমাদের পরিদর্শনের ঠিক দু’দিন পর সেখানে প্রধান উপদেষ্টার পরিদর্শন করার কথা ছিল। তিনি অন্য জায়গায় গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেন।
মতবিনিময় সভায় প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।