মিয়ানমারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৬০০ জনে পৌঁছেছে এবং আহত হয়েছে ৫ হাজার ১৭ জন। এখনও ১৬০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে সোমবার (৭ এপ্রিল) দেশটির রাজ্য প্রশাসনিক কাউন্সিল জানিয়েছে। খবর আনাদোলু এজেন্সির।

গত শুক্রবার, ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প মিয়ানমারের সাগাইং শহরসহ আশপাশের গ্রামীণ এলাকা ধ্বংস করে দেয়। ভূমিকম্পের পর সাগাইং শহরের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে ওঠে। শহরের ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রায় প্রতিটি বাড়ি ও অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। ভূমিকম্পে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষের মধ্যে চাপা পড়ে রয়েছে বহু মানুষের লাশ। শহরজুড়ে মৃত্যুর গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে এবং সবকিছু ধ্বংসের পর দৃশ্যমান কেবল ধ্বংসস্তূপ।

মিয়ানমারের রাজ্য প্রশাসনিক কাউন্সিল জানিয়েছে, নিখোঁজদের অনুসন্ধানে উদ্ধারকারী দলগুলো এখনও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩,৩৫৪

সিনহুয়া নিউজের তথ্যানুসারে, জান্তা সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে বিপর্যস্ত সাগাইং অঞ্চলে মানবিক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। সামরিক সরকারের অনুমোদন না থাকায় অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান তেমন অগ্রসর হতে পারেনি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয় জানিয়েছে, জান্তা সরকার ভূমিকম্প-কবলিত এলাকায় সাহায্য সরবরাহ সীমিত করছে, যেখানে সম্প্রদায়গুলো সেনা শাসনকে সমর্থন করেনি।

২০২১ সালে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে সামরিক বাহিনী মিয়ানমার পরিচালনা করতে লড়াই করছে।

জাতিসংঘ বলছে, অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট গৃহযুদ্ধ ৩০ লাখের বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। ব্যাপক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে এবং জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। এ অবস্থায় ২৮ মার্চের ভূমিকম্পের ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।

মিয়ানমার নাউ-এর মতে, মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তরা অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানের জন্য স্থানীয় অলাভজনক জরুরি প্রতিক্রিয়া দলের ওপর নির্ভর করছেন।

সাগাইংয়েই কমপক্ষে ৬৯৩ জন মানুষ মারা গেছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)।

ভারী যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া বাসিন্দাদের ধীর গতিতে সাড়া দেওয়ার কারণে উদ্ধার অভিযান বিলম্বিত হওয়ায় নিহতদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

মিয়ানমার নাউ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একজন বাসিন্দা বলেছেন, “উদ্ধার মিশন শুধুমাত্র কায়িক শ্রম দ্বারা সম্পন্ন করা হচ্ছে। কারণ ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য তেমন কোনো ভারী যন্ত্রপাতি নেই। ফলস্বরুপ, অনেক মানুষ অপ্রেয়োজনীয়ভাবে প্রাণ হারিয়েছেন।”

মিয়ানমার নাউ-এর মতে, স্বেচ্ছাসেবকদের নেতৃত্বে উদ্ধারকারী দলগুলোকে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান তদারকির জন্য জান্তা অফিসে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ঠিকানার মতো বিস্তারিত তথ্য জমা দিয়ে সামরিক সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ ম কম প ভ ম কম প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ

ইউক্রেন সংকট ঘিরে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা আরও জোরদার হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও জার্মানির উদ্যোগে শুক্রবার ব্রাসেলসে ৫০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইউক্রেন প্রতিরক্ষা যোগাযোগ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠক। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি জানিয়েছেন, এ বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ আরও বাড়ানো।

বৈঠকে ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ৫৮ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই প্যাকেজের আওতায় রাডার সিস্টেম, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইন এবং বিপুল পরিমাণ ড্রোন সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সামরিক যান ও সরঞ্জাম মেরামতেও ব্যয় করা হবে এ অর্থের একটি অংশ।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার রাশিয়ায় পৌঁছেছেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে। এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে তা হবে উইটকফ ও পুতিনের মধ্যে তৃতীয় বৈঠক। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে উইটকফ পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক করে আমেরিকান শিক্ষক মার্ক ফোগেলকে মুক্ত করিয়েছিলেন। রাশিয়া সফরের আগে তিনি ওয়াশিংটনে রুশ আলোচক কিরিল দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেন। দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘একটি সমঝোতা’ হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে এই আলোচনার মধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের মানবাধিকার কমিশনার দিমিত্র লুবিনেৎস জানিয়েছেন, রুশ সেনারা ১৩ মার্চ জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের পিয়াতিখাতকি গ্রামে চারজন নিরস্ত্র ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে গুলি করে হত্যা করেছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। লুবিনেৎস আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও জাতিসংঘের কাছে বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং রাশিয়ার একটি প্রাতিষ্ঠানিক নীতি, যা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহিত হচ্ছে।’ এ ঘটনায় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হয়েছে।

এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত একটি বন্দিবিনিময় হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার মামলায় রাশিয়ায় কারাবন্দি আমেরিকান নাগরিক ক্সেনিয়া কারেলিনাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র আর্থার পেত্রভ নামে এক রুশ-জার্মান নাগরিককে রাশিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। এই বিনিময় প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। কারেলিনার বাগদত্তা ক্রিস ভ্যান হেরডেন এই মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে আরও কয়েকজন মার্কিন নাগরিক এখনও রাশিয়ার হেফাজতে আছেন, যাদের মুক্তির জন্য চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি তুরস্ক ও ইস্তাম্বুলে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় কূটনৈতিক সম্পত্তি ফেরত দেওয়া, নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ ও সরাসরি বিমান চলাচল শুরু করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনৈতিক পরিসরে এই নতুন আলোচনাপ্রবাহ ইউক্রেন সংকটের সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে, তবে এখনও বড় ধরনের অগ্রগতি অনিশ্চিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষমতায়ন মানে অংশগ্রহণ নয় অংশীদারিত্ব কোথায়?
  • নববর্ষের সাতসকাল
  • আমার দেখা সাংগ্রাই
  • মায়ামির মায়া ছাড়তে পারছেন না মেসি
  • অবিরাম কাজ করেও যারা কোনো নাম-দাম পান না
  • চেন্নাই প্লে’অফ খেলবে, দাবি ব্যাটিং কোচের
  • এখনও পুরনো যেসব রীতিতে চৈত্রসংক্রান্তি পালন করেন রংপুরের মানুষ
  • এখনও পুরনো রীতিতে চৈত্রসংক্রান্তি পালন করেন রংপুরের মানুষ
  • রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ
  • ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ থামলেও প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী