কমলনগরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, ৪ সন্তান আহত
Published: 8th, April 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে নুরুল আমিন (৬০) নামে এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় নিহতের ৪ ছেলে-মেয়ে আহত হন। আহতরা হলেন- নিহত নুরুল আমিনের ছেলে বজলুর রহমান ভুলু, মো. মামুন, মো. ফিরোজ ও মেয়ে আছমা আক্তার।
গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের ভাইস চেয়ারম্যান সড়কের চৌধুরীর চায়ের দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে নুরুল আমিনের মৃত্যুতে তোরাবগঞ্জ বাজারে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। নুরুল আমিনকে তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য দাবি করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারসহ দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায় বিক্ষুব্ধরা।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার সময় নুরুল আমিনের ছেলে মামুন চা খেতে চৌধুরীর দোকানে যান। এতে তাকে একা পেয়ে কোনো কারণ ছাড়াই কামাল, জামাল, মাসুদ, আলমগীর, মনির ও সেলিম মারধর করেন। খবর পেয়ে নুরুল আমিনসহ তার ছেলে বুলু ও মেয়ে আছমা ঘটনাস্থলে যান। এ সময় মামুনকে বাঁচাতে গেলে তারাও মারধরের শিকার হন। মারধরে নুরুল আমিন আহত হন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে নুরুল আমিনসহ তিনজনকে সদর হাসপাতালে পাঠান কর্তব্যরত চিকিৎসক। সদর হাসপাতালে নিলে নুরুল আমিনকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বজলুর রহমান বুলু বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বহিরাগতদের নিয়ে চা দোকানের মাচায় আড্ডা দেয়। দুইদিন আগে আমি তাদের কাছ থেকে বহিরাগতদের পরিচয় জানতে চাই। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে তারা আমার ভাইকে মারধর করে। পরে আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদেরকে মেরে আহত করে। তাদের পিটুনিতেই আমার বাবা মারা গেছেন।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেলিম নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: লক ষ ম প র প ট য় হত য ন র ল আম ন ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
‘সয়াল্যান্ডে’ ৪০০ কোটি টাকার ফলনের আশা
মেঘনার উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে উপযোগী আবহাওয়া ও মাটিতে এবার সয়াবিনের বাম্পার ফলন হওয়ায় ৪০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ফলন আশা করছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলার কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, চাষের বিশেষ উপযোগী হওয়ায় লক্ষ্মীপুরের অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে সয়াবিন। যে কারণে এই জেলাকে ‘সয়াল্যান্ড’ বলে ডাকার প্রচলন রয়েছে।
রবি মৌসুমে ব্যাপকভিত্তিক সয়াবিন চাষ করেন লক্ষ্মীপুরের কৃষকরা। কৃষি বিভাগও চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে।
আরো পড়ুন:
হবিগঞ্জের পাহাড়ে সজনের ফলনে চাষিরা লাভবান
ব্যয় বেশি, তুলার দাম বাড়ানোর দাবি চাষিদের
সরেজমিন দেখা যায়, মেঘনার বিশাল চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দেখা যায় সবুজের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায়, শুধু সয়াবিন আর সয়াবিন। মৃদূ হাওয়ায় দোল খাচ্ছে সয়াবিনের সবুজের পাতা। কৃষকরা ব্যস্ত খেত পরিচর্যায়।
অনুকূল আবহাওয়া বজায় থাকলে চলতি মৌসুমে সয়াবিনের ফলন ভালো হবে বলে আশা কৃষকদেরও।
দেশের ৮০ শতাংশ সয়াবিন এককভাবে লক্ষ্মীপুরে চাষ হয় বলে এই জেলার কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের অনেকে দাবি করে থাকেন। বিশেষ করে যেসব জমিতে বোরো ধান হয় না, সেই জমিতেই সয়াবিন চাষ করা হয়। অন্যান্য ফসল উৎপাদনের তুলনায় সয়াবিন চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। পশুখাদ্য তৈরির কারখানায় সয়াবিনের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে দাম।
বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চর কাছিয়া ও চরলক্ষ্মী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নটির প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষক সয়াবিনের আবাদ করছেন। সেখানে কাজ করছেন কৃষকরা। বিস্তৃর্ণ চরজুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ।
সেখানে কথা হয় জাকির হোসেন, কবির হোসেন, মোস্তফা গাজীসহ কয়েকজন সয়াবিন চাষির সঙ্গে।
তাদের বক্তব্য, ধানসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে সয়াবিন চাষে খরচ কম। অন্যান্য ফসল চাষে যেখানে মাটির শক্তি হ্রাস পায়, সেখানে সয়াবিন চাষের ফলে উর্বরতা বাড়ে। ফলে সয়াবিনের জমিতে অন্যান্য ফসলও বেশ ভালো হয়। সয়াবিন চাষে সর্বোচ্চ দুবার করে সার-ওষুধ দিতে হয়। এ ছাড়া আগাছা পরিষ্কারের জন্য গাছের চারা ছোট অবস্থায় একবার নিড়ানি দিলেই যথেষ্ট।
অবশ্য তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মাঝে-মধ্যে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় সয়াবিন চাষিদের।
এক্ষেত্রে জলবায়ু ও লবণাক্ততা সহনশীল এবং স্বল্প জীবনকালের সয়াবিনের জাত চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুরে চলতি মৌসুমে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে সেটি ছাড়িয়ে ৪৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে প্রায় দুই মেট্রিক টন সয়াবিন পাওয়া যায়। সে হিসাবে এবার সয়াবিনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার মেট্রিক টন।
অধিদপ্তর বলছে, লক্ষ্মীপুরে সবচেয়ে বেশি সয়াবিনের আবাদ হয় মেঘনার উপকূলীয় উপজেলা কমলনগর-রামগতিতে। এখানে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। কমলনগর উপজেলাতে ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর, সদর উপজেলাতে ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর ও রায়পুর উপজেলাতে ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ হয়েছে।
কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিন রানা জানান, দেশে মোট উৎপাদিত সয়াবিনের ৮০ শতাংশই পাওয়া যায় লক্ষ্মীপুর জেলার চার উপজেলা থেকে। আমন মৌসুম শেষে সয়াবিনের আবাদ করা হয়। চলতি মৌসুমের সয়াবিনের ফসল আগামী মে মাসের মাঝামাঝিতে তোলা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন বলেন, পরিবেশ অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। যাতে লাভবান হতে পারবেন কৃষকরা। এ অঞ্চলে সয়াবিন ভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে তোলা গেলে চাষীরা যেমন লাভবান হতেন, তেমনি সয়াবিন চাষাবাদে বিপ্লব ঘটত।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতিবছর ফলনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যায়। সয়াবিন ক্ষেতে খুব একটা সার দিতে হয় না। ক্ষেতে নিঁড়ানি দিয়ে আগাছাও পরিষ্কার করা লাগে না। গাছ বড় হলে এক-দুবার কীটনাশক দিতে হয়। চারা গজানোর ১৩০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে চলে আসে।
ঢাকা/রাসেল