‘স্রোতের তোড়ে সব গেছে, কীভাবে ফিরব ঘরে?’
Published: 8th, April 2025 GMT
‘ঈদের দিন সকালে চুলায় পায়েস রান্না করছিলাম। চারদিকে ঈদ-আনন্দের আবহ। এর মধ্যে হঠাৎ জোয়ারের পানি এসে ভাসিয়ে দেয় সব কিছু। জীবন বাঁচাতে এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে বেড়িবাঁধে উঠে আসি। সামনে কপালে কী আছে, কে জানে?’
কথাগুলো বলছিলেন নয়াখালী গ্রামের রমেছা বেগম। বেড়িবাঁধের উপর সারিবদ্ধ ঘর। পলিথিনের বেড়া, পাতার ছাউনি। কেউবা কাঠের পাটাতন দিয়ে টংঘর বানিয়েছেন। উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর জোয়ারে তোড়ে এদের সব ভেসে গেছে। মাটির ঘরগুলো একে একে ধ্বসে গেছে। রমেছার ঈদের পায়েসের পাতিল, চুলা, ঘরদোর, সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে জোয়ারের স্রোত। ঘরের মাটির দেয়াল ধ্বসে পড়েছে। অন্যান্য উপকরণ বিনষ্ট। বেড়িবাঁধ সংস্কার করে পানি আটকানো সম্ভব হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা এখনো মিলছে না। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেককে শুরু করতে হবে নতুন করে। সেজন্য প্রয়োজন টাকা।
গ্রামটি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর তীরে; ঈদের দিনের সেই গল্পটা এই মানুষদের কাছে এখনো তাজা। একমাস পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার পর এসেছিল ঈদুল ফিতর। রমজান শেষে রাত পোহানোর আগেই সব বাড়িতে ছিল ঈদের প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল সকালেও। নয়াখালীর রমেছার মত কেউ পায়েস রান্না করছিলেন, আনুলিয়া গ্রামের আসাদুজ্জামান, আবদুস সাত্তার গাজী, সফিকুল ইসলামের মত আরো অনেক মানুষ নতুন জামা পরে গিয়েছিলেন ঈদের জামাতে। কিন্তু এরই মধ্যে হঠাৎ পানির স্রোত এসে সর্বনাশ ডেকে আনলো। গোটা এলাকায় ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেলো। শুধু ঈদের আনন্দ নয়, এই বিপর্যয় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জীবনে নতুন সংকট নিয়ে এলো। আকস্মিক বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় আনুলিয়া ইউনিয়নের দশটি গ্রামের অন্তত দশ হাজার মানুষ চরম সংকটের মুখে পড়েছে।
আরো পড়ুন:
সাতক্ষীরায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ফাটল
রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার বর্ষার আগেই শেষ হবে
ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপদের মুখোমুখি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই প্রতিবছর ওই অঞ্চলের কোথাও না কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা এখন প্রায় নিয়মিত। নাজুক বেড়িবাঁধের কারণে মানুষের মাঝে আতঙ্ক। ভাঙনের পর আসে সর্বনাশের সময়। বিপদের সময় সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে জরুরি খাবার হিসাবে চিড়া, মুড়ি, চাল, ডাল, তেল, লবণ, পানি ইত্যাদি পাওয়া যায়। কিন্তু বিপদ কেটে যাওয়ার পর, পুনর্বাসনকালে মানুষের পাশে কেউ থাকে না। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আসল লড়াই তখনই শুরু হয়। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের পুনরায় ঘরে ফিরে যেতে ৫০-৬০ হাজার থেকে এক লক্ষ কিংবা দেড় লক্ষ টাকার প্রয়োজন হবে। এ টাকা কে দেবে!
রমেছার লড়াই আরো কঠিন!
অতি কষ্টে চলা রমেছা বেগমের সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। সাতক্ষীরার আশাশুনিতে আনুলিয়া ইউনিয়নে খোলপেটুয়া নদীর পাড়ে নয়াখালী গ্রামে কঠোর পরিশ্রমে দিনমজুরি করে জীবন কাটাচ্ছিলেন রমেছা। দুই সন্তান ফেলে স্বামী চলে যাওয়ায় রমেছার ঠাঁই হয় নয়াখালী বাবার ভিটেয়। পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন রমেছা নিজেই রোজগারের পথ বের করেছিলেন। রাস্তার কাজ, মাটির কাজ, চিংড়ির ঘেরের কাজে দিনমজুরি করছিলেন তিনি। কাজ না থাকলে নদীতে চিংড়ির পোনা ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দরিদ্র বাবার ভিটেয় বসবাসের জন্য করেছিলেন মাটির দেয়ালে তৈরি একটি ঘর। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ কঠিন এক রোগে আক্রান্ত হয় রমেছার ছেলেটি। অনেক চিকিৎসার পরেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি। মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু ঠিক মায়ের মতই তার কপালেও স্বামীর ঘর ছিল না। তিন সন্তানসহ ফিরে আসে মায়ের কাছে। একদিকে সংকটে মা রমেছা, অন্যদিকে মেয়ে এবং নাতিদের বোঝাও এসে পড়ল তার ওপর।
সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা
রমেছা জানান, তার আরো এক বোন হেনা পারভীন স্বামীর ঘর থেকে ফিরে এসেছেন বাবার বাড়ি। এক মেয়ে নিয়ে পৃথক ঘরে বসবাস করেন তিনি। এ ছাড়াও দুই ভাইয়ের দুটি ঘর ছিল ওই বাড়িতে। ঈদের দিন জোয়ারের পানিতে সবগুলো ঘর ধ্বসে পড়েছে। ঘরের অধিকাংশ মালামাল রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। হাতের কাছে যা পেয়েছিলেন, তা নিয়ে মানুষগুলো ছুটেছেন বেড়িবাঁধের দিকে। রমেছা, তার বোন হেনা পারভীন এবং দুই ভাই শহীদ শেখ ও কায়মুল শেখ সকলেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানো রান্নার ব্যবস্থা হয়নি। শুকনো খাবার দিয়ে দিন কাটছে।
রমেছা বলেন, ‘নানান সংকটের মধ্য দিয়ে জীবন এগিয়ে নিচ্ছিলাম। জোয়ারের পানির তোড়ে বসবাসের ঘর হারিয়ে এখন নতুন সংকটে পড়লাম। এখন মাথাগোঁজার ঠাঁইও নাই। বেড়িবাঁধের উপরে বসবাস করছি। কবে ঘরে ফিরতে পারবো জানি না। ঘরে ফিরতে হলে ঘর তৈরি করতে হবে। ঘর তৈরি করতে লাগবে অনেক টাকা। কোথায় পাবো সে টাকা!’
চুলা জ্বলেনি অনেক পরিবারে
ঈদের দিন বেড়িবাঁধ ধ্বসের পর অনেক পরিবারে এখনো চুলা জ্বলেনি। শুকনো খাবার চিড়া-মুড়ি-গুড় দিয়ে ক্ষুধা মেটাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা। নয়াখালী গ্রামের গা ঘেঁষে বেড়িবাঁধের উপরে সারিবদ্ধ বাড়িঘর, যারা জোয়ারের পানিতে সব হারানোর পর এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘরের আসবাবপত্র যা কিছু রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে, সেগুলো দিয়ে কোনমতে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে তারা বসবাস করছেন। এপ্রিলের অসহনীয় গরমের মধ্যে তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
নয়াখালী গ্রামের সবুজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের এই গ্রামের সব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। গ্রামের অধিকাংশ পরিবার বেড়িবাঁধে উঠে এসেছে। চুলা নাই, খাবার নাই, লাকড়ি নাই, পানি নাই। এখানে বসবাস করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে।’ পলাশ পাড়ের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, ‘মাটির ঘর ধ্বসে গেছে। বেড়িবাঁধের উপরে টংঘর বানিয়ে বসবাস করছি।’ একই বাড়ির বারিক পাড়ের স্ত্রী মাসতেরাতুন খাতুন বলেন, ‘মেঘ নাই, বৃষ্টি নাই। হঠাৎ বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে আমাদের সর্বনাশ করেছে। ঈদের দিন বাড়িতে চুলা জ্বলেছে। এখন অবধি আর চুলা জ্বলেনি। শুকনো খাবার খেয়ে আর কতদিন চলতে পারব?’
ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন, জোয়ারের তোড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হয়েছে। বসবাসের ঘর, রান্নার চুলা, টয়লেট, খাবার পানি, খাদ্য, চলাচলের রাস্তা, সব ক্ষেত্রেই সংকট তৈরি হয়েছে। সাতক্ষীরার এই এলাকাটি ভৌগোলিকভাবে সুপেয় পানির সংকটের এলাকা হিসাবে পরিচিত। অধিকাংশ এলাকায় নলকূপ বসে না। ফলে পুকুরের পানি একমাত্র ভরসা। কিন্তু বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে কয়েকদিন জোয়ারভাটা অব্যাহত থাকায় সুপেয় পানির পুকুরগুলো লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে অন্যান্য সংকটের সাথে খাবার পানির সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এত সংকটের মধ্যেও জরুরি ত্রাণ সহায়তা ছাড়া বিশেষ কোনো সহায়তা পৌঁছেনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়।
চিংড়ি চাষির সর্বনাশ!
আনুলিয়া গ্রামের আসাদুজ্জামানের চারটি চিংড়ির খামার লবণ পানির তলায়। বাড়িতে তার তিনটি ঘর ধ্বসে গেছে। সব নিয়ে তার ক্ষতির পরিমাণ ৫ লক্ষাধিক টাকা। সফিকুল ইসলামের ১১ বিঘা জমিতে চিংড়ির ঘের ছিল। সব মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ছয় লক্ষ টাকা। এভাবে আরো অনেক চিংড়ি চাষি তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন। এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ চিংড়ি চাষের উপর নির্ভরশীল। এ বছর চিংড়ি চাষের মৌসুম কেবল শুরু হয়েছিল। এরই মধ্যে এই বিপর্যয়।
আনুলিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ধারদেনা করে কিংবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করেছিলাম। ব্যাংক এবং সমিতিতে ঋণ রয়েছে। চিংড়ি চাষে বিপর্যয় হলেও ঋণ আমাদের শোধ করতেই হবে। মৌসুমের শুরুতে ঘের থেকে কেবল চিংড়ি আহরণ শুরু হয়েছিল। পুরো মৌসুম পেলে দেনা শোধ করে লাভবান হতে পারতাম। কিন্তু এখন আমরা ব্যাপক লোকসানে আছি। চিংড়ি আমাদের উপার্জনের প্রধান অবলম্বন। চিংড়িতে ধ্বস নামলে আমাদের বিকল্প কিছু নাই। ৪৭ বিঘার চিংড়ির ঘের সমীরণ সরদারের। ১২ বিঘার ভিটেও ছিল তার। জোয়ারের তোড়ে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। চিংড়ি চাষিদের মধ্যে ক্ষতির মুখে পড়া আরো কয়েকজন সাত্তার গাজী, রুহুল আমীন, তারকচন্দ্র সরদার, আবদুল গাজী। এরা সকলেই এখন সামনে অন্ধকার দেখছেন।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য বিভাগের প্রাথমিক হিসাব বলছে, উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে আটটি গ্রামের প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা জমির ৫০০ শতাধিক চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়েছে। এতে চাষিদের প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে চাষিদের দাবি ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণ। সূত্রগুলো বলেছে, ২০ হেক্টর জমির বোরো ধান ও প্রায় দেড় হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্লাবিত এলাকার প্রায় ১০০০ ঘরবাড়ি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি গিয়ে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
বেড়িবাঁধ ভাঙনের পর আধুনিক জিও টিউব দিয়ে একটি বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে খোলপেটুয়া নদীর লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ বন্ধ হয়েছে। দুর্গতদের সহায়তায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানান। ৩১ মার্চ সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে প্রায় দেড়শ ফুট এলাকাজুড়ে বেড়িবাঁধ খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে প্লাবিত হয়ে পড়ে আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট, বল্লভপুর, আনুলিয়া, নয়াখালী, চেঁচুয়া কাকবাসিয়াসহ আরো কয়েকটি গ্রাম। এর মধ্যে নয়াখালী গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয় এবং এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখনো বেড়িবাঁধের উপর অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে।
চাই টেকসই বেড়িবাঁধ
স্থানীয়রা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাঙনকবলিত বাঁধ সংস্কারের পাশাপাশি অবিলম্বে অবৈধ পাইপলাইন ও গেট সিস্টেম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। একইসঙ্গে তারা টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানিয়েছেন। এই দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধনে এলাকাবাসী বেড়িবাঁধ ভাঙনের কারণ হিসেবে বলেন, মৎস্য ঘেরে লবণ পানি উত্তোলনের জন্য স্থাপন করা পাইপের কারণে বেড়িবাঁধের নিচের মাটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ফলে এই ভাঙনের সূত্রপাত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আনুলিয়াবাসীর ঈদের আনন্দ ভাঙনে ভেসে গেছে। মানুষ ঘর-বাড়ি, ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের সবকিছুই হারিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে। এ যেন অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। এই নদীই আমাদের প্রাণ। কিন্তু অসাধুরা ইচ্ছাকৃতভাবে বেড়িবাঁধ ভাঙার সুযোগ সৃষ্টি করে, যাতে তারা ত্রাণের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে পারে। তারা বলেন, খোলপেটুয়া নদীতে জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে, ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, বাজেটের সিটিজেন চার্টার দিতে হবে।
আনুলিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) আশাশুনি উপজেলা টিম লিডার আবদুল জলিল বলেন, ’মূল যে পয়েন্টে ভেঙেছে, সেটাতে একটি পাইপলাইন ও গেট সিস্টেম ছিল। যতগুলো ভাঙন পয়েন্ট রয়েছে, সবগুলোই পাইপলাইনের কারণে হয়েছে। এখন যদি আমরা এই পাইপলাইন বসানো বন্ধ না করি, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ঘটবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা এখন খাবার সংকটে পড়েছে। অনেক পরিবার উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ শুরু করলেও এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।’
তারা//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপক ল বসব স করছ ঈদ র দ ন ট কসই ব ধ র উপর পর ব র ম র সব ন র পর আম দ র নয় খ ল উপজ ল আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
আনন্দ শোভাযাত্রার মোটিফে অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত চায় ঢাবি ছাত্রদল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা উদ্যাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফ আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে ঢাবি ছাত্রদল। শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটি এ দাবি জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস এবং সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আগুন লাগার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
ঢাবি ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান— এই প্রতিপাদ্যে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদ্যাপনের লক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিকৃতি তৈরির কাজে যুক্ত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিছুদিন ধরে আনন্দমুখর পরিবেশে এ কার্যক্রম চললেও শনিবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে কিছু দুর্বৃত্ত অনুষদ প্রাঙ্গণে নির্মিতব্য ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও শান্তির পায়রার প্রতিকৃতিতে অগ্নিসংযোগ করে তা ভস্ম করে দিয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা এবং ক্যাম্পাসে ফ্যাসিস্টদের মুক্ত পদচারণার বিষয়ে ঢাবি ছাত্রদল এর আগে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, এই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি তার সত্যতা প্রমাণ করে প্রতি একটি ভয়াবহ বার্তা দিয়ে গেল।’
ঢাবি ছাত্রদল বলেছে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ এবং ফ্যাসিবাদী শাসনামলের বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলাকারীরা এখনো আবাসিক হলগুলোতে বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিনা বাধায় চলাফেরা করছে। ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করে দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে। তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চরম উদাসীনতা দেখিয়েছে। এই অগ্নিসংযোগের ঘটনার মাধ্যমে সেটিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করছে ঢাবি ছাত্রদল।