ঢাকা উত্তরে মশকনিধন কর্মীদের হাজিরা ঠিকঠাক, পরে ফাঁকিবাজি
Published: 8th, April 2025 GMT
ঢাকা উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) মশকনিধন কর্মীদের হাজিরা দিতে হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে অ্যাপের মাধ্যমে। তাই কর্মীরা কাজে আসেন সময়মতো। হাজিরা দিয়ে মশকনিধনের ওষুধ ও ওষুধ ছিটানোর যন্ত্র (স্প্রে/ফগার মেশিন) নিয়ে নির্ধারিত সময়ে কাজেও যান। এর পরেই শুরু হয় ফাঁকিবাজি। অনেকে নির্ধারিত এলাকায় গিয়ে আর ওষুধ ছিটান না। কেউ কেউ হাজিরা দিলেও পরে আর কাজেই যান না।
গত রোববার সকালে ও বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটির দুটি ওয়ার্ডে গিয়ে মশকনিধনের কর্মীদের ফাঁকিবাজির এ চিত্র দেখা গেছে। সকালে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের সি ব্লকে ওষুধ ও যন্ত্র নিয়ে কর্মীরা গেলেও, ওই এলাকার ১৫টি সড়কে কাউকে ওষুধ দিতে দেখা যায়নি। বিকেলে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, হাজিরা দেওয়ার পরে তিনজন কর্মী আর কাজেই যাননি।
অনেকে নির্ধারিত এলাকায় গিয়ে আর ওষুধ ছিটান না। কেউ কেউ হাজিরা দিলেও পরে আর কাজেই যান না।মিরপুর ১১ নম্বরের প্যারিস রোডসংলগ্ন ৩৪ নম্বর সড়কে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কার্যালয়। একটু সামনেই সড়কের শেষ প্রান্তে একটি কক্ষে রাখা হয় মশকনিধনের ওষুধ ও যন্ত্র। সকাল আটটার কিছু আগে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন মশকনিধন কর্মী কাজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সকালে ওয়ার্ডের ১৭ জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত ছিলেন দুজন।
মশকনিধনের কাজের দায়িত্ব ছয় মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে সেনাবাহিনীকে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, যাতে অন্তত তদারকিটা কঠোরভাবে হয়।মোহাম্মদ এজাজ, প্রশাসক, ঢাকা উত্তর সিটিসকাল ৮টা ১২ মিনিটের দিকে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি নিয়ে কর্মীরা যে যার মতো নির্ধারিত এলাকায় রওনা হন। সুপারভাইজার উজ্জ্বল মিয়া প্রথম আলোকে জানান, মিরপুর ১০ নম্বরের সি ও ডি ব্লক এবং মিরপুর ১১ নম্বরের সি ব্লকে ওষুধ ছিটানো হবে।
সকাল সোয়া ৯টার কিছু পরে মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের সি ব্লক এলাকায় যান এই প্রতিবেদক। প্রথমে সি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কে গিয়ে ওষুধ ছিটাতে যাওয়া কর্মীদের খোঁজ করা হয়। পর্যায়ক্রমে হেঁটে সি ব্লকের ৩, ১৩, ১৭, ১১, ১৪, ১০, ১৮, ১৭, ১৯, ২০, ২১, ২২/৭, ১৬ ও ১৫ নম্বর সড়কে যান এই প্রতিবেদক। প্রায় এক ঘণ্টা (সকাল ১০টা পর্যন্ত) এসব সড়কে কোনো কর্মীকে মশকনিধনের ওষুধ ছিটানোর কাজ করতে দেখা যায়নি।
এ সময় এসব সড়কে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী, বাসিন্দা, চা-দোকানি, সবজি বিক্রেতা—এমন অন্তত সাতজনের কাছে মশকনিধনের কর্মীদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কেউই ওষুধ ছিটাতে দেখেননি বলে জানান। যেখানে ওষুধ–যন্ত্রপাতি রাখা হয়, সাড়ে ১০টার দিকে আবার সেখানে যান এই প্রতিবেদক। সেখানে গিয়ে কাজ শেষ করে ফিরেছেন—এমন কোনো কর্মীকে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি বিস্তারিত জানিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, রোববার সি ব্লকের ১৫, ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর সড়কে ওষুধ ছিটানোর কাজ হয়েছে। মশকনিধন কর্মীরা কাজ করেছেন বলেও বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করেন।
মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন জানিয়ে মিরপুর সি ব্লকের বাসিন্দা সাদমান হোসেন বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কর্মীদের হঠাৎ হঠাৎ কখনো দেখা যায়। কিন্তু ওষুধ ছিটানোর কাজ করে কি না, জানি না।’
সকাল সোয়া ৯টার কিছু পরে মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের সি ব্লক এলাকায় যান এই প্রতিবেদক। প্রথমে সি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কে গিয়ে ওষুধ ছিটাতে যাওয়া কর্মীদের খোঁজ করা হয়। পর্যায়ক্রমে হেঁটে সি ব্লকের ৩, ১৩, ১৭, ১১, ১৪, ১০, ১৮, ১৭, ১৯, ২০, ২১, ২২/৭, ১৬ ও ১৫ নম্বর সড়কে যান এই প্রতিবেদক। প্রায় এক ঘণ্টা (সকাল ১০টা পর্যন্ত) এসব সড়কে কোনো কর্মীকে মশকনিধনের ওষুধ ছিটানোর কাজ করতে দেখা যায়নি।বিকেলেও একই চিত্র
সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মশার লার্ভা (শূককীট) নিধনের কাজ করার কথা কর্মীদের, যাকে বলা হয় লার্ভিসাইডিং। এরপর বিকেল পৌনে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পৌনে সাতটা পর্যন্ত পরিপক্ব বা উড়ন্ত মশা মারতে ওষুধ ছিটাবেন, যাকে বলা হয় ফগিং।
ফগিং কার্যক্রম দেখতে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তেজগাঁওয়ে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কার্যালয়ে যান এই প্রতিবেদক। ততক্ষণে মশকনিধন কর্মীদের বেশির ভাগই নির্ধারিত এলাকায় ওষুধ ছিটানোর জন্য বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে কথা হয় দুজন কর্মীর সঙ্গে। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, মোট কতজন কর্মী মশকনিধনের কাজ করেন আর উপস্থিত আছেন কতজন। তাঁরা জানান, ২০ জনের সবাই উপস্থিত আছেন। কিন্তু কাজে গেছেন ১৭ জন। বাকি তিনজন কাজে যাননি। এ ছাড়া ওই ওয়ার্ডের মশকনিধন কার্যক্রমের সুপারভাইজার আবু হানিফও বিকেলে আর আসেননি বলে জানান তাঁরা।
সিটি করপোরেশনের কর্মীদের হঠাৎ হঠাৎ কখনো দেখা যায়। কিন্তু ওষুধ ছিটানোর কাজ করে কি না, জানি না।মিরপুর সি ব্লকের বাসিন্দা সাদমান হোসেনকাজে না যাওয়া তিনজনের মধ্যে একজন তাজুল ইসলাম। ওয়ার্ড কার্যালয়ে ছিলেন তিনি। তাজুল ইসলাম বলেন, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন বলে কাজে যাননি তিনি। কাজে না যাওয়া অন্য দুই কর্মীর বিষয়ে তিনি বলেন, তাঁরা হাজিরা দেওয়ার পর কোথায় চলে গেছেন তিনি জানেন না।
তাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুজন কর্মী নিকেতন বাজার গেট এলাকায় ফগিং করতে গেছেন। তাঁরা নর্দান রাবার নামে একটি কারখানার ভেতরে বড় একটি পুকুরের আশপাশে ওষুধ ছিটাবেন। বিকেল পাঁচটার দিকে ওই কারখানায় গিয়ে জানতে চাইলে কারখানাটির প্রহরী আবুল মিয়া জানান, মশার ওষুধ দিতে কোনো কর্মী আসেননি।
মিনিট দশেক খোঁজাখুঁজির পর নর্দান রাবার কারখানা থেকে একটু ভেতরে নিকেতন আবাসিক এলাকায় এক জায়গায় ওই দুজন কর্মীকে দেখা যায়। রাস্তায় ফগার যন্ত্র রেখে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন তাঁরা। ছবি তুলতে দেখে দুজনই এগিয়ে আসেন। ওষুধ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, নামাজ হচ্ছে। শেষ হলেই তাঁরা ফগিং শুরু করবেন।
আমি আমার নিজের মতো করে ঘুরি। ঘুরে ঘুরে আমিও কিন্তু একই চিত্র পেয়েছি। আজকে (রোববার) মিটিংয়েও এটা উত্থাপন করেছি।ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজসংস্থাপ্রধানেরও একই অভিজ্ঞতা
সকালে ও বিকেলে দুটি ওয়ার্ডে মশকনিধন কর্মীদের কাজের চিত্র তুলে ধরে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার নিজের মতো করে ঘুরি। ঘুরে ঘুরে আমিও কিন্তু একই চিত্র পেয়েছি। আজকে (রোববার) মিটিংয়েও এটা উত্থাপন করেছি।’
মশকনিধনের কাজটি সরাসরি সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে বলে জানান উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এর কারণ, সিটি করপোরেশনের লোকজনও অনিয়মে জড়িত। সেনাবাহিনীকে ছয় মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে কাজ দেওয়া হবে। যাতে অন্তত তদারকিটা কঠোরভাবে হয়।’
ঢাকা উত্তর সিটির স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়, বর্ষা মৌসুম, ডেঙ্গুর প্রকোপ—এসব বিষয় সামনে রেখে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী তিন মাস, প্রতি মাসে ৮-১০ দিন করে তারা সময় দেবে। তাদের কাজ হবে বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে তারা মাঠে কাজ করবে। এ ছাড়া মশা প্রজননের এক হাজার ‘হট স্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব জায়গায় মশকনিধনের আধুনিক ফাঁদ স্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ধ র ত এল ক য় কর ম দ র হ র কর ম দ র কর ম ক কর ম র র সড়ক প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
সফটওয়্যার প্রকৌশলী এআই এজেন্ট আনতে যাচ্ছে ওপেনএআই
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত সফটওয়্যার প্রকৌশলী এজেন্ট আনতে যাচ্ছে চ্যাটজিপিটির নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, এআই এজেন্টটি মানুষের সহায়তা ছাড়াই কোড লিখে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করতে পারবে। শুধু তাই নয়, নিজ থেকে সফটওয়্যারে থাকা ত্রুটি শনাক্ত করে সমাধানও করবে।
ওপেনএআইয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) সারাহ ফ্রাইয়ার জানিয়েছেন, নতুন এআই এজেন্টের নাম ‘এ-এসডব্লিউই’ বা ‘এজেন্টিক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার’। এটি ওপেনএআইয়ের তৈরি তৃতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এজেন্ট। এর আগে ‘অপারেটর’ ও ‘ডিপ রিসার্চ’ নামে দুটি এআই এজেন্ট চালু করেছে ওপেনএআই। এগুলো এখন শুধু চ্যাটজিপিটির প্রিমিয়াম গ্রাহকেরা ব্যবহার করতে পারেন।
নিজেদের তৈরি সফটওয়্যার প্রকৌশলী এআই এজেন্টের বিষয়ে সারাহ ফ্রাইয়ার জানান, এ-এসডব্লিউই একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলীর মতোই কাজ করবে। কাজ বুঝিয়ে দিলে নিজ থেকে কোড লেখার পাশাপাশি সফটওয়্যারের মাননিয়ন্ত্রণ, ত্রুটি শনাক্তসহ প্রকল্প-সম্পর্কিত নথিপত্র তৈরি করে দেবে এআই এজেন্টটি।
ওপেনএআইয়ের তৈরি এআই এজেন্ট প্রকৃতপক্ষে একটি ‘ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার’ বা কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিকারী উপাদান হিসেবে কাজ করবে। এটি সফটওয়্যার প্রকৌশলীদের দলকে অনেক বেশি উৎপাদনশীল করে তুলতে পারে। তবে চলতি বছরের শুরুতে ওপেনএআইয়ের চালু করা ‘ডিপ রিসার্চ’ এজেন্টকে গবেষণা সহকারীর বিকল্প হিসেবে পরিচয় করানো হলেও এখনো তা পুরোপুরি সেই ভূমিকা পালন করতে পারছে না।
সূত্র: লাইভমিন্ট