হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ৩ জেলায় ৪৯ জনকে ধরেছে পুলিশ
Published: 8th, April 2025 GMT
খুলনা, গাজীপুর ও সিলেটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ৪৯ জনকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক ও গ্রেপ্তার করে পুলিশ
এর আগে গতকাল ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় মিছিল ও সমাবেশ হয়। এসব কর্মসূচি থেকে কয়েকটি জেলায় কেএফসি, পিৎজা হাট, বাটাসহ এক ডজনের বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল গাজার মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা ও বেআইনি ঘটনায় পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। ওই সব ঘটনায় জড়িত অন্তত ৪৯ জনকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুটি মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলমান এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
খুলনায় কেএফসি, ডোমিনোজ পিৎজা ও বাটা শোরুম ভাঙচুর–লুটপাটের ঘটনায় ৩১ জনকে আটক করেছে সোনাডাঙ্গা থানার পুলিশ। গতকাল রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। এ সম্পর্কে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) গণমাধ্যম শাখার এডিসি আহসান হাবিব বলেন, গতকাল খুলনা শহরে বাটা শোরুম ও কেএফসি ফুডকোর্টে লুটপাটের ঘটনায় পুলিশ ৩১ জনকে আটক করেছে। ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িত অন্যদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
গতকাল সন্ধ্যায় খুলনা নগরের ময়লাপোঁতা এলাকায় অবস্থিত কেএফসি ও ডোমিনোজ পিৎজা এবং শিববাড়ী এলাকায় অবস্থিত বাটা শোরুমে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। কেএফসি ও ডোমিনোজ পিৎজা রেস্টুরেন্ট একই ভবনে অবস্থিত। একই সময়ে শিববাড়ী মোড়ের টাইগার গার্ডেন হোটেলের নিচে থাকা বাটা শোরুমে ভাঙচুর করা হয়।
দুটি জায়গাই পড়েছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সোনাডাঙ্গা থানার মধ্যে। গতকাল ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ করেই ওই দুটি প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। মিছিল অন্যদিকে ছিল, কিন্তু এখানে কারা হামলা করেছে, তা বলা যাচ্ছে না। ভাঙচুর করে হামলাকারীরা সেখান থেকে চলে যায়।
আরও পড়ুনসিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ১১ ঘণ্টা আগেসিলেটে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েন সিলেট কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামসুল হাবিব। তিনি জানান, থানায় আরও কয়েকজন আটক রয়েছেন। তাঁদের নাম–পরিচয় যাচাই–বাছাই চলছে। বিস্তারিত পরে জানা যাবে।
পুলিশ জানায়, গতকালের ঘটনায় বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও দেখে ভাঙচুর ও লুটপাটে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন মামলার আসামিও রয়েছেন।
গতকাল সকাল থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সিলেট নগর বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল। বিকেলের দিকে নগরের মিরবক্সটুলা এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতা কেএফসি ভাঙচুর করে। এরপর বাটা, ইউনিমার্ট, আলপাইন রেস্তোরাঁসহ প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গাজীপুরে তিনটি রেস্টুরেন্ট ও বাটার শোরুমে হামলা, লুটপাটের ঘটনায় গতকাল রাতে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। গাজীপুর মেট্রোপলিটনের গাছা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় গাছা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে '
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মোছাপুর গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলে সিয়াম খান (১৮), ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নতুন বাজার বালিপাড়া গ্রামের মো.
পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুরে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল হয়। বোর্ডবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক হয়ে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) গেট পর্যন্ত গিয়ে আবার বোর্ডবাজারে এসে শেষ হয়। এতে পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেন। বিক্ষোভ মিছিল থেকে একপর্যায়ে বাটার শোরুম ও কয়েকটি রেস্তোরাঁয় হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক য় ব যবস গতক ল নগর র ক এফস
এছাড়াও পড়ুন:
আনন্দ শোভাযাত্রার মোটিফে অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত চায় ঢাবি ছাত্রদল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা উদ্যাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফ আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে ঢাবি ছাত্রদল। শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটি এ দাবি জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস এবং সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আগুন লাগার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
ঢাবি ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান— এই প্রতিপাদ্যে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদ্যাপনের লক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিকৃতি তৈরির কাজে যুক্ত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিছুদিন ধরে আনন্দমুখর পরিবেশে এ কার্যক্রম চললেও শনিবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে কিছু দুর্বৃত্ত অনুষদ প্রাঙ্গণে নির্মিতব্য ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও শান্তির পায়রার প্রতিকৃতিতে অগ্নিসংযোগ করে তা ভস্ম করে দিয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা এবং ক্যাম্পাসে ফ্যাসিস্টদের মুক্ত পদচারণার বিষয়ে ঢাবি ছাত্রদল এর আগে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, এই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি তার সত্যতা প্রমাণ করে প্রতি একটি ভয়াবহ বার্তা দিয়ে গেল।’
ঢাবি ছাত্রদল বলেছে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ এবং ফ্যাসিবাদী শাসনামলের বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলাকারীরা এখনো আবাসিক হলগুলোতে বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিনা বাধায় চলাফেরা করছে। ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করে দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে। তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চরম উদাসীনতা দেখিয়েছে। এই অগ্নিসংযোগের ঘটনার মাধ্যমে সেটিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করছে ঢাবি ছাত্রদল।