যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান আগামী শনিবার একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ‘সরাসরি আলোচনা’ করবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, যদিও তিনি বলেছেন এটি ‘পরোক্ষ’ আলোচনা হবে, তবে একইসঙ্গে এটিকে ‘একটি সুযোগ ও একটি পরীক্ষা’ বলেও বর্ণনা করেছেন।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

আরো পড়ুন:

ইউএসটিআরকে বাণিজ্য উপদেষ্টার চিঠি
যুক্তরাষ্ট্রের আরো ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে বাংলাদেশ

আইসিসির গ্রেপ্তার এড়িয়ে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন নেতানিয়াহু

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার (৭ এপ্রিল) মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, “ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে আলোচনা ‘খুব উচ্চ পর্যায়ে’ হবে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, “যদি কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো না যায় তাহলে এটি ‘ইরানের জন্য খুব খারাপ দিন’ হবে।” 

গত মাসে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করার পর ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা উত্থাপন করেছিলেন।

গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠকের পর ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার এই কথা প্রকাশ করেন। ট্রাম্প এর আগে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে হামলার হুমকিও দিয়েছিলেন।

হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “শনিবার (ইরানের সঙ্গে) আমাদের একটি খুব বড় বৈঠক আছে এবং আমরা সরাসরি তাদের (ইরানের) সঙ্গে কাজ করছি.

..সম্ভবত একটি চুক্তি হতে চলেছে, যদি সেটি হয়, তাহলে দারুণ ব্যাপার হবে।”

ট্রাম্প পরবর্তীতে বলেন, “আলোচনা সফল না হলে ইরান ‘বড় বিপদে’ পড়বে।”  তিনি আরো বলেন, “ইরান পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না এবং যদি আলোচনা সফল না হয়, তাহলে আমি মনে করি এটি ইরানের জন্য খুবই খারাপ দিন হবে।” 

তবে আলোচনায় কে বা কারা অংশ নিচ্ছেন, আলোচনা কতটা এগিয়েছে – এসব বিষয়ে ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু জানাননি।

এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি নিশ্চিত করেছেন, ওয়াশিংটন এবং তেহরান ১২ এপ্রিল ওমানে বৈঠক করবে।

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ এক পোস্টে লিখেছেন, “এটি যেমন একটি সুযোগ, তেমনি একটি পরীক্ষা। বল এখন আমেরিকার কোর্টে।” 

গত মাসে, ট্রাম্প সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ইরানের নেতার কাছে আলোচনার জন্য তার ইচ্ছা প্রকাশ করে একটি চিঠি পাঠান।

ইরান সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, যদিও তাদের নেতৃত্ব তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আমেরিকার সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার ইঙ্গিত দেয়।

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা হ্রাস করা কয়েক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতি লক্ষ্য।

২০১৫ সালে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলেন, যার অধীনে তেহরান তাদের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড সীমিত করবে এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের ইরানে প্রবেশের অনুমতি দেবে যাতে নিশ্চিত করা যায় যে, স্থাপনাগুলো কেবল বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে, অস্ত্র উৎপাদনের জন্য নয়।

বিনিময়ে, ইরানকে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যা দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে।

এই চুক্তিতে চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং যুক্তরাজ্য যৌথভাবে স্বাক্ষর করেছিল।

তবে, ২০১৬ সালে ট্রাম্প একতরফাভাবে চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার সময় ইরানের সঙ্গে চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।

পরবর্তী বছরগুলোতে, ইরান ক্রমবর্ধমানভাবে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, তেহরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বিশাল মজুদ তৈরি করেছে, যা পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বারবার ইরানের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তির আলোচনার সম্ভাবনা উত্থাপন করেছেন এবং যদি কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারেন তাহলে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

ইসরায়েল তাদের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখাকে মূল লক্ষ্য হিসেবে দেখছে।

গত বছর ইসরায়েল বলেছিল, তারা ইসরায়েলে ইরানের পূর্ববর্তী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ হিসেবে একটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত করেছে।

গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন,  “আমরা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই এই লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ যে, ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে না পারে।”

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “যদি এটি কূটনৈতিকভাবে সম্পূর্ণরূপে করা যায়, যেমনটি লিবিয়ায় করা হয়েছিল, আমি মনে করি এটি একটি ভালো জিনিস হবে।”

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ন র জন য কর ছ ল কর ছ ন ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৩৯ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ১১১ কোটি ডলার।

গতকাল রোববার এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, এর আগে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। তখন বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার।

প্রবাসীদের পাঠানো আয় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। গত মার্চ মাসে ৩২৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে; এক মাসের হিসাবে যেকোনো সময়ের চেয়ে এটি বেশি। ফলে ব্যাংকগুলো উদ্বৃত্ত ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনলে আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান এলেই কেবল রিজার্ভ বাড়ে। এতে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ওপর চাপ কমেছে। ডলারের দাম না বেড়ে ১২৩ টাকার মধ্যে আটকে রয়েছে। পাশাপাশি অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে। ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক।

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ডলার নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়। ৮৫ টাকার ডলার বেড়ে ১২৮ টাকা পর্যন্ত ওঠে। সরকার পরিবর্তনের পর নানা উদ্যোগের কারণে প্রবাসী আয় বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ছে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। ২০২২ সালের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে গেছে অনেক ব্যাংক।

২০২৪ সালের ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সপ্তাহে মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। তখন বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ