চল্লিশ মিনিটের রুদ্ধদ্বার বৈঠক। যেখানে বিদ্রোহী ১৩ ফুটবলারের সঙ্গে আলোচনায় ছিলেন নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলার, যাঁর সঙ্গে দ্বন্দ্বে আন্দোলন করেছিলেন সাবিনা খাতুনসহ ১৮ খেলোয়াড়। দুই পক্ষের সমঝোতা বৈঠকেও ছড়িয়েছে উত্তেজনা। এক পক্ষ দোষারোপ করেছে অন্য পক্ষকে। নানা ইস্যুতে বাগ্‌বিতণ্ডার পর শান্তির পতাকা ওড়ান ব্রিটিশ কোচ বাটলার। শিষ্যদের উদ্দেশে ৫ মিনিটের সমাপনী বক্তৃতায় সব ভুলে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। শিক্ষকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিদ্রোহীরা যোগ দিয়েছেন অনুশীলনে। 

এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৬৮ দিন পর দেশের নারী ফুটবলে বিদ্রোহের অবসান হলো। গতকাল জিম সেশনের পর আজ সকাল ছয়টায় ধানমন্ডির আবাহনী লিমিটেডের মাঠে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল, যেখানে কোচের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা বেশির ভাগ ফুটবলার উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বাটলারের অধীনে অনুশীলন করবেন বলে গতকাল সমকালকে নিশ্চিত করেছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদ্রোহী ফুটবলার, ‘কালকে (আজ) মাঠে আসেন। অনেক দিন পর আমরা অনুশীলন করতে যাচ্ছি।’

নেপালে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে কোচের সঙ্গে বৈরিতা সাবিনা-সানজিদাদের। শিরোপা জিতলেও সে রেশ কাটেনি। পুনরায় বাটলারকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর জানুয়ারির শেষ দিকে তাঁর অধীনে অনুশীলন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন ১৮ নারী ফুটবলার। কোচের বিরুদ্ধে বডি শেমিংসহ নানা অভিযোগ তোলেন তারা। কোচও সাত ফুটবলার থাকলে দায়িত্ব পালন করবেন না বলে হুমকি দেন। মাঝে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে অসন্তোস অনেক দূর গড়িয়েছে। 

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে নমনীয় হওয়া মেয়েরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে বলে দাবি করেন নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। সেই দাবির সত্যতা এখন মিলেছে। তবে অনুশীলনে ফেরার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কৃষ্ণা রানী সরকার-ঋতুপর্ণা চাকমাদের দাবি ছিল টেবিলে বসতে হবে দুই পক্ষকে। রোববার ক্যাম্পে যোগ দিলেও গতকাল বাটলারের অধীনে সকালে জিম সেশনে অংশ নেননি বিদ্রোহীরা। এরপরই দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক আয়োজন করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। যেখানে সহকারী কোচ থেকে শুরু করে বাফুফের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

অধিনায়ক সাবিনা, মাতসুশিমা সুমাইয়া, ঋতুপর্ণা ও মনিকা চাকমা ভুটানের লিগে খেলতে গিয়েছেন। বোন অসুস্থ হওয়ায় তহুরা খাতুন যোগ দেননি ক্যাম্পে। আন্দোলন করা শিউলি আজিম, মোসাম্মাৎ সাগরিকা, রুপনা চাকমা, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সানজিদা আক্তার, নিলুফা ইয়াসমিন, মাসুরা পারভীন, মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার সিনিয়র, কৃষ্ণা রানী, স্বর্ণা রানী মণ্ডল, সাথী বিশ্বাস ও নাসরিন আক্তার ছিলেন বৈঠকে। বাটলার-কৃষ্ণাদের আধা ঘণ্টার বেশি সময়ের আলোচনায় ছিল ঘটে যাওয়া নানা সংকটের বিষয়। বৈঠকে উপস্থিত বেশ কয়েকজন ফুটবলার সোমবার সমকালের কাছে কোচের সঙ্গে আলোচনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। 

বেশ কয়েকজন ফুটবলার ছাড়াও আন্দোলনের সমালোচনা করে মেয়েদের দোষারোপ করেন বাটলার। আবার মেয়েরাও তাদের সঙ্গে ‘অন্যায়’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণগুলোর যুক্তি তুলে ধরে। আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে যা হয়েছে, তা যেন পুনরায় না ঘটে সেই জন্য মিডিয়ার সহযোগিতা চেয়েছেন ফুটবলাররা। এক নারী ফুটবলার বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আর অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না। কোচ আমাদের বলেছেন সব ভুলে যেতে। আমরাও পুরোনো বিতর্ক বয়ে বেড়াতে চাচ্ছি না। এই জন্য আপনাদের (মিডিয়া) সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। নতুনভাবে শুরু করতে চাই।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ফ টবল ফ টবল র

এছাড়াও পড়ুন:

বাড়ির সামনেই বিএনপি নেতাকে কোপাল দুর্বৃত্তরা

পালাগানের আসর থেকে ফেরার সময় চাঁদপুরের মতলব উত্তরে বাড়ির সামনে দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হয়েছেন এক বিএনপি নেতা। শনিবার মধ্যরাতে উপজেলার এখলাছপুরে এ ঘটনা ঘটে। চাইনিজ কুড়ালের কোপে আহত হয়েছেন একই ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন বেপারী (৫২)। তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

ঘটনার সময় কবির বেপারীর সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী হেলাল প্রধানের ছেলে রাজীব প্রধান। রাজীবের ভাষ্য, ‘আমি আর কবির কাকা একসঙ্গে গজরা এলাকায় বৈশাখী পালাগানের অনুষ্ঠানে যাই। বাড়ি ফিরতে রাত আড়াইটার মতো বেজে যায়। বাড়িতে ঢোকার সময় ১৫-২০ জন লোক চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কবির কাকাকে এলোপাতাড়ি কোপায়। রড আর লাঠি দিয়াও পিটিয়েছে।’

তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। হামলাকারীদের প্রত্যেককেই চেনেন দাবি করে রাজীব বলেন, ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে।

এলাকাবাসী এ সময় মুখোশধারী এক হামলাকারীকে আটক করে। মুখোশ খোলার পর ওই ব্যক্তিকে পশ্চিম এখলাছপুরের আর্শাদ বেপারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশী বলেন, হামলাকারীদের হাতে ধারালো অস্ত্র থাকায় তারা এগিয়ে যেতে সাহস পাননি।

কবির হোসেন বেপারীর স্ত্রী বিউটি আক্তারের ভাষ্য, ‘আমার স্বামীর ডাক চিৎকারে গিয়া দেহি, বিল্লাল প্রধান আর রাসেল মল্লিকে তাঁরে মারতাছে। স্বামীরে বাঁচাইতে ওগো হাতে-পায়ে ধরলে রাসেল মল্লিক আমার ওপরেও হাত তোলে। বাকি সবাই দৌড়াইয়া পালাইয়া যায়। ওরা আমার স্বামীরে জানে মাইরা ফালাইতে চাইছিল।’
এদিকে এ হামলার প্রতিবাদে স্থানীয় জনগণ রোববার দুপুরে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। মতলব উত্তর থানার ওসি রবিউল হক বলেন, সংবাদ পেয়ে রাতেই তিনি ঘটনাস্থলে যান। জড়িত একজন আটক আছে। স্থানীয় একটি পুকুর দখলকে কেন্দ্র করে হামলার হয়েছে বলে তাঁর ধারণা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ