বাংলাদেশের নদীতে চীনের সহায়তা: ভালো হবে না মন্দ হবে?
Published: 8th, April 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনায় চীনা সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। নদী ব্যবস্থাপনাগত প্রযুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে চীনের অগ্রগতি সম্পর্কে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। চীনের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি দ্বারা উপকৃত হওয়ার প্রতি বাংলাদেশের উৎসাহ যুক্তিপূর্ণ।
বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনায় চীনা সহযোগিতার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের আগে আগে। সে সময় খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অধীনে চীন ১১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দিতে প্রস্তুত।
অনেকেই এই ঋণের সুযোগ নিয়ে প্রকল্প প্রণয়নে উৎসাহী হয়। সেই সূত্রে পাওয়ার চায়না নামক চীনা কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি আলোচনা শুরু হয়। সেই আলোচনার সূত্র ধরে এই মর্মে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় যে এই কোম্পানি বাংলাদেশের সব বড় নদ-নদীকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং যমুনা নদীকে অগ্রাধিকার দিয়ে ‘স্থায়িত্বশীল নদী ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি’ প্রণয়ন করবে।
তবে বিগত সরকার ভারতের কাছ থেকে তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্যা আদায়ে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য নদীবিষয়ক চীনা সহযোগিতার বিষয়টিকে ব্যবহারের চেষ্টা করেছিল। সেই সূত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পাওয়ার চায়নাকে যমুনা নদীর পরিবর্তে তিস্তা নদীর প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ করে।
সে অনুযায়ী পাওয়ার-চায়না ‘তিস্তা নদী সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ প্রণয়ন করে। পরে জানা যায় যে ভারত নিজেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এর ফলে তৎকালীন সরকার দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়।
চীনে অবস্থানকালে প্রধান উপদেষ্টা চীনা কোম্পানির মাধ্যমেই তিস্তাবিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, চীনের পানিসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি চীনের কাছে বাংলাদেশের নদ-নদীবিষয়ক ৫০ বছরের মহাপরিকল্পনা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনার দাবি রাখে। কারণ, বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনার জন্য বিদেশি সরকার কিংবা সংস্থা দ্বারা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের অতীত অভিজ্ঞতা তেমন আশাব্যঞ্জক নয়।
২.
পঞ্চাশের দশকে ক্রুগ কমিশনের সুপারিশক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে (আইইসিও) বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর ভিত্তিতে আইইসিও ১৯৬৪ সালে দুই খণ্ডের মাস্টারপ্ল্যান
প্রস্তুত করে।
এই মহাপরিকল্পনার সময়-প্রেক্ষিত ছিল ২০ বছর। কিন্তু মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে নদী ব্যবস্থাপনার যে ধারা বাংলাদেশে সূচিত হয়েছিল, প্রায় ৬০ বছর ধরে বাংলাদেশে মোটাদাগে সেই ধারাই অব্যাহত রয়েছে।
নদ-নদীর প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে আইইসিও যে পন্থার প্রচলন করে, তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয় ‘বাণিজ্যিক পন্থা’। বদ্বীপের জন্য এর সুনির্দিষ্ট রূপ হলো ‘বেষ্টনী পন্থা’।
এই পন্থার মূল লক্ষ্য হলো, প্লাবনভূমিকে নদীখাত থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। সেই লক্ষ্যে সারা দেশে অসংখ্য বেড়িবাঁধ, স্লুইসগেটসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। (সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি বইয়ে আমি এগুলো নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা উপস্থিত করেছি। বই দুটো হলো, বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন: বর্তমান ধারার সংকট এবং বিকল্প ধারার প্রস্তাব এবং ওয়াটার ডেভলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ: পাস্ট প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার)
খালি চোখেও আইইসিওর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলাফল স্পষ্ট; দেশের নদী ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। অসংখ্য নদী হারিয়ে গেছে, বাকিগুলোও মুমূর্ষু। একদিকে নদীখাতগুলো ভরাট করা হয়েছে, অন্যদিকে প্লাবন ভূমির অবক্ষয় সাধিত হয়েছে।
বহু নদীকে সম্পূর্ণ বেড়িবাঁধের অন্তর্গত করে বস্তুত মেরে ফেলা হয়েছে। নদী ব্যবস্থার এই পরিণতির একটি দিক হলো জলাবদ্ধতা, যা এখন বাংলাদেশের শহর-গ্রাম সর্বত্র ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে
বেষ্টনী পন্থার একটি চরম রূপ হলো পোল্ডার, যখন বেষ্টনী চতুর্মুখী হয়। আইইসিওর মাস্টারপ্ল্যানের আগেই পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশের উপকূলে পোল্ডার নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়।
এখন যেমন আমরা নদী ব্যবস্থাপনার বিষয়ে চীনের প্রতি আকর্ষিত হচ্ছি, আগে আকর্ষণ ছিল নেদারল্যান্ডসের প্রতি। সে দেশে পোল্ডার নির্মাণের মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশ থেকে ভূমি উদ্ধার করে বসতি স্থাপন করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের জন্য সমুদ্রগর্ভ থেকে ভূমি উদ্ধারের কোনো প্রয়োজন ছিল না। তা সত্ত্বেও নেদারল্যান্ডসের ‘পোল্ডার পন্থা’ বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। অথচ বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ড উভয়ই বদ্বীপে অবস্থিত হলেও এদের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি।
যেখানে বাংলাদেশের গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বার্ষিক প্রবাহের আনুমানিক পরিমাণ যথাক্রমে ৪০৪ ও ৬২৮ ঘনকিলোমিটার, সেখানে নেদারল্যান্ডসের মূল নদী রাইনের বার্ষিক প্রবাহের পরিমাণ হলো মাত্র ৭৫ ঘনকিলোমিটার। এ ছাড়া যেখানে বাংলাদেশের নদ-নদীর প্রবাহ চরম ঋতুভেদসম্পন্ন, সেখানে রাইন নদীর প্রবাহের কোনো ঋতুভেদ নেই। সর্বোপরি, বাংলাদেশের নদ-নদী প্রতিবছর প্রায় ১১৫ কোটি টন পলিবালু নিয়ে আসে, যেখানে রাইন নদীর এই পরিমাণ মাত্র ৩৪ লাখ টন।
বাংলাদশের নদী ব্যবস্থাপনার মূল করণীয় হলো, প্রবাহের ঋতুভেদ মোকাবিলা এবং পলিবালুর সুষ্ঠু বিতরণ নিশ্চিত করা। নেদারল্যান্ডসের জন্য এই দুই করণীয়র একটিও প্রাসঙ্গিক নয়।
এই অবিমৃশ্যকারিতার ফল হয়েছে যে পলিবালু পোল্ডারের অভ্যন্তরে পৌঁছাতে পারেনি। এর ফলে এগুলোর ভূমি-উচ্চতা বৃদ্ধির পরিবর্তে ক্রমে হ্রাস পেয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তা সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে চলে গেছে এবং আরও যাচ্ছে। অর্থাৎ বিদেশি পরামর্শে আমরা দেশের উপকূলকে নিমজ্জনের দিকে ঠেলে দিয়েছি।
৩.
চীনের বড় দুই নদী হলো দক্ষিণের ইয়াংশি এবং উত্তরের হোয়াংহো (পিত নদী)। ইয়াংশি নদীর বার্ষিক গড় প্রবাহের পরিমাণ (ডাটোং জরিপ স্টেশনে) আনুমানিক প্রতি সেকেন্ডে ২৭ হাজার ৫০০ বর্গমিটার (কিউমেক)। এদিক থেকে এই নদী আমাদের ব্রহ্মপুত্র নদের সমতুল্য। বাহাদুরাবাদে ব্রহ্মপুত্রের বার্ষিক গড় প্রবাহের পরিমাণ আনুমানিক ২২ হাজার কিউমেক।
তবে গঙ্গা-যমুনার যৌথ প্রবাহের তুলনায় ইয়াংশি নদীর প্রবাহ অনেক কম। ইয়াংশি নদীর পলিবালুর পরিমাণ বাংলাদেশের গঙ্গা-যমুনা বাহিত পলিবালুর অর্ধেকের কম। ফলে ইয়াংশি নদীর পলিবালু ব্যবস্থাপনার সমস্যা বাংলাদেশের সমতুল্য নয়।
ইয়াংশি নদীর প্রবাহের ঋতুভেদ থাকলেও তা বাংলাদেশের মতো এত চরম নয় এবং নদীতীরের মাটি-গঠন বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন। ফলে এই নদীর পাড় ভাঙানের সমস্যা বাংলাদেশের মতো তীব্র নয়। ইয়াংশি বাংলাদেশের যমুনা কিংবা তিস্তা নদীর মতো বেনুনী নদী নয়।
চীন ইয়াংশি ও তার উপনদীর ওপর বহু বৃহদাকার বাঁধ নির্মাণ করেছে, যার অন্যতম হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ‘তিন গিরিখাত বাঁধ’। এসব বাঁধ নির্মাণের ফলে ইয়াংশি নদীর বাঁধপরবর্তী অংশে পলিবালুর পরিমাণ মারাত্মকভাবে (কোনো কোনো জরিপ অনুসারে ৯৩%) হ্রাস পেয়েছে।
এর ফলে ভাটিতে ক্ষয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মোহনা ও বদ্বীপ অবক্ষয়ের সম্মুখীন হয়েছে। ইয়াংশি নদীর ওপর আরোপিত বিভিন্ন চ্যানেলাইজেশন প্রকল্প এই নদীর সঙ্গে সংযুক্ত বহু হ্রদের বিপর্যয় ঘটিয়েছে।
উত্তরের হোয়াংহো নদীর প্রবাহের বার্ষিক গড় পরিমাণ মাত্র ২ হাজার ১১০ কিউমেক, যা আমাদের মেঘনার অর্ধেকের কম। অতীতে এই নদী প্রায় ১৬০ কোটি টন পলিবালু বহন করত।
চীন এই নদীর দুই পাড়ে (বিশেষত সমতল এলাকায়) ৪ হাজার ৮৫০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করেছে; যার ফলে পলিবালু পতিত হয়ে এই নদীখাতের উচ্চতা পার্শ্ববর্তী এলাকার কোথাও কোথাও প্রায় ৩০ ফুট ওপরে উঠে গিয়েছে। ফলে হোয়াংহো এখন ‘আকাশস্থ নদী’ বলে অভিহিত হচ্ছে। পার্বত্য এলাকায় এই নদীর ওপর প্রায় ২০টি বড় ধরনের বাঁধ নির্মাণের ফলে এই নদীর প্রবাহ বেশির ভাগ সময় আর সমুদ্রে পৌঁছায় না, যার ফলে নদীর মোহনা ও বদ্বীপ অবক্ষয়ের সম্মুখীন হয়েছে।
লক্ষণীয়, ইয়াংশি ও হোয়াংহো নদীর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৩ হাজার ৯১৫ মাইল এবং ৩ হাজার ৩৯৫ মাইল। উভয় নদীর পুরোটাই চীনের সীমানার অভ্যন্তরে। ফলে চীন যেভাবে তার নদ-নদীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, বাংলাদেশের পক্ষে তা মোটেও সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের নদীপ্রবাহের প্রায় ৯৩ শতাংশ সীমান্তের বাইরে থেকে আসে। তা ছাড়া ইয়াংশি ও হোয়াংহো নদীর যথাক্রমে মাত্র ২৫ ও ১৪ শতাংশ সমতল এলাকায় প্রবাহিত হয়, বাকিটা পার্বত্য এলাকায়। ফলে চীনের পক্ষে সম্ভব হয়েছে পার্বত্য এলাকায় বহু বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এসব নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা। বাংলাদেশের জন্য সে ধরনের কোনো সুযোগও নেই।
৪.
নেদারল্যান্ডসের মতো চীনের নদ-নদীর পরিস্থিতিও বাংলাদেশের পরিস্থিতি থেকে মৌলিকভাবে ভিন্ন। নদ-নদীর প্রতি চীন অত্যন্ত আগ্রাসী বাণিজ্যিক পন্থা অনুসরণ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে তার পরিণতি ভালো হয়নি। এ নিয়ে সেই দেশে সমালোচনা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
বাংলাদেশের তিস্তা নদীর জন্য পাওয়ার চায়না যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, তাতেও আমরা আগ্রাসী বাণিজ্যিক পন্থার প্রতিফলন দেখি। এই পরিকল্পনায় তিস্তার মতো একটি বেনুনী নদীর গড় প্রস্থ একলাফে আনুমানিক ৩ হাজার মিটার থেকে ৮১৬ মিটারে হ্রাসের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তার স্থায়িত্বশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ।
পাওয়ার চায়না অথবা পাউবো এই প্রকল্পের কোনো ‘সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন’ (ফিজিবিলিটি রিপোর্ট) জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি। এই প্রয়োজনীয় তথ্য ছাড়া পাওয়ার চায়নার তিস্তা পরিকল্পনার ওপর সাম্প্রতিক গণশুনানির কী উদ্দেশ্য হতে পারে, তা পরিষ্কার নয়।
সব মিলিয়ে বলতে হচ্ছে যে বাংলাদেশের নদ–নদীর পরিস্থিতি ভিন্ন। সে জন্য প্রয়োজন ভিন্ন দর্শন ও পন্থা। বাংলাদেশের জন্য উপযোগী হলো, নদ-নদীর প্রতি প্রকৃতিসম্মত ও উন্মুক্ত পন্থা এবং দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে পাড় স্থিতিশীলকরণ।
অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে বিদেশিদের পক্ষে বাংলাদেশের এই বিশেষ পরিস্থিতি ও প্রয়োজন হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন। বস্তুত, অতীতে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তিস্তাবিষয়ক পাওয়ার চায়না প্রণীত প্রকল্প ইঙ্গিত দেয় যে বাংলাদেশের নদ-নদী ব্যবস্থাপনায় আবার কোনো বিদেশি কোম্পানিনির্ভর প্রয়াস যে সফল হবে, সে বিষয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন।
সর্বোপরি, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশের নদী, জ্বালানি, শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ে পরিকল্পনার জন্য বিদেশিদের শরণাপন্ন হওয়াটা দুঃখের বিষয়। অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনে বাংলাদেশ অনেকখানি অগ্রসর হয়েছে। চিন্তা ও পরিকল্পনার বিষয়ে আমরা কবে স্বনির্ভর হব?
ড. নজরুল ইসলাম জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণার সাবেক প্রধান এবং এশীয় প্রবৃদ্ধি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ র নদ নদ প রব হ র প নদ নদ র প নদ র প র পর স থ ত পল ব ল র র পর ম ণ প রকল প প রণয়ন এল ক য় ণ কর ছ প রস ত ত হয় ছ র জন য হয় ছ ল র ওপর ব ষয়ক
এছাড়াও পড়ুন:
কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বাজেট বরাদ্দে অগ্রাধিকার দিতে হবে
বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে দারিদ্র নিরসন, কর্মসংস্থান তৈরি, নারী ও শিশু উন্নয়ন, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় সহায়ক কার্যক্রমে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ। আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছর বাজেট প্রণয়ন নিয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উদ্দেশে বুধবার এক পরিপত্র জারি করে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়।
পরিপত্রে বলা হয়, বাজেটে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারের কৌশলগত উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হয়, এমন সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের প্রাক্কলন এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেন তা মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যেই হয়। এছাড়া সাধারণভাবে বাজেটে কোনো প্রকার থোক বরাদ্দ প্রস্তাব করা যাবে না।
এতে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতাভুক্ত সকল মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে বাজেট প্রণয়নের দ্বিতীয় পর্যায়ে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বিস্তারিত বাজেট প্রাক্কলন এবং একইসঙ্গে পরবর্তী ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছরের প্রক্ষেপণ প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বাজেট প্রস্তাব আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাতে বলা হয়।
পরিপত্রে বাজেট প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে চারটি নীতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এর অন্যতম হচ্ছে– মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোতে বর্ণিত কৌশলগত উদ্দেশ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, ‘রি-স্ট্রাটেজিসিং দ্য ইকোনমি অ্যান্ড মবিলাইজিং রিসোর্সেস ফর ইক্যুয়িটেবল অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ক টাস্কফোর্স রিপোর্ট এবং মন্ত্রণালয় বা বিভাগের নিজস্ব নীতিমালায় অন্তর্ভূক্ত সরকারের নীতি ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা।
এছাড়া সরকারের মৌলিক নীতি নির্ধারণী দলিলগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দারিদ্র নিরসন, কর্মসংস্থান তৈরি, নারী ও শিশু উন্নয়ন, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় সহায়ক কার্যক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিক বরাদ্দ দিতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় বাড়ার সামঞ্জস্য রাখা, যাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
এতে আরও বলা হয়, উন্নয়ন ব্যয়ের বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্তৃক বৈদেশিক ঋণ বা অনুদানের যে প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ তৈরি করেছে প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে।