ওয়াক্ফ বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল ভারত
Published: 8th, April 2025 GMT
ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা ও উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত মুসলিম ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল পাসের প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক নেতার বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বিজেপির ওই নেতা সংগঠনটির সংখ্যালঘু মোর্চার মণিপুর সভাপতি।
সোমবার জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় শাসক জোটের সদস্যরা তুমুল বিক্ষোভ দেখান এ নিয়ে। ন্যাশনাল কনফারেন্সের (এনসি) পক্ষ থেকে আইনের বিরোধিতা করে এক প্রস্তাব গ্রহণ করার কথা জানানো হলে স্পিকার আবদুল রহিম রাথের বলেন, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে এখন মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব নয়। স্পিকারের এই রুলিংয়ের পর সভায় স্লোগান শুরু হয়। বিরোধী নেতা বিজেপির সুনীল শর্মা বলেন, পার্লামেন্ট বিল পাস করেছে। রাষ্ট্রপতি বিলে সই করার পর তা আইন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। এই অবস্থায় বিধানসভার কোনো এখতিয়ারই নেই ওই আইন নিয়ে আলোচনা করার, প্রস্তাব গ্রহণের।
ভারতে যখন কোনো ব্যক্তি মুসলিম আইনের আওতায় ধর্মীয় বা দাতব্য কারণে তার সম্পত্তি দান করেন, তখন সেটাকেই বলে ওয়াক্ফ সম্পত্তি। এর মধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, আশ্রয়কেন্দ্র বা শুধু জমি– সব কিছুই থাকতে পারে। যে কাজের জন্য সেটি দান করা হয়েছে, সেটি ছাড়া অন্য কোনো কাজে ওয়াক্ফ সম্পত্তি ব্যবহার করা যায় না এবং এটি কাউকে বিক্রি বা হাতবদলও করা যায় না। ভারতের পার্লামেন্ট গত সপ্তাহে উত্তপ্ত তর্কবিতর্কের পর যে মুসলিম ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিলটি পাস করায়, দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা শত শত কোটি ডলার মূল্যের যাবতীয় ওয়াক্ফ সম্পত্তি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হবে, তার পুরো পদ্ধতিটাই এখন বদলে যেতে চলেছে। তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।
সোমবার এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানায়, রোববার সন্ধ্যায় বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার মণিপুর সভাপতি আসকার আলীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। বিতর্কিত ওয়াক্ফ সংশোধনী আইনকে সমর্থন করার অভিযোগে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার এই ঘটনা ঘটে। রোববার রাজ্যের বিভিন্ন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। থৌবাল জেলার লিলং এলাকায় ১০২ নম্বর জাতীয় সড়কে আয়োজিত এক সমাবেশে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত থাকলেও পরে আধাসামরিক বাহিনী এবং অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর পাহারায় আলিয়া মাদ্রাসা এলাকা দিয়ে লিলং হাওরেবিতে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। লিলং হচ্ছে সমগ্র রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার এলাকা।
গতকাল স্থানীয় সময় সকাল থেকেই বিভিন্ন মুসলিম এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে এই ধরনের পদক্ষেপকে মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের মনোবল ভেঙে ফেলা এবং যে কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ ও সমাবেশ করা থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন।
কিছু এলাকা থেকে নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছোটখাটো সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। থৌবালের ইরোং চেসাবাতে সোমবার নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মূলত নিরাপত্তা বাহিনী মুসলিমদের একটি সমাবেশকে জোরপূর্বক বন্ধ করে দিতে চাইলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
পিটিআইর খবরে বলা হয়েছে, ভারতে ওয়াক্ফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একের পর এক মামলা রুজু হলেও সুপ্রিম কোর্ট জরুরি ভিত্তিতে তা শুনতে অস্বীকার করেন। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার এজলাসে মামলার দ্রুত শুনানির অনুরোধ জানান আইনজীবী কপিল সিবাল।
জামায়াত-ই-উলেমা হিন্দের সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানির রুজু করা মামলার আইনজীবী কপিল সিবাল প্রধান বিচারপতিকে বলেন, এই আইনের বিরোধিতা করে বহু মামলা দায়ের হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান বিচারপতি যেন দ্রুত তা লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেন ও সওয়াল শোনেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেই থানায় ডেকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হজ ফ্লাইট শুরু
চার শতাধিক যাত্রী নিয়ে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে চলতি বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট। এ বছর হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৮৭ হাজার ১০০ জন।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাত ২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশি হজযাত্রী বহনকারী প্রথম বিমানটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জেদ্দার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাচ্ছেন ৫ হাজার ২০০ জন; আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছেন ৮১ হাজার ৯০০ জন। এরইমধ্যে ৭৩ শতাংশ যাত্রীর ভিসা হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের (১৪৪৬ হিজরি) হজ ৫ জুন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
অন্যান্যবারের মত এবারো সব হজযাত্রীর সৌদি আরব অংশের ইমিগ্রেশন হচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দরে। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত ফ্লাইট চলবে।
এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১১৮টি, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স ৮০টি, আর ফ্লাইনাস ৩৪টি ফ্লাইট চালাবে।
এরআগে সোমবার হজযাত্রীদের সেবা সহজীকরণের জন্য প্রস্তুতকৃত মোবাইল অ্যাপ ‘লাব্বাইক’ উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, “হজযাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে ধর্ম-কর্ম পালন করতে পারেন সেজন্য এই অ্যাপ বিরাট ভূমিকা রাখবে।”
তিনি জানান, ধর্ম পালনে সহায়ক হওয়ায় এবং স্বাস্থ্য সেবাসহ নানা ফিচার থাকায় এই অ্যাপ হাজীদের একাগ্রচিত্তে হজ পালনে মস্তবড় অবদান রাখবে।
চলতি বছর পবিত্র হজব্রত পালনের শুরু থেকে হজযাত্রীরা এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারলেও আগামী বছর থেকে যেন মানুষ হজে যাওয়ার চিন্তাভাবনার পর্যায় থেকে এই অ্যাপ ব্যবহার করে হজযাত্রাকে সহজ করতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ বছরও বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়া যাত্রীরা ‘মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের’ অধীনে সেবা পাবেন বলে জানিয়েছিলেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ার।
সৌদি ভিশন ২০৩০-এর অন্যতম কর্মসূচি ‘পিলগ্রিম এক্সপেরিয়েন্স প্রোগ্রামের’ অংশ হিসেবে মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ বাস্তবায়ন করছে সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এই উদ্যোগে বাংলাদেশ, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক ও আইভরি কোস্ট- এই ৭টি দেশের ১১টি বিমানবন্দরে ডেডিকেটেড লাউঞ্জ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের লক্ষ্য সুবিধাভোগী দেশগুলো থেকে সৌদি আরবে হজযাত্রীদের জন্য উচ্চমানের পরিবহন পরিষেবা দেওয়া।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮জন হজযাত্রী নেওয়ার কোটা নির্ধারণ করে দেয় সৌদি আরব। তবে আগের বছরের মত এবারও প্রায় ৩৩ শতাংশ কোটা পূরণ হয়নি। ২০২৪ সালে হজে যান ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। এবার তা কিছুটা বেড়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা