আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ করে আগামী জুন–জুলাইয়ের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করার চিন্তা করছে সাংবিধানিক এই সংস্থা।

সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব ইসির। নির্বাচনের দিনক্ষণ তারাই ঠিক করে। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগামী সংসদ নির্বাচন কবে হবে—তা মূলত নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার বলেছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

ইসি সূত্র জানায়, ডিসেম্বরে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনায় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন–তারিখ ঠিক করা না হলেও প্রস্তুতিমূলক কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ইসি মনে করছে, জুনের মধ্যে সংস্কার প্রক্রিয়া ও জাতীয় ঐকমত্য গঠনের প্রক্রিয়া একটি রূপ পাবে। তখন সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা সহজ হবে।

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ডিসেম্বরকে টার্গেট (লক্ষ্য) করেই তাঁরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করতে হবে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, মোটাদাগে নির্বাচনের বড় প্রস্তুতির মধ্যে আছে—ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন দেওয়ার মতো কাজগুলো। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রস্তুতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে শেষ করতে হয়। এ ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর কিছু প্রস্তুতি নিতে হয় তফসিল ঘোষণার পর। এসব প্রস্তুতির পাশাপাশি নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। তবে সে সংলাপের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি।

ইসির নিজস্ব প্রস্তুতির বাইরে নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনপ্রশসানের ভূমিকা। নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ এখনো সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ইসির পক্ষ থেকে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে পুলিশ কী পরিমাণ জনবল নিয়োগ করতে পারবে সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। পুলিশ আশা করছে, ডিসেম্বরে ভোট হলে তাদের সব জনবল পুরোপুরি সক্রিয়ভাবে কাজে লাগানো যাবে। ইসিও আশা করছে, ডিসেম্বরে ভোট হলে তার আগে পুলিশ ও প্রশাসনে পুরোপুরি স্থিতিশীল অবস্থা চলে আসবে।

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ডিসেম্বরকে টার্গেট (লক্ষ্য) করেই তাঁরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করতে হবে। এ জন্য তাঁরা ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছেন। একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে, আগামী জুন–জুলাই নাগাদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা হতে পারে।

ইসি মনে করছে, জুনের মধ্যে সংস্কার প্রক্রিয়া ও জাতীয় ঐকমত্য গঠনের প্রক্রিয়া একটি রূপ পাবে। তখন সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা সহজ হবে।ভোটার তালিকা ও সীমানা নির্ধারণ

নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতিমূলক কাজ হলো ভোটার তালিকা তৈরি ও সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা। ভোটার তালিকা তৈরি করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, ইসি প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চের মধ্যে এ তালিকা হালনাগাদ করে। এ ছাড়া প্রয়োজনে যেকোনো সময় তালিকা সংশোধন করতে পারে ইসি।

২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা (২০২৪ সালের হালনাগাদ তথ্য নিয়ে) প্রকাশ করা হয়েছে। চলতি বছরের হালনাগাদ কার্যক্রমও চলছে। এর অংশ হিসেবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ভোটার নিবন্ধনের কাজও শেষ পর্যায়ে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমে ৬০ লাখের বেশি ভোটারযোগ্য নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০ লাখের বেশি মৃত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী জুন নাগাদ ভোটার তালিকার হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করা যাবে বলে আশা করছে ইসি।

তবে আইন অনুযায়ী হালনাগাদ তথ্য ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে আগামী বছরের ২ মার্চ। এর আগে নির্বাচন হলে ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করতে আইনে সংশোধনী আনার প্রয়োজন হতে পারে।

২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা (২০২৪ সালের হালনাগাদ তথ্য নিয়ে) প্রকাশ করা হয়েছে। চলতি বছরের হালনাগাদ কার্যক্রমও চলছে। এর অংশ হিসেবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করাও ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করা আছে। আইন অনুযায়ী কোনো আদমশুমারির পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং ইসি চাইলে যেকোনো জাতীয় নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে পারে।

ইসি সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা জরুরি বলে মনে করছে ইসি। কারণ, ইতিমধ্যে একটি আদমশুমারি হয়েছে, এ ছাড়া বেশ কিছু আসন নিয়ে জটিলতা আছে। সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য একটু লম্বা সময় প্রয়োজন হয়। সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত বিদ্যমান আইনে একটি ধারায় ছাপার ভুল (প্রিন্টিং মিসটেক) আছে। যে কারণে চাইলেও ইসি বর্তমান আইনে সীমানায় বড় পরিবর্তন আনতে পারবে না। তাই তারা ছাপার ভুলটি ঠিক করে আইনে সংশোধনী আনার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এটি অনুমোদন পায়নি।

অন্যদিকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইনের একটি খসড়া প্রস্তাব করেছে। সেটি নিয়েও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এ অবস্থায় সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি আটকে আছে।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারের তরফ থেকে আইন সংশোধন হয়ে এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা না হলে বিদ্যমান সীমানায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে কমিশন।

আইনবিধি সংস্কার

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ বেশ কিছু আইনবিধিতে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে। গত ১৯ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য বাছাইকৃত’ নয়টি প্রস্তাব ইসির কাছে পাঠিয়েছে। সেগুলো হলো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা সংশোধন, হলফনামার খসড়া, ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ, পোস্টাল ব্যালটের পরীক্ষা–নিরীক্ষা এবং রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করা। এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে কত সময় লাগতে পারে এবং এতে কোনো টাকা খরচ হবে কি না, তা জানাতে বলা হয়েছে।

আরপিও, আচরণবিধিমালা, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম নীতিমালাসহ কয়েকটি বিধিমালা সংশোধনের জন্য নিজেদের মতো করে উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। এ ছাড়া সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের প্রস্তাবগুলোও সরকারের কাছে পাঠাবে ইসি।

সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিমালার খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে ইসির সংশ্লিষ্ট কমিটি। এটি অনুমোদনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সভায় তোলা হবে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অধিকাংশ সুপারিশ প্রস্তাবিত আচরণবিধিমালায় যুক্ত করা হয়েছে বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছে ইসি।

সংস্কার কমিশন যেসব বিষয়ে সুপারিশ করেছে, সেসব বিষয়ে ইসি নিজেরাও প্রস্তাব তৈরি করছে। এতে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হয় কি না, সে প্রশ্ন সামনে এসেছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি সাংঘর্ষিক হবে না। ইসি একটি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য, ভালো নির্বাচন করার জন্য সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। ভালো নির্বাচন করার জন্য তাঁদের কিছু বিষয় আছে, তাঁরা সেগুলো তুলে ধরবেন। আইনবিধি সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু বিষয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ওপর নির্ভর করবে।

নির্বাচনব্যবস্থা–সংক্রান্ত সংস্কারের বেশির ভাগ সুপারিশ বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না। এগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমেই করা সম্ভব। ইসি চাইলে নিজেদের চিন্তা বা প্রস্তাব সরকারকে দিতে পারে।বদিউল আলম মজুমদার, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও অন্যান্য

সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিয়ে থাকে ইসি। ইতিমধ্যে নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ইসি। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আগামী জুলাই–আগস্টের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শেষ করতে চায় ইসি।

ভোটকেন্দ্র স্থাপন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সাধারণত বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোই ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ জন্য একটি নীতিমালা আছে। ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা সংশোধনে ইসি কাজ করছে। ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করতে হয়।

ইসি সূত্র জানায়, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি হলো প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করা। ইতিমধ্যে ভোটের জন্য বরাদ্দ চেয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ঢাকনা, ছবিসহ ভোটার তালিকা, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, কয়েক ধরনের সিল, স্ট্যাম্প প্যাড ও কালিসহ অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ব্যালট পেপারের কাগজ সাধারণত নেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে। ভোটের বেশ আগেভাগেই তাদের কাছে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। আর প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পেপার ছাপা হয় সরকারি ছাপাখানায়। এর বাইরে অন্য সামগ্রীর বেশ কিছু কিনতে হয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। এ কারণে কিছুটা লম্বা সময় প্রয়োজন হয় কেনাকাটায়।

এ ছাড়া রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় ভোটের তফসিলের সময়। সাধারণত জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। আর প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের। এটি চূড়ান্ত করা হয় তফসিল ঘোষণার পর। এরপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাঁদের।

বিষয়টি সাংঘর্ষিক হবে না। ইসি একটি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য, ভালো নির্বাচন করার জন্য সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত।নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম

ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি করে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনী। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা থাকেন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে নির্দেশনা দিয়ে থাকে ইসি।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ছিলেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি এখন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য। বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা–সংক্রান্ত সংস্কারের বেশির ভাগ সুপারিশ বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না। এগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমেই করা সম্ভব। ইসি চাইলে নিজেদের চিন্তা বা প্রস্তাব সরকারকে দিতে পারে। ঐকমত্য কমিশনের কাছে ইসি যেসব বিষয় উত্থাপন করেছে, সেগুলোও বিবেচনা করা হচ্ছে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সবাই একই লক্ষ্যে কাজ করছে, সেটি হলো গণতান্ত্রিক উত্তরণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার বাস্তবায়ন। গণতান্ত্রিক উত্তরণে যত দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তত মঙ্গল। তিনি আশা করেন, দ্রুত সংস্কারপ্রক্রিয়া শেষ হবে এবং সবাই চাইলে দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ব চনব যবস থ কর মকর ত দ র র প রথম আল ক জ ত য় ঐকমত য র প রস ত ব ব প রস ত ত ভ টক ন দ র র প রস ত ত ড স ম বর গতক ল স সরক র র শ ষ করত ব যবস থ স ধ রণত র জন য ন র জন শ ষ কর অন য য় এ জন য অবস থ ন আইন

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনী ট্রেনের ট্র্যাক ঠিক করতে যা করা দরকার

এ মুহূর্তে দেশে কোনো রাজনৈতিক সংকট নেই; যা দেখছি তা অতীতের জঞ্জাল পরিষ্কার করে ভবিষ্যৎ যাত্রার চ্যালেঞ্জ। নিশানা: একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। এই সাধারণ ঐকমত্য (যদি তা ঠিক ধরে নেই) ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের একই সঙ্গে কারণ এবং ফলাফল।

তা সত্ত্বেও অতি সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, মরিয়া হওয়া পতিত শক্তির ভয়াবহ অপতথ্যের প্রচারাভিযানের প্রভাবে অংশীজনের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস। যেন চলমান সংস্কার পূর্ণ না হলে নির্বাচন হবেই না; আবার দ্রুত নির্বাচন হলে সংস্কারপ্রক্রিয়া মাঠেই মারা যাবে। একেই বলে উভয়সংকট!

এ অবস্থায় প্রতিনিয়ত কথার বাহাসে একটা প্রশ্ন বেমালুম এড়িয়ে যাচ্ছি আমরা—জুলাই-আগস্ট বিপ্লব না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের আলোচনাটি পর্যন্ত সম্ভব হতো কি, সর্বজনাব...?

জনগণের নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে, এ নিয়ে তো তর্কের অবকাশ নেই; সেই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে, ফ্যাসিবাদী শাসনে পচে যাওয়া প্রতিষ্ঠান ঠিকঠাক করাটাও তো জরুরি ছিল। এতেও হয়তো কারও দ্বিমত নেই, তবে অবশ্যই পতিত আওয়ামী লীগ ও তার দোসরেরা ছাড়া।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার যেমন বলছে না নির্বাচন দেওয়া হবে না, বিএনপিসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোও তো নীতিগতভাবে সংস্কারের বিরোধিতা করছে না। শুধু কিছু রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর, সামাজিক মাধ্যমের অতিকথন এবং আড্ডার উর্বর আলোচনা চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সমাজে ধূম্রজাল সৃষ্টি এবং সুশীল সমাজকে বিভ্রান্ত ও রাজনৈতিক মনকে উতলা করতে পেরেছে।

দেখুন, এই যে সন্দেহের রাজনৈতিক আবহ, অস্বীকার করা যাবে না, এর একটি ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা (লিগ্যাসি) আছে। আসলে ক্ষমতাসীনদের প্রতিশ্রুতি ভাঙার বেদনায় আহত এক জাতি আমরা। রাজনীতিকদের অনেকেই কেন জানি যৌক্তিক ও দূরদর্শী; কিন্তু জনসেবার সরল পথ অনুসরণ করতে দ্বিধান্বিত থাকেন। হতে পারে পুরোনো মানসিকতা অথবা নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে কিছুটা হীনম্মন্যতা থেকে, আন্দোলন-সংগ্রাম ও রাজনৈতিক দর–কষাকষির জায়গায় আমরা আলোচনার টেবিলে নিজেদের শক্তিমত্তা খুব একটা দেখাতে পেরেছি বলে মনে পড়ছে না।

যখনই সংলাপে বসেছি, তখন ফলাফল শূন্যই হয়েছে বেশি। যে কারণে ২০২৪-এর পর্যন্ত নানা সময়ে ঘটেছে সহিংস পরিবর্তন এবং ১৯৯৫,২০০৬, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ব্যর্থ সংলাপ।

রাজনৈতিক ময়দান হোক আর আলোচনার টেবিল হোক, বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তরণের উদ্যোগ সফল পরিণতি না পাওয়ার অন্যতম সাধারণ কারণ একটি ন্যূনতম রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং গ্রহণযোগ্য চুক্তিতে পৌঁছার ব্যর্থতা। সুতরাং কার্যকর সংস্কার ও প্রকৃত সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হলে সেটাই করতে হবে আজ, যা অতীতে সম্ভব হয়নি এবং সেটিই হবে এক নতুন দৃষ্টান্ত।

রাজনৈতিক ময়দান হোক আর আলোচনার টেবিল হোক, বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তরণের উদ্যোগ সফল পরিণতি না পাওয়ার অন্যতম সাধারণ কারণ একটি ন্যূনতম রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং গ্রহণযোগ্য চুক্তিতে পৌঁছার ব্যর্থতা। সুতরাং কার্যকর সংস্কার ও প্রকৃত সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হলে সেটাই করতে হবে আজ, যা অতীতে সম্ভব হয়নি এবং সেটিই হবে এক নতুন দৃষ্টান্ত। যা মানুষ সোজাসাপটা ক্রেইগকে বুঝবে এবং বিশ্বাস করতে পারবে। অতীতে না পারা সেই রাজনৈতিক চুক্তিকেই এবার সফল করতে হবে। এবং সে জন্য দরকার হবে খোলামনের জাতীয় সংলাপ।

কেন, ভাই? সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্টের ওপর তাদের মতামত তো দিয়েই দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। ঠিক, কিন্তু ওই ফিডব্যাক মূলত একপক্ষীয় প্রতিক্রিয়া, সাংকেতিক ভাষায় লিখিত রিপোর্টের বক্তব্যের মতোই। অংশীজনের চিন্তার দূরত্বও জাতির জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়।

এখনকার বাস্তবতায় একটি সত্যিকারের দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় এবং মুখোমুখি প্রাণবন্ত আলোচনা ব্যতীত কমিশনগুলোর সুপারিশ এবং অংশীজনের সুচিন্তিত মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্যের দলিল প্রস্তুত করা প্রায় অসম্ভব। তাই অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার ও অবশ্যম্ভাবী নির্বাচন নিয়ে শতধাবিভক্তি বা জাতীয় হতাশা তৈরির আগেই একটি সর্বজনীন অংশীজনের সংলাপ আয়োজন করা যেতে পারে ৷

আরও পড়ুনবিএনপি ও এনসিপির মধ্যে কেন এই বাক্‌যুদ্ধ ১১ ঘণ্টা আগে

সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত বড় বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন বা কিছু কিছু দেশে বিপ্লবোত্তর জাতীয় কনভেনশনের আলোকে একটি জাতীয় সম্মেলনের উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। কেউ বলতে পারেন, ওরকম কোনো আয়োজন না করলেই বা ক্ষতি কী? এর উত্তর হচ্ছে: তাতে শতাব্দীর অনন্য সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে, দেশ থেকে যেতে পারে নেতৃস্থানীয়দের আত্মম্ভরিতায় ভরা হাসিনা আমলের সংস্কৃতির বৃত্তেই।

আমরা যদি জাতীয় সংলাপ ও সমঝোতার পথ বেছে নিই, সেখানে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন অধিবেশনে তর্ক-বিতর্ক হতে পারে প্রাসঙ্গিক জাতীয় ইস্যুগুলো নিয়ে। সেই সংলাপের ভিত্তি হতে পারে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের অলিখিত ঘোষণাপত্র, যা রচিত হতে পারে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামের উদ্দেশ্য ও জন-আকাঙ্ক্ষার আলোকে।
সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণগুলো সেখানে ভালোভাবে উপস্থাপিত হতে পারবে। রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের প্রতিনিধিদের দ্বারা ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রণীত একটি সামাজিক চুক্তির দলিলে সই করা যেতে পারে শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলনে।

যেটা হতে পারে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার সনদ, যে দলিল জাতি হিসেবে আমাদের সভ্যতা ও অধিকতর যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারে। এতে করে সংস্কার এবং জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন নিয়ে রাজনৈতিক মালিকানায় কোনো ঘাটতি থাকবে না। রাজনৈতিক নেতৃত্বও এই এক্সারসাইজ করে সমৃদ্ধ হতে পারে।

এরপর অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আর কোনো বাধাই থাকে না। তবে ন্যায় ও নৈতিকতার স্বার্থে বলে রাখি, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্তে ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক বা গণতন্ত্র হত্যাকারী দল ও গোষ্ঠীর গণবিরোধী ও দেশবিরোধী রাজনীতির কোনো বৈধতা নেই।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষায় যে ‘নির্বাচনী ট্রেন’ ইতিমধ্যে চালু হয়েছে এবং চলতে থাকবে, তাকে সঠিকভাবে গন্তব্যের দিকে পৌঁছুতে সাহায্য করতে পারে মসৃণ রাজনৈতিক ট্র্যাক।

একটি সফল জাতীয় সংলাপ সেই পথ এবং যাত্রাকে আরও নির্বিঘ্ন করতে পারে। আমাদের সম্মিলিত ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব নেওয়া এবং সে অনুযায়ী কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া, এখন জীবিত প্রজন্মের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

খাজা মাঈন উদ্দিন সাংবাদিক

( লেখকের মতামত নিজস্ব)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দ্রুত পথরেখা ঘোষণা করা হোক
  • সংস্কারের প্রথম পর্যায়ের সংলাপ শেষ হবে এক মাসে: আলী রীয়াজ
  • ঐকমত্য যেন প্রকৃতপক্ষেই জাতীয় হয়ে ওঠে: আলী রীয়াজ
  • সংস্কারের প্রথম পর্যায়ের সংলাপ সম্পন্ন হবে মে মাসে: আলী রীয়াজ
  • ঐকমত্যের সংলাপ ফের শুরু আজ
  • সংস্কার নিয়ে এবি পার্টির সঙ্গে আগামীকাল আলোচনায় বসবে ঐকমত্য কমিশন
  • নির্বাচনী ট্রেনের ট্র্যাক ঠিক করতে যা করা দরকার