তিন মাসে ২ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য
Published: 8th, April 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে। গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা আহরণ হয়েছে। অর্থাৎ বাকি প্রায় তিন মাসে ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে। একই সঙ্গে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সংস্থাটিকে অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে গতকাল সোমবার এনবিআর কার্যালয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যানসহ আলাদাভাবে কাস্টমস, আয়কর ও ভ্যাট অনুবিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেন সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বৈঠকে দেশের বর্তমান বাস্তবতায় তিন মাসে ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা আদায় করা ‘অসম্ভব’ বলে জানিয়ে এনবিআরের পক্ষ থেকে লক্ষ্যমাত্রা কমানোর প্রস্তাব করা হলেও আইএমএফ প্রতিনিধি দল তা নাকচ করে দিয়েছে। এনবিআরের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এসব বিষয়ে আবার বুধবার এনবিআরের তিন অনুবিভাগের সঙ্গে বৈঠকে বসবে প্রতিনিধি দল। শর্ত পূরণ ছাড়া এবং তাদের সঙ্গে সঠিকভাবে দরকষাকষি না করা গেলে ঋণের বাকি অর্থ ছাড় বন্ধ করে দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই এনবিআরের পক্ষ থেকে শর্ত শিথিলের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।
রাজস্ব আদায়ে আইএমএফের প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে– বিলাসী পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো, বিভিন্ন খাতে যেসব কর অব্যাহতি রয়েছে, তা বাদ দেওয়া এবং সব পণ্য ও সেবায় ১৫ শতাংশ একক ভ্যাট আরোপ করা।
আইএমএফের সঙ্গে চলমান ঋণচুক্তির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশ কতটা শর্ত পূরণ করেছে, তা পর্যালোচনায় ঢাকা সফর করছে প্রতিনিধি দলটি। এ দুই কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কর রাজস্বের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইএমএফ
এছাড়াও পড়ুন:
শর্ত পূরণ হলেই জুনে পাওয়া যাবে আইএমএফ ঋণের দুই কিস্তি
শর্ত পূরণ হলেই জুনে পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ঋণের দুই কিস্তির অর্থ। শর্ত পূরণে বাংলাদেশ কতটুকু অগ্রগতি করেছে তা খতিয়ে দেখতে আইএমএফ এর একটি প্রতিনিধিদল এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের উপরই নির্ভর করছে সংস্থাটির সঙ্গে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি আগামী জুনে এক সঙ্গে ছাড় করবে কি না।
শনিবার (৫ এপ্রিল) আইএমএফ মিশনটি দুই সপ্তাহের সফরে ঢাকায় এসেছে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ (রবিবার) সকালে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করবে প্রতিনিধিদলটি। এর আগে তারা অর্থ বিভাগের সচিবের সঙ্গে প্রারম্ভিক একটি সভায় মিলিত হবেন। এ তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ সফরে আইএমএফের দলটির সঙ্গে অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সঙ্গে সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
এ ছাড়া তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সভা হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড.আহসান এইচ মনসুর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সঙ্গে।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ঋণ কর্মসূচি চালু হওয়ার পর আইএমএফ থেকে তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের আগে। যদিও সরকার আশা করছে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে আগামী জুনে।
ঈদের ছুটির আগে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফের সঙ্গে এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, বাজেট সহায়তার জন্যই আইএমএফের ঋণ লাগবে। এ কারণেই বাংলাদেশ সরকার ও আইএমএফ যৌথভাবে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের বিষয়ে সম্মত হয়।
জানা গেছে, আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি থেকে দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পেতে বাংলাদেশের সামনে তিনটি বাধা রয়েছে। এসব বাধা অতিক্রম করতে না পারলে আইএমএফের কিস্তি পাওয়া কঠিন হবে। শর্তগুলো হলো মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তি রাজস্ব আদায় ও এনবিআরের রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করা।
তবে দাতা সংস্থাটির ঋণ কর্মসূচির কিছু শর্ত পরিপালন নিয়ে এরই মধ্যে সরকারের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। সংস্থাটির শর্তের মধ্যে রয়েছে ভর্তুকি কমিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো। এছাড়াও ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার শর্তও রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের শর্ত পরিপালন করা সরকারের জন্য খুবই কঠিন। এক্ষেত্রে সরকার আরো সময় নিতে চায়।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পাশাপাশি ব্যাংক খাত সংস্কারে বেশকিছু শর্তও রয়েছে আইএমএফের পক্ষ থেকে। যদিও দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার না কমে উল্টো অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্ত পরিপালনে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। আর রাজস্ব আদায়ের শর্ত পূরণে এনবিআরের অবস্থান ভালো নয়। চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যদিও আইএমএফকে জানানো হয়েছে, এসব শর্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করার পদক্ষেপ ছাড়া বাকি দুটির বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। শর্ত পূরণে বাংলাদেশ ও আইএমএফ যদি নিজ নিজ অবস্থানে অনমনীয় থাকে, তাহলে আর কোনো কিস্তি নাও মিলতে পারে। তখন বাংলাদেশের জন্য দেখা যাবে নতুন জটিলতা। এর ফলে অন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোও তখন বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে রক্ষণশীল হয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, সফরের শেষ দিন ১৭ এপ্রিল অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের আরও একটি সভা হবে। সভা শেষে সেদিন সংবাদ সম্মেলন করবে সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদল। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আইএমএফের প্রতিনিধিদল সফর শেষ করবে। তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আগামী জুনে আইএমএফ’র বোর্ড সভায় ঋণের কিস্তি অনুমোদনের বিষয়টি উত্থাপিত হবে।
উল্লেখ্য, চতুর্থ কিস্তির জন্য দেওয়া শর্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখতে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ঢাকা সফরে আসে আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। গত ৫ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের সভায় এ প্রস্তাবগুলো উঠার কথা ছিল। পরে তারিখটি পিছিয়ে করা হয় ১২ মার্চ। ওই তারিখেও প্রস্তাবটি ওঠেনি। তা আবার পিছিয়ে আগামী জুন করা হয়েছে।
ঢাকা/হাসনাত/টিপু