টাকার লোভ দেখিয়ে ভারতে পাচার, মুক্তিপণ দাবি
Published: 8th, April 2025 GMT
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দুই যুবককে কাজ দেওয়ার কথা বলে ভারতে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বড়লেখা থানায় ১০ জনের নামে মামলা হয়েছে। আব্দুল মালিক নামে এক আসামিকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পাচারের শিকার দুই যুবক হলেন– বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল কাদির ও পূর্ব সাতকরাকান্দি গ্রামের আব্দুল শুক্কুরের ছেলে গিয়াস উদ্দিন। গ্রেপ্তার আব্দুল মালিক ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলো– সরফ উদ্দিন নবাব, ফখর উদ্দিন, আব্দুল খালিক, কুটু মিয়া, আদুল শুকুর, খয়রুল ইসলাম, ইছহাক আলী, ইমাম উদ্দিন ও রুবেল আহমদ। এ ছাড়া আটজনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল রাতে আসামিরা ডিমাই গ্রামের আব্দুল কাদিরের বাড়িতে যায়। তারা কাজ আছে জানিয়ে গভীর রাতে আব্দুল কাদির ও তাঁর প্রতিবেশী আব্দুল আজিজের ছেলে শাহিনকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। একই গ্রুপ (আসামিরা) গিয়াস উদ্দিন নামে আরও এক যুবককে তাঁর বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। পরদিন দুপুরে শাহিন কৌশলে আহত অবস্থায় বাড়ি ফিরে স্বজনদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি জানান, আসামিরা আব্দুল কাদির ও গিয়াস উদ্দিনকে টাকার লোভ দেখিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাঁকেও নিতে চেয়েছিল, তবে তিনি কৌশলে পালিয়ে এসেছেন। এর আগে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তাঁকে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদী আব্দুল কাদিরের মা নেছা বেগম বলেন, ‘শাহিন ফিরে এসে তাদের ওপর চালানো নির্যাতনের খবর জানায়। এর মধ্যে আমার ছেলে আব্দুল কাদির ও গিয়াসের ওপর ভারতে নির্যাতনের একটি ভিডিও ফেসবুকে দেখতে পাই। এর পর আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমার কাছে ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছে। টাকা না দিলে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।’
বড়লেখা থানার ওসি আবুল কাশেম সরকার জানান, এ ঘটনায় রোববার মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক আসামিকে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দ্রুত পথরেখা ঘোষণা করা হোক
রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতদ্বৈধতা সত্ত্বেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন। এত দিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও গত ঈদের ছুটিতে ছোট–বড় ও পুরোনো–নতুন দলের নেতারা প্রকাশ্যে এসেছেন। অনেকে দলের নামে দোয়া চেয়ে পোস্টারও ছেড়েছেন। যদিও এটি নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগস্ট অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা ৩৯টি আসনে জনসংযোগ করেছেন ঈদের ছুটিতে। এসব গণসংযোগ হয়েছে নানা উপলক্ষে। কোথাও আগস্ট অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহতদের সহায়তা করতে, কোথাও প্রীতি ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা উপলক্ষে।
এ কথার অর্থ এই নয় যে অন্য দলগুলোর নেতারা চুপচাপ বসে ছিলেন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, বামপন্থী দলের নেতারা ঈদের ছুটিতে জনসংযোগ করেছেন। জনসংযোগের ক্ষেত্রে বিএনপির সমস্যা হলো, প্রায় সব আসনে তাদের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী আছেন। এ নিয়ে ভবিষ্যতে যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে কোথাও কোথাও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে, তার আলামত ইতিমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে যে বিভিন্ন স্থানে হানাহানি চলছে, তার পেছনেও আছে নির্বাচনী হিসাব–নিকাশ।
রাজনৈতিক নেতাদের এই জনসংযোগ দেখে এ ধারণা করা অমূলক হবে না যে ভেতরে–ভেতরে তাঁরা নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সংস্কারের বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও এখনো অনেক দল বাকি আছে। যেকোনো সিদ্ধান্তে আসতে হলে সব দলের সঙ্গে আলোচনার পর্বটি দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা যখন চলমান, তখন রাজনৈতিক মহলে দুটি বিপজ্জনক প্রচার লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রথমটি হলো সংস্কারের কী প্রয়োজন, দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। দ্বিতীয় প্রচার হলো আপাতত নির্বাচনের প্রয়োজন নেই, যত দিন দরকার এই সরকার থাকুক।
স্বাভাবিকভাবেই সংস্কার ও নির্বাচন দুটি বিষয় নিয়েই জনমনে একধরনের সংশয় ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আগে কারও সঙ্গে দেখা হলে প্রথম প্রশ্ন আসত, নির্বাচনটি কবে হবে। এখন অনেকেই প্রশ্ন করেন, নির্বাচন হবে তো?
রাজনীতিকদের অনেকেই সংস্কারকে নির্বাচনের এবং নির্বাচনকে সংস্কারের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখতে চাইছেন। কিন্তু বাস্তবে তো একটি আরেকটির প্রতিপক্ষ নয়; বরং পরিপূরক। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যেমন সংস্কারের অংশ, তেমনি স্বৈরতন্ত্রের পুনরাগমন ঠেকাতে সংস্কার জরুরি। কতটা সংস্কার নির্বাচনের আগে হবে, কতটা পরে হবে, এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সংস্কার অপরিহার্য।
আমরা মনে করি, সংস্কার ও নির্বাচন করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম ঐকমত্যে আসতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সব দলের সঙ্গে কথা না বললেও তাদের মতামত পেয়েছে; এর ভিত্তিতে তারা কোনো উপসংহার টানতে পারে। তবে উত্তম পন্থা হলো সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি বিলম্ব কাম্য নয়, তাতে সংশয়–সন্দেহ আরও বাড়বে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ করে সরকার সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে দ্রুত একটা পথরেখা ঘোষণা করবে, এটাই প্রত্যাশিত।