আমিন হোসেন ও বিল্লাল হোসেন দুই ভাই। মা ও দুই বোনকে নিয়ে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার আসমা গ্রামে একটি পোলট্রি মুরগির ঘরসহ জায়গা কিনে বসবাস শুরু করেন। তাদের সেই সাজানো সংসার ১০ মিনিটেই পুড়ে গেছে। তাদের বাবা সাহাব উদ্দিন আরেকটি সংসার করে ঢাকায় থাকেন।
চার সন্তানের খোঁজ নেন না সাহাব উদ্দিন। আমিন ও বিল্লাল কখনও রাজমিস্ত্রি, আবার কখনও কাঠমিস্ত্রি কিংবা ট্রলিতে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। মা হালিমা আক্তার বৃদ্ধ বয়সেও অন্যের বাড়িতে কাজ করেছেন। 
ছোট সংসারটি মনের মতো সাজিয়ে গত বছর জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান হালিমা। তাদের ১২ বছরের সাজানো সংসার ১০ মিনিটে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের ঘরে আগুন লাগে। 
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমিন আর বিল্লাল সকালে কাজের উদ্দেশ্যে ঘরে তালা দিয়ে চলে যান। ঘরে কেউ ছিল না। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী মনির মিয়া বলেন, ‘আমি দেখি, ঘরের ওপর দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখি আগুন ওপরে উঠে গেছে। এ সময় পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও ফায়ার সার্ভিসে কল করি। এরই মধ্যে এলাকাবাসী এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ঘরের কিছুই রক্ষা করা যায়নি।’ 
বারহাট্টা ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বিদ্যুতের তার থেকে আগুনের সূত্রপাত। ভুক্তভোগী আমিন হোসেনের ভাষ্য, ‘আমার মায়ের হাতের সাজানো সংসার ছিল। মা বাসাবাড়িতে কাজ করে ঘরটি আমাদের জন্য রেখে যান। আমরা এখন কোথায় থাকব আর কী করব জানি না।’
ইউএনও খবিরুল আহসান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য টিন ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড

বড় ঋণগ্রহীতা বেশির ভাগই পলাতক। কেউ কেউ আছেন জেলে। এর মধ্যেই খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড হয়েছে। গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা আদায় করেছে। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আদায় ৮ হাজার ২৬ কোটি টাকা, যা প্রায় ৮২ শতাংশ। ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ বন্ধ; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি এবং কোনো কোনো ব্যাংক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আদায় জোরদার করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংকাররা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নীতি নিয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কাছে একটা কঠোর বার্তা গেছে– টিকে থাকতে হলে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে হবে। ঋণ পরিশোধ না করে আর আগের মতো নিয়মিত দেখানো যাবে না। আবার চলতি মূলধন ঋণে সীমা বাড়িয়ে নিয়মিত দেখানোর পথও বন্ধ। চাইলেই আদালত থেকে খেলাপি ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ মিলছে না। দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে রয়েছে। ব্যাংক না টিকলে চাকরি বাঁচবে না– এমন চাপও আছে। এসব কারণে খেলাপিদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ তিন মাসে খেলাপি ঋণের বিপরীতে মোট ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এর আগে কোনো এক প্রান্তিকে সর্বোচ্চ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে এই আদায় হয়েছিল। ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে আদায় হয় ৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালে মাত্র ২ হাজার ৬৭২ কোটি এবং ২০২০ সালে ছিল ২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে খেলাপিদের থেকে আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৯১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর তদারকি করছে। যে ঋণের যা শ্রেণিমান, ব্যাংকগুলোকে তা-ই দেখাতে হচ্ছে। আবার অনেক ব্যাংক নিজের অস্বিত্বের স্বার্থে আদায় জোরদার করছে। অবশ্য কেউ খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিল করতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত ডাউন পেমেন্ট দিয়ে সব নিয়ম মেনে আসতে হচ্ছে। একদিকে কঠোরতা, আরেকদিকে নিজেদের অস্বিস্তের স্বার্থে ঋণ আদায় জোরদার করেছে ব্যাংক।

বিগত সরকারের সময়ে ঋণ আদায়ের চেয়ে নানা কৌশলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর উপায় বের করা হতো। মূলত ব্যবসায়ীদের খুশি করতে ২০১৪ সালের ‘রাতের ভোট’-এর আগের বছর থেকে ব্যাপকভাবে এ সংস্কৃতি শুরু হয়। কখনও নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতপশিল, কখনও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ১২ বছরের জন্য ঋণ নবায়ন কিংবা পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়। এসব ছাপিয়ে করোনার পর ২০২০ সাল থেকে কিস্তি ফেরত না দিয়েও নিয়মিত দেখানোর পথ বাতলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন আর আগের মতো যেনতেন উপায়ে নিয়মিত দেখানোর সুযোগ মিলছে না। লুকানো খেলাপি ঋণের আসল চিত্র সামনে আসতে শুরু করেছে। যে কারণে খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ঠেকেছে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। এক বছর আগের তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ১৩১ কোটি টাকা। আর কেবল শেষ তিন মাসে বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ঋণ আদায়সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ২১ বছর তাঁর ব্যাংকিং ক্যারিয়ার। এর আগে কখনও ঋণ আদায়ে এত চাপ তৈরি হয়নি। ব্যাংকারদের মধ্যে একটা কঠোর বার্তা গেছে– ঋণ আদায় করতে না পারলে চাকরি থাকবে না। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে এই চাপ বেশি। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয় বছরের শেষ প্রান্তিকের পরিস্থিতির ভিত্তিতে। সে অনুপাতে ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ, কর্মীদের ইনসেনটিভ বোনাসসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এবার প্রকৃত আদায় ছাড়া কোনো ব্যাংক খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে পারছে না। আবার কারও প্রভিশন ঘাটতি রেখে লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এসব কারণে ঋণ আদায় বেড়েছে। ঋণগ্রহীতা বড় অংশই পলাতক না থাকলে আরও অনেক বেশি আদায় হতো বলে তিনি জানান।
আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগদানের এক সপ্তাহের মাথায় ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ব্যাপক শিথিল করে ঋণ পুনঃতপশিলের একটি নীতিমালা করা হয়। ওই নীতিমালার পর আগের সব রেকর্ড ভেঙে শুধু ২০২২ ও ২০২৩ সালে পুনঃতপশিল হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪১ কোটি টাকার ঋণ। আর ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে পুনঃতপশিল করা হয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ। এভাবে লুকিয়ে রাখা ঋণই এখন আবার খেলাপি হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড
  • ভূমি ভাবতেই পারেননি তার জীবনে এমন সুযোগ কখনও আসবে