গত মার্চ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় এসেছে ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন বা ৪২৫ কোটি ডলার। গত বছরের একই মাসের চেয়ে যা ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। গত বছরের মার্চ মাসে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন বা ৩৮১ কোটি ডলার। একক মাসের এ হিসাবের বাইরে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের গত ৯ মাসের গড় রপ্তানিও বেশ ভালো। অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেড়েছে। মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৭ দশমিক ১৯ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৭১৯ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইপিবি। ইপিবির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরাবরের মতো তৈরি পোশাকই এখনও রপ্তানি খাতের মূল ভরসার জায়গা। মোট ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের মধ্যে এই খাত থেকেই এসেছে ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে গত ৯ মাসে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেশি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। শুধু মার্চ মাসের হিসাবে পোশাকের রপ্তানি বেশি হয়েছে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। যার অর্থমূল্য ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন বা ৩৪৫ কোটি ডলার। গত বছরের মার্চে এ পরিমাণ ছিল ৩০৭ কোটি ডলার।
তবে আগামীতে রপ্তানি আয়ের এ গতি ধরে রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে নানা সংশয় দেখা হয়েছে। কারণ তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যে বর্তমান আমদানি শুল্ক হারের অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এতদিন এ হার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ। নতুন-পুরোনো মিলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে শুল্ক হার দাঁড়াচ্ছে ৫২ শতাংশ। ঘোষণায় অবশ্য অন্য রপ্তানিকারক দেশের পণ্যেও বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে, যা আগামীকাল বুধবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
জানতে চাইলে ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণায় এ রপ্তানির গতি ধরে রাখা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কিছু ক্রেতা ইতোমধ্যে অনুরোধ করেছেন, পরবর্তী বার্তা না দেওয়া পর্যন্ত উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম যাতে স্থগিত রাখা হয়। অতিরিক্ত শুল্কভারের সম্পূর্ণ শুল্কই যাতে রপ্তানিকারকরা বহন করে অথবা ভাগাভাগি করে নেয় এ ব্যাপারে কিছু ক্রেতা চাপ দিচ্ছেন। ছোট ক্রেতাদের মধ্যেই এ প্রবণতা বেশি, যা নৈতিক অনুশীলন নয়। উন্মুক্ত ব্যয়ের ব্যবসায়িক মডেলে এখন ক্রেতারা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মুনাফার মার্জিন সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত। এ বাস্তবতায় বাড়তি শুল্কের চাপ নেওয়ার সুযোগ নেই রপ্তানিকারকদের পক্ষে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, ব্র্যান্ডগুলো তাদের সরবরাহকারীদের এবং পোশাকশিল্পের ৪০ লাখেরও বেশি কর্মীর কথা বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে।’
ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, অর্থবছরের গত ৯ মাসে তৈরি পোশাকের বাইরে অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি পরিস্থিতিও মোটামুটি ভালো। চামড়া ও চামড়া পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ৮৫ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াপণ্য। শুধু মার্চ মাসেই এ পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি কমেছে ৮ শতাংশের মতো। তবে একক মার্চ মাসে রপ্তানি বেড়েছে সিকি শতাংশের মতো। এতটুকু রপ্তানিকেও ভালো বলা যায়। কারণ একটা লম্বা সময় ধরে পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি কেবল কমছেই। হালকা প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেশ ভালো। ৯ মাসের গড় রপ্তানি ১১ শতাংশের মতো বেশি। একক মাস হিসাবে মার্চে বেড়েছে ৩৩ শতাংশেরও বেশি। হোম টেক্সটাইল পণ্যের গড় রপ্তানি ৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৮ কোটি ডলার। পাদুকার রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ৪১ কোটি ডলারের কিছু বেশি মূল্যের পণ্য। মার্চে রপ্তানি বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। তবে রপ্তানির এ প্রবাহের বিপরীতে রয়েছে কৃষিপণ্যের অবস্থান। রপ্তানি খাতের বড় পণ্যের মধ্যে কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে ২৬ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ৮১ কোটি ডলার মূল্যের বিভিন্ন কৃষিপণ্য।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বছর র একই গত বছর র শ র মত দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
২৫৪ কোটি টাকার সেদ্ধ চাল কিনবে সরকার
দেশের খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-১১ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল কেনার উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এতে মোট ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৫০.৮০ টাকা।
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশে খাদ্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস হতে ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির’ অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল এবং জি টু জি পদ্ধতিতে মায়ানমার থেকে ১ লাখ, পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার এবং ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ মেট্রিক টন আতপ চালসহ মোট ৭ লাখ মেট্রিক টন চাল কেনার চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির লক্ষ্যে চুক্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। চুক্তির বিপরীতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন এবং জি টু জি ভিত্তিতে ২ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ২ লাখ ৪৩ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন এবং জি টু জি ভিত্তিতে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৩৯ মেট্রিক টন চাল সরকারি সংরক্ষণাগারে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এবং জি টু জি পদ্ধতিতে আরো চাল আমদানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সূত্র জানায়, চাল আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক চাল ক্রয়ের জন্য গত ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে মোট ১২ সরবরাহকারী দরপত্র দলিল সংগ্রহ করলেও মোট ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠান ৫টি উৎস দেশ হিসেবে ভারত থেকে এই চাল সরবরাহ করবে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রা.লি. প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ৪১৬.৪৪ ডলার উল্লেখ করায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির নাম সুপারিশ করে যা উৎস দেশগুলোর গড় দর (৪৪৪.৯১ মার্কিন ডলার) অপেক্ষা (৪৪৪,৯১-৪১৬,৪৪)=২৮.৪৭ মার্কিন ডলার কম। এ ছাড়া মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রা.লি. কর্তৃক প্রদত্ত দর বাংলাদেশের বন্দর পর্যন্ত প্রতি মেট্রিক টন ৪১৬.৪৪ মার্কিন ডলার, যা বাজার দর যাচাই কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম হওয়ায় উক্ত দর গ্রহণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করে। মহাপরিচালক, খাদ্য অধিদপ্তর উক্ত সুপারিশের সাথে একমত পোষণ করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে ক্রয় প্রস্তাব পাঠায়।
হিসাব অনুযায়ী, প্রতি মেট্রিক টন ৪১৬.৪৪ মার্কিন ডলার (প্রতি কেজি ৫০.৮০ টাকা) হিসেবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল কেনার জন্য প্রয়োজন হবে দুই কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার; অর্থাৎ গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডলারের বিনিময় হার প্রতি মার্কিন ডলার ১২২ টাকা (সম্ভাব্য) হিসেবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। এই টাকা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চাল ক্রয় খাত থেকে মেটানো হবে।
এই ক্রয় উপলক্ষে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সিডি ভ্যাট সরকার কর্তৃক বহন করতে হবে। এ-সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ