এক সময় বলা হতো যার হবে যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা। সেই দিন অনেকটা বদলে গেছে। যক্ষ্মার কার্যকরী চিকিৎসা রয়েছে। তারপরও প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ যক্ষ্মায় মৃত্যুবরণ করছে। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ১.২৫ মিলিয়ন। যক্ষ্মা দুনিয়াব্যাপী এখনও ভয়ংকর একটি ব্যাধি। বিশেষত দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি একটি বড় সমস্যা। যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত একটি রোগ। এর নাম মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারক্লোসিস। যদিও আমরা ফুসফুসের যক্ষ্মার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পরিচিত; কিন্তু এটি আক্রমণ করতে পারে শরীরের প্রায় সব অঙ্গে। বিশেষত লাসিকা গ্রন্থি, কিডনি, অন্ত্র, অস্থি ও মস্তিষ্কে প্রায়ই বাসা বাঁধে জীবাণু। চিকিৎসকদের ভাষায় এটিকে বলা হয় এক্সট্রা পালমোনারি টিউবারক্লোসিস। বর্তমানে ফুসফুসের বাইরে অন্য অঙ্গে যক্ষ্মার আক্রমণ প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। আরেকটি ভয়ানক ব্যাপার হচ্ছে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সহনশীল প্রমাণিত হচ্ছে। সাধারণত যক্ষ্মার বিরুদ্ধে ছয় মাসের জন্য অনেক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। যক্ষ্মার জীবাণু এ ওষুধগুলোর বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করার কৌশল রপ্ত করে ফেলেছে। অনেক ওষুধ-সহনশীল এ সব যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা এখন চিকিৎসকদের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায় মূলত বাতাসের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশে। আমাদের প্রশ্বাসের বাতাসের সঙ্গে এটি প্রবেশ করে ফুসফুসের মাঝে। জীবাণুর বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা সবল থাকলে এটি প্রবেশ করলেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা যখন দুর্বল হয়ে পড়ে তখন এই ঘুমন্ত দশায় থাকা জীবাণু জেগে ওঠে। বিভিন্ন অঙ্গে আক্রমণ করে বসে। ডায়াবেটিস, এইডস, ক্যান্সার, অপুষ্টিসহ বিভিন্ন রোগে দেহের রোগ প্রতিরোধ দেয়ালে ফাটল ধরে। তখনই ঘটে বিপত্তি। অঙ্গভেদে যক্ষ্মার লক্ষণ ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ সব ধরনের যক্ষ্মাতেই দেখা দেয়। রাত্রিকালীন ঘুষঘুষে জ্বর ও ঘাম, ওজন হ্রাস, অরুচি এগুলো সব ধরনের যক্ষ্মাতেই দেখা দেয়। ফুসফুসে যক্ষ্মা দেখা দিলে কাশি, কফের সঙ্গে রক্ত, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা এগুলো হতে পারে। হাড়ে যক্ষ্মা হলে ব্যথা হতে পারে আক্রান্ত জায়গায়। কিডনিতে যক্ষ্মা হলে পেশাবের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। অন্ত্রে যক্ষ্মা হলে ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে। শরীরের যে অংশে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হবে সে অংশটি ফুলে উঠবে। যেমন গলার গ্লান্ড আক্রান্ত হলে গলা ফুলবে, মেরুদণ্ডে আক্রান্ত হলে পুরো মেরুদণ্ড ফুলে উঠবে। যক্ষ্মা প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। জন্মের পর থেকে প্রথম ছয় সপ্তাহের মাঝে যক্ষ্মার টিকা দিতে হয়। যক্ষ্মা প্রতিরোধের জন্য এটি একটি কার্যকর টিকা। হাঁচি-কাশির সময় মুখে রুমাল দেওয়া, না হলে অন্তত হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা সবার থেকে দূরে গিয়ে কাশি দেওয়া। কারও যক্ষ্মা রোগ নির্ণিত হলে তাকে আলাদা করা এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এটি প্রতিরোধের জন্য খুবই সহায়ক। পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য
গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।v
[মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট সিএমএইচ, বরিশাল]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
যক্ষ্মা: যা জানতে হবে
এক সময় বলা হতো যার হবে যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা। সেই দিন অনেকটা বদলে গেছে। যক্ষ্মার কার্যকরী চিকিৎসা রয়েছে। তারপরও প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ যক্ষ্মায় মৃত্যুবরণ করছে। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ১.২৫ মিলিয়ন। যক্ষ্মা দুনিয়াব্যাপী এখনও ভয়ংকর একটি ব্যাধি। বিশেষত দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি একটি বড় সমস্যা। যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত একটি রোগ। এর নাম মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারক্লোসিস। যদিও আমরা ফুসফুসের যক্ষ্মার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পরিচিত; কিন্তু এটি আক্রমণ করতে পারে শরীরের প্রায় সব অঙ্গে। বিশেষত লাসিকা গ্রন্থি, কিডনি, অন্ত্র, অস্থি ও মস্তিষ্কে প্রায়ই বাসা বাঁধে জীবাণু। চিকিৎসকদের ভাষায় এটিকে বলা হয় এক্সট্রা পালমোনারি টিউবারক্লোসিস। বর্তমানে ফুসফুসের বাইরে অন্য অঙ্গে যক্ষ্মার আক্রমণ প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। আরেকটি ভয়ানক ব্যাপার হচ্ছে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সহনশীল প্রমাণিত হচ্ছে। সাধারণত যক্ষ্মার বিরুদ্ধে ছয় মাসের জন্য অনেক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। যক্ষ্মার জীবাণু এ ওষুধগুলোর বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করার কৌশল রপ্ত করে ফেলেছে। অনেক ওষুধ-সহনশীল এ সব যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা এখন চিকিৎসকদের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায় মূলত বাতাসের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশে। আমাদের প্রশ্বাসের বাতাসের সঙ্গে এটি প্রবেশ করে ফুসফুসের মাঝে। জীবাণুর বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা সবল থাকলে এটি প্রবেশ করলেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা যখন দুর্বল হয়ে পড়ে তখন এই ঘুমন্ত দশায় থাকা জীবাণু জেগে ওঠে। বিভিন্ন অঙ্গে আক্রমণ করে বসে। ডায়াবেটিস, এইডস, ক্যান্সার, অপুষ্টিসহ বিভিন্ন রোগে দেহের রোগ প্রতিরোধ দেয়ালে ফাটল ধরে। তখনই ঘটে বিপত্তি। অঙ্গভেদে যক্ষ্মার লক্ষণ ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ সব ধরনের যক্ষ্মাতেই দেখা দেয়। রাত্রিকালীন ঘুষঘুষে জ্বর ও ঘাম, ওজন হ্রাস, অরুচি এগুলো সব ধরনের যক্ষ্মাতেই দেখা দেয়। ফুসফুসে যক্ষ্মা দেখা দিলে কাশি, কফের সঙ্গে রক্ত, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা এগুলো হতে পারে। হাড়ে যক্ষ্মা হলে ব্যথা হতে পারে আক্রান্ত জায়গায়। কিডনিতে যক্ষ্মা হলে পেশাবের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। অন্ত্রে যক্ষ্মা হলে ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে। শরীরের যে অংশে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হবে সে অংশটি ফুলে উঠবে। যেমন গলার গ্লান্ড আক্রান্ত হলে গলা ফুলবে, মেরুদণ্ডে আক্রান্ত হলে পুরো মেরুদণ্ড ফুলে উঠবে। যক্ষ্মা প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। জন্মের পর থেকে প্রথম ছয় সপ্তাহের মাঝে যক্ষ্মার টিকা দিতে হয়। যক্ষ্মা প্রতিরোধের জন্য এটি একটি কার্যকর টিকা। হাঁচি-কাশির সময় মুখে রুমাল দেওয়া, না হলে অন্তত হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা সবার থেকে দূরে গিয়ে কাশি দেওয়া। কারও যক্ষ্মা রোগ নির্ণিত হলে তাকে আলাদা করা এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এটি প্রতিরোধের জন্য খুবই সহায়ক। পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য
গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।v
[মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট সিএমএইচ, বরিশাল]