গত তিন নির্বাচনে ভোটের নানান ডাকনাম শুনে শুনে আমাদের এখন মনে হতে শুরু করেছে, ভোট মানেই কোনো ডাকনামে বিশেষায়িত হতে হবে। জাতীয় সংসদের গত তিন নির্বাচনের প্রথমটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন; দ্বিতীয়টা রাতের ভোট, শেষেরটা ডামি ভোট। নামগুলো আগে নির্ধারিত ছিল না। নির্বাচনের পর নামাঙ্কিত হয়েছে। অবশ্য আরও একটা নির্বাচন ডাকনামে চিহ্নিত– ‘১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন’। এমনও নয় যে, ডাকনামে চিহ্নিত হয়নি বলেই ১৯৮৬ বা ১৯৮৮ সালের নির্বাচন পার পেয়ে গেছে! এমনকি ‘ভালো’ নির্বাচনগুলোর কপালেও সূক্ষ্ম কারচুপি, স্থূল কারচুপি, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি ট্যাগ লটকে গেছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষ আশা করে আছে, একটি ভালো নির্বাচন হবে। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছা তাকে দেব’ স্বপ্নটি পূরণ করতে পারবে। কিন্তু ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি কবে হবে, সে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি সিঁদুরে মেঘের মতো উঁকি মারছে ‘প্রক্সি ভোট’ শব্দটি। কোম্পানি আইনে সীমিত ক্ষেত্রে প্রক্সি ভোটের প্রচলন থাকলেও জাতীয় নির্বাচনে প্রক্সি ভোট নির্বাচনকেই না প্রক্সিতে ঠেলে দেয়!
দেশে এখন মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে প্রবাসীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৬ লাখ। ধরে নিচ্ছি, সবারই জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। তাহলে মোট ভোটারের প্রায় ১১ শতাংশই প্রবাসী। তারা দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। নির্বাচন কমিশন এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে ভোটাধিকারের আওতায় আনার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। দীর্ঘদিন প্রবাসী নাগরিকরা ভোটাধিকার প্রয়োগের দাবি করে আসছিলেন এবং তাদের দাবি ন্যায়সংগত।
বিশ্বের বেশির ভাগ গণতান্ত্রিক দেশের মতো আমাদের দেশেও পোস্টাল ব্য়ালটের প্রচলন আছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের বিস্তারিত প্রতিবেদনে প্রবাসীদের ভোট প্রদানের পদ্ধতি হিসেবে প্রক্সি ভোটসহ নানা পদ্ধতি আলোচনা করে শেষাবধি পোস্টাল ব্যালটের পক্ষেই সুপারিশ রেখেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সুপারিশকে পাশ কাটিয়ে প্রবাসীদের জন্য প্রক্সি ভোট চালুর পক্ষে ভাবনা শুরু করেছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে কর্মশালা হওয়ার কথাও আছে।
প্রক্সি ভোট চালু হলে প্রবাসী ভোটার দেশে আত্মীয় বা রক্তের সম্পর্কিত একজনকে মনোনীত করবেন, যিনি ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। দেশে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার। গড়ে প্রতি কেন্দ্রে প্রবাসী ভোটারের সংখ্যা ৩২৩। কুমিল্লা, চাঁদপুর, টাঙ্গাইলসহ কোনো কোনো জেলায় এই সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। শুধু প্রবাসীদের ভোটের জন্যই প্রায় সব কেন্দ্রে একাধিক বুথ খুলতে হতে পারে।
প্রশ্ন বুথ খোলা নিয়ে নয়। ভয়টা হচ্ছে, প্রবাসীর মনোনীত আত্মীয় প্রবাসীর কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীকেই ভোট দেওয়ার নিশ্চয়তা কী! তা ছাড়া অতীতে প্রায় নির্বাচনেই কোনো না কোনো কেন্দ্র দখলের ভূরি ভূরি নজির রয়েছে। মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটদানের সুযোগ দেওয়া হলে কোনো অঘটনের মাধ্যমে কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে খুব সহজেই প্রবাসী ভোট এস্তেমাল সম্ভব হবে। ফলে প্রক্সি ভোট কার্যত প্রক্সি নির্বাচনে রূপান্তরিত হতে পারে।
এ ছাড়া বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাসে বিশ্বাসী হতে পারেন। এমনকি নির্বাচনেও একই পরিবার থেকে একাধিক জনের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক প্রতীকে প্রার্থী হতে দেখা গেছে। সে ক্ষেত্রে মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে প্রবাসীদের প্রক্সি ভোট নেওয়া হলে আমানতের খেয়ানতই হবে।
নির্বাচন কমিশন অবশ্য আশা করছে, একটি শক্তিশালী অ্যাপস তৈরির মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু শেষ ধাপে একজন এজেন্টই প্রবাসী ভোটারের ভোটটি প্রদান করবেন। এর ফলে প্রবাসীর ভোটের গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাবে।
নির্বাচন কমিশন যেহেতু ইভিএম থেকে সরে এসেছে, তাই প্রবাসী ভোটারদের জন্য ইলেকট্রনিক ভোট চালু করতে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেসব দিক বিবেচনা করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালটেই আস্থা রাখা শোভনীয়। পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা করতে গেলে ভোটারের কাছে ব্যালট পাঠানো ও ফেরত আনতে কমপক্ষে আট কর্মদিবস বরাদ্দ রাখতে হবে। প্রবাসীদের ব্যালট বিভিন্ন দেশে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসে পাঠিয়ে সেখান থেকে বিতরণের ব্যবস্থা করতে আরও অন্তত পাঁচ কর্মদিবস প্রয়োজন হবে।
আমাদের বিগত নির্বাচনগুলোয় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় পর নির্বাচনের দিনের ব্যবধান থাকে গড়পড়তা তিন সপ্তাহ। এই ব্যবধানের ভেতরেই ব্যালট পেপার মুদ্রণ ও কেন্দ্রে পাঠানো হয়ে থাকে। প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা করতে হলে এই ব্যবধান কমপক্ষে পাঁচ সপ্তাহ করতে হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর ভোট প্রদানের দিনের ব্যবধান বাড়ালে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা ব্যয় বাড়বে, যা অভিপ্রেত নয়।
প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা বাবদ ব্যয় না বাড়িয়ে প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট নিতে গেলে একটু পরিবর্তন প্রয়োজন হবে। এখন যেমন নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে ভোট গণনা করা হয়, সেখান থেকে সরে আসতে হবে। ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ভোট গ্রহণের কয়েক দিন পরে প্রকাশ্য দিবালোকে ভোট গণনা করা হয়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, সারাদিনে ভোট গ্রহণ করে ক্লান্ত-শ্রান্ত নির্বাচনী কর্মকর্তারা বিশ্রাম পান। গণনায় ভুল হওয়ার আশঙ্কা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। নাজুক ভোটকেন্দ্রগুলোয় ভোট গণনাউত্তর দাঙ্গা-হাঙ্গামা রোধসহ ফলাফল পাল্টে ফেলার আশঙ্কা লোপ পায়। এ ব্যবস্থা করা হলে পোস্টাল ব্যালট এসে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে।
প্রবাসী ভোটারদের ভোট প্রদানের গোপনীয়তা রক্ষা করে বাস্তবানুগ করতে নির্বাচন কমিশন প্রক্সি ভোটের ধারণা থেকে সরে এসে আপাতত পোস্টাল ব্যালটের উদ্যোগ নিক। কয়েকটি নির্বাচনের পর আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো এস্তোনিয়ার মতো গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাই অনলাইনভিত্তিক করবে। সেটা সময়ের ব্যাপার; সময়ের হাতেই তোলা থাক।
আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী: অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রব স দ র ভ ট প রব স র ই প রব স ব যবস থ ব যবধ ন মন ন ত র জন য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রক্সি ভোট, নাকি প্রক্সি নির্বাচন
গত তিন নির্বাচনে ভোটের নানান ডাকনাম শুনে শুনে আমাদের এখন মনে হতে শুরু করেছে, ভোট মানেই কোনো ডাকনামে বিশেষায়িত হতে হবে। জাতীয় সংসদের গত তিন নির্বাচনের প্রথমটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন; দ্বিতীয়টা রাতের ভোট, শেষেরটা ডামি ভোট। নামগুলো আগে নির্ধারিত ছিল না। নির্বাচনের পর নামাঙ্কিত হয়েছে। অবশ্য আরও একটা নির্বাচন ডাকনামে চিহ্নিত– ‘১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন’। এমনও নয় যে, ডাকনামে চিহ্নিত হয়নি বলেই ১৯৮৬ বা ১৯৮৮ সালের নির্বাচন পার পেয়ে গেছে! এমনকি ‘ভালো’ নির্বাচনগুলোর কপালেও সূক্ষ্ম কারচুপি, স্থূল কারচুপি, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি ট্যাগ লটকে গেছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষ আশা করে আছে, একটি ভালো নির্বাচন হবে। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছা তাকে দেব’ স্বপ্নটি পূরণ করতে পারবে। কিন্তু ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি কবে হবে, সে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি সিঁদুরে মেঘের মতো উঁকি মারছে ‘প্রক্সি ভোট’ শব্দটি। কোম্পানি আইনে সীমিত ক্ষেত্রে প্রক্সি ভোটের প্রচলন থাকলেও জাতীয় নির্বাচনে প্রক্সি ভোট নির্বাচনকেই না প্রক্সিতে ঠেলে দেয়!
দেশে এখন মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে প্রবাসীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৬ লাখ। ধরে নিচ্ছি, সবারই জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। তাহলে মোট ভোটারের প্রায় ১১ শতাংশই প্রবাসী। তারা দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। নির্বাচন কমিশন এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে ভোটাধিকারের আওতায় আনার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। দীর্ঘদিন প্রবাসী নাগরিকরা ভোটাধিকার প্রয়োগের দাবি করে আসছিলেন এবং তাদের দাবি ন্যায়সংগত।
বিশ্বের বেশির ভাগ গণতান্ত্রিক দেশের মতো আমাদের দেশেও পোস্টাল ব্য়ালটের প্রচলন আছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের বিস্তারিত প্রতিবেদনে প্রবাসীদের ভোট প্রদানের পদ্ধতি হিসেবে প্রক্সি ভোটসহ নানা পদ্ধতি আলোচনা করে শেষাবধি পোস্টাল ব্যালটের পক্ষেই সুপারিশ রেখেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সুপারিশকে পাশ কাটিয়ে প্রবাসীদের জন্য প্রক্সি ভোট চালুর পক্ষে ভাবনা শুরু করেছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে কর্মশালা হওয়ার কথাও আছে।
প্রক্সি ভোট চালু হলে প্রবাসী ভোটার দেশে আত্মীয় বা রক্তের সম্পর্কিত একজনকে মনোনীত করবেন, যিনি ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। দেশে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার। গড়ে প্রতি কেন্দ্রে প্রবাসী ভোটারের সংখ্যা ৩২৩। কুমিল্লা, চাঁদপুর, টাঙ্গাইলসহ কোনো কোনো জেলায় এই সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। শুধু প্রবাসীদের ভোটের জন্যই প্রায় সব কেন্দ্রে একাধিক বুথ খুলতে হতে পারে।
প্রশ্ন বুথ খোলা নিয়ে নয়। ভয়টা হচ্ছে, প্রবাসীর মনোনীত আত্মীয় প্রবাসীর কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীকেই ভোট দেওয়ার নিশ্চয়তা কী! তা ছাড়া অতীতে প্রায় নির্বাচনেই কোনো না কোনো কেন্দ্র দখলের ভূরি ভূরি নজির রয়েছে। মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটদানের সুযোগ দেওয়া হলে কোনো অঘটনের মাধ্যমে কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে খুব সহজেই প্রবাসী ভোট এস্তেমাল সম্ভব হবে। ফলে প্রক্সি ভোট কার্যত প্রক্সি নির্বাচনে রূপান্তরিত হতে পারে।
এ ছাড়া বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাসে বিশ্বাসী হতে পারেন। এমনকি নির্বাচনেও একই পরিবার থেকে একাধিক জনের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক প্রতীকে প্রার্থী হতে দেখা গেছে। সে ক্ষেত্রে মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে প্রবাসীদের প্রক্সি ভোট নেওয়া হলে আমানতের খেয়ানতই হবে।
নির্বাচন কমিশন অবশ্য আশা করছে, একটি শক্তিশালী অ্যাপস তৈরির মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু শেষ ধাপে একজন এজেন্টই প্রবাসী ভোটারের ভোটটি প্রদান করবেন। এর ফলে প্রবাসীর ভোটের গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাবে।
নির্বাচন কমিশন যেহেতু ইভিএম থেকে সরে এসেছে, তাই প্রবাসী ভোটারদের জন্য ইলেকট্রনিক ভোট চালু করতে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেসব দিক বিবেচনা করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালটেই আস্থা রাখা শোভনীয়। পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা করতে গেলে ভোটারের কাছে ব্যালট পাঠানো ও ফেরত আনতে কমপক্ষে আট কর্মদিবস বরাদ্দ রাখতে হবে। প্রবাসীদের ব্যালট বিভিন্ন দেশে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসে পাঠিয়ে সেখান থেকে বিতরণের ব্যবস্থা করতে আরও অন্তত পাঁচ কর্মদিবস প্রয়োজন হবে।
আমাদের বিগত নির্বাচনগুলোয় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় পর নির্বাচনের দিনের ব্যবধান থাকে গড়পড়তা তিন সপ্তাহ। এই ব্যবধানের ভেতরেই ব্যালট পেপার মুদ্রণ ও কেন্দ্রে পাঠানো হয়ে থাকে। প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা করতে হলে এই ব্যবধান কমপক্ষে পাঁচ সপ্তাহ করতে হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর ভোট প্রদানের দিনের ব্যবধান বাড়ালে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা ব্যয় বাড়বে, যা অভিপ্রেত নয়।
প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা বাবদ ব্যয় না বাড়িয়ে প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট নিতে গেলে একটু পরিবর্তন প্রয়োজন হবে। এখন যেমন নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে ভোট গণনা করা হয়, সেখান থেকে সরে আসতে হবে। ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ভোট গ্রহণের কয়েক দিন পরে প্রকাশ্য দিবালোকে ভোট গণনা করা হয়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, সারাদিনে ভোট গ্রহণ করে ক্লান্ত-শ্রান্ত নির্বাচনী কর্মকর্তারা বিশ্রাম পান। গণনায় ভুল হওয়ার আশঙ্কা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। নাজুক ভোটকেন্দ্রগুলোয় ভোট গণনাউত্তর দাঙ্গা-হাঙ্গামা রোধসহ ফলাফল পাল্টে ফেলার আশঙ্কা লোপ পায়। এ ব্যবস্থা করা হলে পোস্টাল ব্যালট এসে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে।
প্রবাসী ভোটারদের ভোট প্রদানের গোপনীয়তা রক্ষা করে বাস্তবানুগ করতে নির্বাচন কমিশন প্রক্সি ভোটের ধারণা থেকে সরে এসে আপাতত পোস্টাল ব্যালটের উদ্যোগ নিক। কয়েকটি নির্বাচনের পর আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো এস্তোনিয়ার মতো গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাই অনলাইনভিত্তিক করবে। সেটা সময়ের ব্যাপার; সময়ের হাতেই তোলা থাক।
আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী: অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব