মা-বাবার সঙ্গে মেলায় এসে পছন্দের পুতুল কিনেছে চার বছরের রোজা। এ জন্য খুশি ধরছিল না তার। আট বছর বয়সী বড় বোন জান্নাতুল তিশার বায়না পুতির মালার জন্য। এ নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে মান-অভিমান চলছিল শিশুটির। সোমবার তাদের পাওয়া যায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাঘা দরগা শরিফে আয়োজিত ঈদমেলায়। এই পরিবারটি এসেছিল আটঘড়ি গ্রাম থেকে। তাদের মতো হাজারো মানুষের মধ্যে মেলার আনন্দ দেখে প্রবীণ ব্যক্তিরা তাদের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিচারণে মেতে ওঠেন।
নাটোরের লালপুর থেকে এই মেলায় এসেছিলেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রশিদ। তিনি নাতি-নাতনিদের জন্য খেলনা কিনে বাড়ি ফিরছেন। মেলার প্রাণচাঞ্চল্যে মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলেন, এই মেলায় এত মানুষের সমাগম হয়, ধারণাই ছিল না। বাঘার বাজুবাঘা গ্রামে শ্বশুরবাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার বাসিন্দা রাব্বি হোসেন। তিনি সুখ্যাতি শুনেই মেলায় এসেছেন। স্ত্রী-ছেলের পাশাপাশি শ্বশুরবাড়ির ছোট শিশুদের নিয়ে এসেছেন। সবাই সুইং চেয়ারে দুলবে। রাব্বি হোসেন বলেন, শিশুদের আনন্দ দেখে নিজের শৈশবের কথাই মনে হচ্ছে বারবার।
মিলিক বাঘার গ্রামের সেকেন্দার আলী (৬৮) এই মেলায় তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। ছোট বেলায় দলবেঁধে মেলায় এসে পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ দেখতেন। ফেরার সময় হাতে থাকত তালপাতা বা বাঁশের তৈরি বাঁশি। সেকেন্দার আলী বলেন, এখন মেলা থেকে তালপাতার বাঁশি কেনা হয় না। শোলার খেলনা, বেতের সরঞ্জাম, মাটির পশু-পাখি মেলায় দেখাই যায় না। 
এই মেলার মিষ্টান্নের সুখ্যাতি আছে। তাই ঈদে বেড়াতে আসা আত্মীয়-স্বজনেরও চাহিদা থাকে। তাদের জন্য ছানার তৈরি জিলাপি, চমচম নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালিম। 
সোমবার দুপুরে মেলায় পসরা সাজিয়ে বসেন বগুড়ার ওসমান আলী (৭৫)। তিনি বিক্রি করেন পোড়ামাটি ও বাঁশের কাঠি দিয়ে তৈরি ব্যাঙগাড়ি। ষাটের দশকে এই গাড়ি বিক্রি করতেন এক টাকার কমে। ৩৫ বছর ধরে বাঘার এই মেলায় আসেন। এখন তিনি প্রতিটি গাড়ি বিক্রি করেন ১২-১৫ টাকায়। এবার ব্যাঙগাড়ি বিক্রি হয়েছে অনেক কম। 
৪০ বছর ধরে এই মেলায় আসছেন কুষ্টিয়ার বৃত্তিপাড়ার বাসিন্দা নগেশ্বর। তিনি বলেন, ১৫ বছর বয়স থেকে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে মেলায় আসছেন। এবার দিনে গড়ে বিক্রি হয়েছে তিন-চার হাজার টাকার পণ্য। খুলনার কসমেটিকস ব্যবসায়ী মেরাজ গাজী ঈদের তিন দিন আগে মেলায় এসেছেন। সোমবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার বেচাকেনা হয়েছে তাঁর। পাইকারি-খুচরা মিলিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকার খেলনা বিক্রি করেছেন সহিদুল ইসলাম। আড়াই লাখ টাকার মতো মিষ্টি-জিলাপি বিক্রি করেছেন সাইফুল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এই ম ল য় ম ল য় এস

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জামায়াতের আমিরের

জাতীয় স্বার্থে দল–মতনির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।

আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান জামায়াতের আমির। বইয়ের শিরোনাম ‘মাওলানা আব্দুস সুবহান রহ.: তৃণমূল থেকে শীর্ষে’।

অনুষ্ঠানে শফিকুর রহমান বলেন, একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে জাতির স্বার্থে জাতীয় ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হলে এ জাতি বিজয়ী হবে।

মাওলানা আব্দুস সুবহানের ব্যক্তিত্ব দল–মতনির্বিশেষে সবাইকে মুগ্ধ করত বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে কনডেমড সেলে মৃত্যু অপেক্ষায় থেকেও মাওলানা আব্দুস সুবহান কখনো ভয় পাননি। জেলে থাকা অবস্থায়ও তিনি কারাগারে থাকা সবার খোঁজ খবর রাখতেন। নেতৃত্ব দিতে হলে মানুষকে বুঝতে হয়, এটার আজ বড় অভাব। মাওলানা আব্দুস সুবহান জেলে গিয়েও মানুষের সমস্যা সমাধান করতেন। তিনি ফাঁসির রায় শুনেও প্রশান্ত ছিলেন। দেশকে, মানুষকে ভালোবাসলে কেউ পালিয়ে যায় না। জামায়াত নেতারা তা প্রমাণ করেছেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, জুলাই বিপ্লবের বিতাড়িত সরকার আব্দুস সুবহানকে অপমানিত করতেই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি করেছিল। তবে আজ সেই আওয়ামী লীগই অপমানিত হয়ে দেশ থেকে পালিয়েছে।

বইটির লেখক আলী আহমাদ মাবরুর। তিনিসহ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শামীম সাঈদী, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ