Samakal:
2025-04-07@22:31:40 GMT

৮৮২ কোটি টাকার সড়ক মৃত্যুফাঁদ

Published: 7th, April 2025 GMT

৮৮২ কোটি টাকার সড়ক মৃত্যুফাঁদ

বছর চারেক আগে ৮৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৬ কিলোমিটার দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। দুই বছর না যেতেই বিভিন্ন স্থানে উঁচু-নিচু ঢেউ, গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট হয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের প্রায় ৬৬ কিলোমিটারে এই দশা। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়ি। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ফুলবাড়ী ঢাকা মোড় থেকে দক্ষিণে আম্রবাটি মাদ্রাসা মোড়, লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে জয়নগর বাজার, চণ্ডিপুর বাজার থেকে দুর্গাপুর ঢিবি, বিরামপুর পৌর শহরের ঢাকা মোড়, মির্জাপুরের ব্র্যাক চিলিং সেন্টার থেকে ঘোড়াঘাট রেলঘুমটি পর্যন্ত কোথাও কোথাও সড়ক উঁচু-নিচু হয়ে আছে। পিচঢালাই উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে অনেক জায়গায়।
মহাসড়কটিতে নিয়মিত যাতায়াতকারী ব্যাংক কর্মকর্তা শামিম হোসেন ও ট্রাকচালক হৃদয় খান বলেন, সড়কের অনেক স্থান দেবে আলপথের মতো হয়ে গেছে। এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। নিচু স্থানে চাকা পড়লে নালা থেকে যানবাহন সাইড দেওয়া-নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
একই অবস্থা ফুলবাড়ী ঢাকা মোড় থেকে পশ্চিম দিকে রাঙামাটি হয়ে বারাইহাটের কিছু অংশ এবং আমবাড়ী যাওয়ার আগে দিনাজপুর পর্যন্ত। মহাসড়কের এসব স্থান দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী পরিবহন, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর মহাসড়কের এসব এলাকা দিয়ে চলাচল আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, যত্রতত্র উঁচু হয়ে থাকায় এসব অংশ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মোটরসাইকেল উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে। 
কোতোয়ালিসহ ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানার সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে এই মহাসড়কে ১১৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে ঘটনাস্থলে মারা গেছেন ৪৫ জন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু ফুলবাড়ীতে ২২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছে শতাধিক। এ ছাড়া গত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয়টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছে।
দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে গোবিন্দগঞ্জ থেকে দিনাজপুর ১০৬ কিলোমিটার ৪২ ফুট প্রশস্তকরণে ৮৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। রাস্তাটি ৯টি গুচ্ছের মাধ্যমে আট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে নির্মাণকাজ শুরু করে সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ কাজ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ করে। প্রশস্ত ও সংস্কারের কাজ শেষ করার দুই বছরের মাথায় আবারও রাস্তাটি দেবে গিয়ে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলেছে, সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন বছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ওই সড়কের সংস্কার করে দেওয়ার চুক্তি থাকে। এর মধ্যে মহাসড়কে যেখানে সমস্যা হয়েছিল, তারা সেসব জায়গা সংস্কার করেছেন। এখন চুক্তির সময় ২০২৪ সাল পার হয়েছে। তাই তাদের আর কাজ করার সুযোগ নেই। 
তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ বিদুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ২০১৭-১৮ সালে সেই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও চেয়ারম্যানরা ঠিকাদারের কাছে কমিশন বাণিজ্য করেছেন। সড়কের শতকরা ৬০ ভাগ টাকা লুটপাট করে তাদের পকেট ভরেছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের উপকরণ দ্বারা সংস্কার ও প্রশস্তকরণ করে বরাদ্দের অধিকাংশ 
টাকা লুটপাট করায় এখন রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 
এ বিষয়ে দিনাজপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

আসাদুজ্জামান বলেন, অনেক সময় ওভারলোড গাড়ি চলাচলের কারণে যেসব জায়গা উঁচু-নিচু হয়েছে, তা আমরা কেটে ফেলব। সড়কে ৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পৃথকভাবে কাজ করেছে। অনেকেরই চুক্তি শেষে হয়েছে এবং কিছু জায়গায় চুক্তির সময় আছে। সরেজমিন দেখে ঠিকাদারের মাধ্যমে সেই জায়গাগুলো সংস্কার করা হবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন প রশস ত দ র ঘটন সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেন করার দাবিতে একজনের অবস্থান কর্মসূচি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণের দাবিতে একক অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সৌরভ প্রিয় পাল। আজ রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে এই কর্মসূচি পালন করেন। একই দাবিতে আগামীকাল সোমবার চট্টগ্রামের প্রেসক্লাবের সামনে থেকে কক্সবাজার অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দিয়েছেন সৌরভ।

অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে সৌরভের হাতে ধরা পোস্টারে লেখা ছিল, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আর কত লাশ চাই?’ পাশে প্রেসক্লাবের গ্রিলে সাঁটানো আরেকটি পোস্টারে লেখা ছিল ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ অথবা ৪ লাইন করার দাবিতে একক অবস্থান কর্মসূচি’।

বিকেল ৪টা থেকে একা দাঁড়িয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সৌরভ। এই সময় তিনি সড়কটিতে সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দুর্ঘটনার বর্ণনা দেন।

সৌরভ বলেন, ‘আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণের মহাপরিকল্পনা নেওয়া হোক। এখনই চার লাইনের কাজ শুরু করা হোক। এখন কালুরঘাট সেতু হচ্ছে। এটা হলে এই সড়কের ওপর আরও বেশি চাপ বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘আমি ১১টি লাশ দেখেছি। লাশগুলো নিজ হাতে হস্তান্তর করেছি তাঁদের স্বজনদের কাছে। আর কোনো লাশ দেখতে চাই না।’

আরও পড়ুনঈদের ছুটির আট দিনে সড়কে নিহত ১৩২: বিআরটিএ১২ ঘণ্টা আগে

একই দাবিতে আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে থেকে কক্সবাজার অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দিয়েছেন সৌরভ। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে তিনি এই লংমার্চ করবেন।

সৌরভ প্রথম আলোকে জানান, ১১টি প্রতীকী লাশ নিয়ে তাঁরা লংমার্চ করবেন। এতে কোনো ব্যানার থাকবে না। পটিয়া, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলায় পথসভা অনুষ্ঠিত হবে। পরে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।

আরও পড়ুনচট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত বেড়ে ১০০২ এপ্রিল ২০২৫

উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া এলাকায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হন। হতাহতদের শুশ্রূষা ও দাফন কাফনে সৌরভ পালসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন।

আরও পড়ুনলোহাগাড়ায় যাত্রীবাহী দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ৫৩১ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেন করার দাবিতে একজনের অবস্থান কর্মসূচি
  • সড়কের জায়গায় দোকান, দুর্ঘটনার শঙ্কা
  • জঞ্জালে ভরা বেড়ার হুরাসাগর নদের পাড় থেকে বিরক্তি নিয়ে ফিরছেন দর্শনার্থীরা