ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘের পরিবর্তে নতুন সংঘ গঠিত হতে পারে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল।

সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে গাজায় ইসরায়েলি নৃশংস গণহত্যা ও বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “জাতিসংঘের নিরব ভূমিকায় মুসলিম উম্মাহ ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। মুসলমানদের হত্যা করা হলে কোনো মানবাধিকার থাকে না। বিশ্ব মোড়লেরা মুসলমানদের মানুষই মনে করে না। তাদের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহ গর্জে উঠলে কেউ রক্ষা পাবে না।”

আরো পড়ুন:

পঞ্চগড়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে জামায়াতের ইফতার  

শীর্ষ বিনিয়োগ সম্মেলনে থাকবে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির বুথ

ইসরায়েলকে ছিন্নভিন্ন করতে না পারা ইসলামী রাষ্ট্র নেতাদের ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “২০০ কোটি মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বে যারা রয়েছে ইহুদিদের প্রতি তাদের আনুগত্যশীলতা প্রকাশ পাচ্ছে।” 

ইহুদিদের প্রতি নতজানু নীতি পরিহার করে ইসলামী আদর্শে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রধান এবং ওআইসির প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “মানবতাবিরোধী নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া। নেতানিয়াহুর নির্দেশে ফিলিস্তিনের অগণিত বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা সত্বেও জাতিসংঘ চুপ করে বসে রয়েছে। অনতিবিলম্বে জাতিসংঘ কর্তৃক ইসরায়েলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।”

ফিলিস্তিনের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শুধু পতাকা উত্তোলন নয়, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে কঠোর জবাব দিতে হবে উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। তিনি বিশ্বের কাছে শ্রদ্ধা এবং আস্থার এক মহান ব্যক্তি।”

তাই বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসরায়েলি হামলা বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান নূরুল ইসলাম বুলবুল।

তিনি বলেন, “শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ না করলে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে ইসরায়েলের নাম মুছে দিতে হবে। এজন্য ২ শত কোটি মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বোমার আঘাতে মানুষের দেহ যখন ছিন্নভিন্ন হয়ে বাতাসে উড়ে জমিনে পড়ে সেই দৃশ্য কোন মানবতার অংশ?” 

তিনি ধর্মের ভিত্তিতে বিশ্ববাসীকে মূল্যায়ন না করে, মানুষ হিসেবে বিশ্বের সকল মানুষকে সমান মূল্যায়ন করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

দ‌লের কেন্দ্রীয় সদস্য ড.

খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, “ইহুদী গোষ্ঠী আশ্রয়ের জন্য আরব ভূখণ্ডে এসেছে। মুসলিমরা দয়া দেখিয়ে তাদের আশ্রয় দেওয়ার পর তারা ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠন করে। ফিলিস্তিন দখল করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে আমেরিকার মদদে ফিলিস্তিনে বর্বরোচিত নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল।”

তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানান।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, “মুসলিম উম্মাহ যখন ঈদুল ফিতরের উৎসবে ঠিক সেই সময় সন্ত্রাসী ইসরায়েল গোষ্ঠী ফিলিস্তিনের বেসামরিক লোকজনের উপর এমনভাবে হামলা চালিয়েছে, লোকজনের লাশ পাখির মতো আকাশে উড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে জমিনে পড়েছে। এমন নিকৃষ্টতম ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।”

তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লংমার্চ করার প্রস্তুতি নিতে মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানান।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন বলেন, “যুদ্ধ বিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে ইসরায়েল সন্ত্রাসী কায়দায় ফিলিস্তিনে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। ফিলিস্তিনের রাফাহ্ শহর নিঃশেষ করার প্রতিবাদে মুসলিম উম্মাহর উচিত ইসরায়েলকে নিঃশেষ করে দেওয়া। ইসরায়েলের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে পারলে ইসরায়েল দুর্বল ও নিঃশেষ হয়ে যাবে।”

এজন্য তিনি, ইসরায়েলের সব পণ্য ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে বয়কট করার আহ্বান জানান।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, “২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল, ফিলিস্তিনের বেসামরিক লোকজনের উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে এই পর্যন্ত ৬১ হাজার বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করা হয়েছে। ইসরায়েলের পণ্য বয়কট করার মাধ্যমে সন্ত্রাসী ইসরায়েল গোষ্ঠীকে দুর্বল করতে হবে।”

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, “বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষা করা মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জেহাদ করা মুসলমানদের জন্য ফরজ। জাতিসংঘের নিরব ভূমিকা মুসলমানদের ব্যথিত করছে।”

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী দেলাওয়ার হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি শামছুর রহমান।

উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, মাওলানা ফরিদুল ইসলাম, ডা. আতিয়ার রহমান, আবদুস সালাম, মাওলানা মোশাররফ হোসেন, ড. মোবারক হোসেন, কামরুল আহসান হাসান, শাহীন আহমদ খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমনসহ মহানগরীর নেতারা।

সমাবেশে শেষে নূরুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ হাজার-হাজার তৌহিদী জনতা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিজয়নগর হয়ে কাকরাইল মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত পথসভার মাধ্যমে কর্মসূচি সম্পন্ন করে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র ব র দ ধ ক ন দ র য় মজল স র সদস য ও ঢ ক বর বর চ ত ন বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ

মাগুরার সেই ৮ বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে আসামিদের আদলতে হাজির করা হয়।

নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, অভিযুক্ত প্রধান আসামি হিটু শেখসহ সবাইকে আদালতে হাজির করা হয়। আজ মামলার ৩ থেকে ৫ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। সাক্ষীরা হচ্ছেন- আছিয়ার চাচা মোহাম্মদ ইব্রাহিম, হিটু শেখের এলাকার বাসিন্দা নিজানান্দুয়ালী গ্রামে হযরত আলী ও মাদ্রাসা শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। আগামীকাল মঙ্গলবার মামলার আরও ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছে আদালত। এ মামলায় মোট মাট ৩৭ জন সাক্ষীর নাম রয়েছে।

বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে গত ৬ মার্চ রাতে মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের কাছে ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশু। পরে তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, অবস্থার আবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতির পর সিমএমএইচ এ ভর্তি করা হলে ১৩ মার্চ শিশুটি মারা যায়।

এ ঘটনায় ওই শিশুর মা তার মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখ, মেয়ের স্বামী সজিব শেখ, তার ভাই রাতুল শেখ ও হিটু শেখের স্ত্রী রোকেয়া বেগমের নামে মাগুরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলায় অভিযুক্ত সব আসামিদের গ্রেপ্তার করে ও আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে পুলিশ আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। বিচারক প্রধান আসামি হিটু শেখকে ৭ দিন ও অপর তিন আসামিকে ৫ দিনের রিমান্ড দেয়। রিমান্ডে প্রধান আসামি হিটু শেখ ধর্ষণের কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ