বাণিজ্য–সুবিধা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়ে ইউএসটিআরকে চিঠি দিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
Published: 7th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের শুল্ক তালিকায় বর্তমানে ১৯০টি পণ্যের ওপর শুল্ক হার শূন্য অর্থাৎ কোনো শুল্ক নেই। বাংলাদেশের ট্যারিফলাইনের আরও ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে আজ সোমবার সন্ধ্যায় এ তথ্য উল্লেখ করে চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে এ চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা প্রত্যাহার করেছে, তার পর থেকে বাংলাদেশ সব রপ্তানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক দিয়ে আসছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর গড়ে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ হারে শুল্ক রয়েছে। এর মধ্যে কাঁচা তুলা আমদানিতে শুল্ক নেই। আর লোহার স্ক্র্যাপ আমদানিতে শুল্কহার ১ শতাংশ।
বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় তুলা আমদানিকারক দেশ উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এ তুলা দিয়ে চলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্যগুলোর ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে।
২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা ফোরাম চুক্তি (টিকফা)। টিকফা অনুযায়ী উভয় দেশই বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পথে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা যৌথভাবে দূর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশ সব সময় গঠনমূলক সংলাপ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী এবং বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিতে যদি কোনো বাধা থাকে, তা দূর করতেও প্রস্তুত। এ বিষয়ে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের বাণিজ্য শাখার সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণেও উভয় পক্ষ একমত হয়েছে।
শুল্কহার কমানো, অশুল্ক বাধা দূর করা এবং পারস্পরিক বাণিজ্যকে আরও লাভজনক করতে বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ—এ কথা জানানো হয় চিঠিতে। উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে আমদানি নীতি হালনাগাদ করা, শুল্কপ্রক্রিয়া সহজ করা, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, ট্রেডমার্ক ও পেটেন্ট সুরক্ষা ইত্যাদি।
চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চুক্তি, মার্কিন গাড়ি নির্মাতাদের বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সয়াবিন, গম, তুলা ইত্যাদি বড় আকারে আমদানির উদ্যোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি ইক্যুইটি তহবিলকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সেবামূলক খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এ উদ্যোগগুলো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ভারসাম্য আনতে এবং উভয় দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর সরকারসহ শেখ বশিরউদ্দীন ব্যক্তিগতভাবে জেমিসন গ্রিয়ারের দপ্তরের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানানো হয় চিঠিতে।
আজ সন্ধ্যায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাণিজ্য বাধাগুলো দূর করার উদ্যোগের কথা তাদের জানিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট আমদানির ৭৫ শতাংশ অবদান চারটি পণ্যে। এগুলো হচ্ছে তুলা, লোহার স্ক্র্যাপ, সয়া এবং জ্বালানি পণ্য। আর যুক্তরাষ্ট্রে আমরা রপ্তানি করি ৮০০ কোটি ডলারের পণ্য। বাকি ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার অন্য দেশে। একক দেশ যুক্তরাষ্ট্রর জন্য আমরা বাকি ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করতে চাই না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট দ র কর আমদ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ নিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুই চিঠি দেবে সরকার
বহুল আলোচিত রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রেক্ষিতে এবার ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দুটি চিঠি পাঠানো হবে। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে একটি চিঠি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এবং বাণিজ্য উপদেষ্টার পক্ষ থেকে একটি চিঠি ইউএসটিআর’র কাছে পাঠানো হবে।
রবিবার (৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, বৈঠকে চারজন উপদেষ্টা, একজন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি, একজন স্পেশাল অ্যাম্বাসেডর, দশজনের মতো সচিব এবং বড় ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে চারজন প্রতিনিধি ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি ইউএসএ অফিশিয়াল। সেটা ঢাকায় তাদের অ্যাম্বাসি অফিসিয়াল, ওদিক দিয়ে ইউএসএ-এর ইউএসটিআর। আমাদের যেটা ডিসিশন, আমরা দুটি চিঠি দেব। দুইটা চিঠি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যাবে। একটা চিঠি যাবে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। আর একটা চিঠি যাবে আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা তরফ থেকে ইউএসটিআর’র কাছে।
চিঠিতে কী থাকবে? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, চিঠিতে কী কী থাকবে, কী ধরনের ল্যাঙ্গুয়েজ সেটা নিয়েই আজকে আলোচনা হয়েছে। আজকে চারজন উপদেষ্টা ছিলেন, একজন হাইলি রিপ্রেজেন্টার ছিলেন, একজন স্পেশাল অ্যাম্বাসেডর, আমাদের প্রায় দশজনের মতো সেক্রেটারি ছিলেন, যারা বড় ব্যবসায়ী তাদের মধ্য থেকে চারজন প্রতিনিধি ছিলেন। সবার সঙ্গে কথা হয়েছে, কথা হওয়ার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুটি চিঠি যাবে।
চিঠিতে যা-ই থাকুক সেটা আমাদের বিজনেসবান্ধব হবে। আমাদের বাংলাদেশের বিজনেসের স্বার্থটা দেখা হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে কম্পিটিটিভ যেসব কান্ট্রি আছে তাদের চেয়ে আমরা আরো বিজনেসবান্ধব হব, এই চিঠিটা হবে। আরো বেশি বিজনেসবান্ধব হবে, যাতে করে ইউএসএ .... ইউএসএ এবং আমাদের জন্য উইন উইন সিচুয়েশন হয় এবং আমাদের জন্য মার্কেট এক্সেসটা যেন আরো বাড়ে, বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, আমরা চাই ইউএসএ পৃথিবীর লার্জেস্ট মার্কেট, সেখানে আমাদের আরো অনেক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করার সুযোগ আছে। যেটা আমাদের উপদেষ্টারা এবং বিজনেস লিডাররা আজকে বললেন।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ