সন্তানকে ব্যবহার করে ভিউ ব্যবসা, ‘ক্রিম আপা’র ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রশাসন
Published: 7th, April 2025 GMT
কখনো কড়া রাসায়নিকে মেয়ের চুল রং করে দিচ্ছেন। কখনো মাথার চুল ন্যাড়া করে দিচ্ছেন। কান ফুটো করার বন্দুকের মতো যন্ত্র দিয়ে কান ফুটো করে দিচ্ছেন। কানে ভারী কানের দুল পরিয়ে কড়া মেকআপ করা, বাজে গালি দেওয়া, মেয়ের মুখের সামনে থেকে খাবার কেড়ে নেওয়া, মেয়ের মুখে কুলি ফেলা, ধমক দেওয়া, ঘুমন্ত মেয়েকে ঠেসে খাওয়ানো, চড় মারাসহ নানা কাজ করতে থাকেন ক্যামেরার সামনে। টিকটক বা ফেসবুকে এসব ভিডিও দিচ্ছেন শারমীন শিলা নামের এক নারী। তিনি গায়ের রং ফরসা করার ক্রিম বিক্রি করেন বলে ফেসবুকে ‘ক্রিম আপা’ বা ‘কিরিম আপা’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন।
শারমীন শিলার মেয়ের বয়স দেড় বছর। ক্যামেরার সামনে তিনি তাঁর ১২ বছর বয়সী ছেলেকেও হাজির করেন। তবে ছেলের সঙ্গে তুলনামূলক ভালো ব্যবহার করেন। শারমীন শিলা ভিউ পেতে বা অনলাইনে টাকা আয়ের জন্য নিজের সন্তানকে ক্যামেরার সামনে এভাবে নির্যাতন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তুলেছেন তাঁর ভিডিও দেখা ব্যক্তিরা। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।
গত রোববার ‘একাই একশো’ নামের শিশুদের সুরক্ষায় সামাজিক আন্দোলনের পক্ষে সাদাত রহমানসহ অন্যরা ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘ক্রিম আপা’র বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তিন দিনের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। স্মারকলিপির অনুলিপি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া হয়েছে।
তবে কয়েক দিন ধরে আলোচিত ক্রিম আপা ফেসবুকে লাইভে এসে দাবি করেছেন, তিনি তাঁর সন্তানদের কখনোই নির্যাতন করেননি। নির্যাতন করলে তো ক্যামেরার সামনে করতেন না। তিনি ‘গুণী নারী’ তাই অন্যরা হিংসা করে এ ধরনের অভিযোগ দিচ্ছে। তিনি সন্তানদের নিয়ে ভালো আছেন, ছেলেকে দিয়ে বলানো এমন ভিডিও শেয়ার করেছেন। তবে শারমীন শিলা বা কিরিম আপা ভিডিও আপলোড করে আবার তা ডিলিট বা মুছেও ফেলছেন।
সাভারের বাইপাইল এলাকায় ‘ক্রীম আপা বিউটি পারলার’ নামে শারমীন শিলার একটি বিউটি পারলার আছে। তিনি ভিডিওতে কীভাবে ক্রিম ব্যবহার করতে হবে, তা জানান। এর বাইরে কী রান্না করছেন, কী খাচ্ছেন—এসব নিয়ে করা বিভিন্ন ভিডিওতে মেয়েকে হাজির করেন। মেয়ে ভয়ে চুপ করে থাকে। কখনো হাসে আবার কখনো অস্বাভাবিকভাবে কাঁদে। মেয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে থাকে তা বিভিন্ন ভিডিওতে স্পষ্ট বোঝা যায়।
২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন বাংলাদেশের কিশোর সাদাত রহমান। সাইবার টিনস নামে একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে ভূমিকা রাখার কারণে সাদাতকে এই পুরস্কার দেয় আন্তর্জাতিক সংগঠন কিডস রাইটস।
‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’ শারমীন শিলার বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দেওয়া প্রসঙ্গে বর্তমানে স্নাতকপড়ুয়া সাদাত প্রথম আলোকে বলেন, মার্চ মাসে মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ফেসবুকের মাধ্যমে ‘একাই একশো’ শিশুদের সুরক্ষায় সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়েছে। জেলা পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে শিশু সুরক্ষায় কাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শারমীন শিলা বা ক্রিম আপার বিরুদ্ধে এর আগেও এসব অভিযোগে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল বলে জানা গেছে। তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই দুই শিশুর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় এবার জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ফেসবুকে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন, বিশেষ করে সন্তানের বাবা–মায়েরা চোখের সামনে দুটি বাচ্চাকে এভাবে নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না।
সাদাত বলেন, তাঁরা জেলা প্রশাসক বরাবর যে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন, তা জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো.
আজ সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রাফিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা স্মারকলিপি পাওয়ার পর সাভারের ইউএনওকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
সাভারের ইউএনও মো. আবু বকর সরকার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শিশু বা সন্তানকে নির্যাতন করার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে ওই নারীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই নারী চিঠির সদুত্তর দিতে না পারলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শারমীন শিলা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিউটি পারলার আছে, হিংসায় ষড়যন্ত্র করে এ ধরনের অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। তিনি তাঁর ১২ বছর বয়সী ছেলে এবং দেড় বছর বয়সী মেয়েকে অনেক ভালোবাসেন। তারা দুজন তাঁর ‘কলিজার টুকরা’। তাদের নির্যাতন করার প্রশ্নই আসে না। তিনি এরপর আর এ ধরনের ভিডিও তৈরি করবেন না।
সাদাত রহমান বলছেন, শিশুদের অনলাইন সুরক্ষায় নীতিমালা তৈরি করতে হবে। নির্দিষ্ট বয়সের আগে সন্তানকে বা কোনো শিশুকে দিয়ে কেউ যাতে অনলাইনে ভিউ ব্যবসা করতে না পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে বা বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। তা না হলে শুধু ক্রিম আপা নন, অন্য বাবা–মায়েরাও সন্তানকে দিয়ে ভিউ ব্যবসা করাতে উৎসাহিত হতে পারেন। এতে শিশুদের শৈশবের আনন্দ হারিয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেনের শিশু সুরক্ষাবিষয়ক পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত শারমীন শিলা ক্যামেরার সামনে সন্তানের সঙ্গে দৃশ্যত যা করছেন, তাকে নির্যাতনমূলক আচরণ বলা যায়। তবে যেহেতু তিনি পরিকল্পনা করে করছেন, তাই সন্তানকে নির্যাতন করছেন সরাসরি তা বলার উপায় নেই। অনলাইনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি সন্তানকে যেভাবে উপস্থাপন করছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে তিনি অভিভাবকের যে দায়িত্ব, তা পালন করছেন না। শিশুর বিকাশে এটি সমস্যা হতে পারে। নৈতিকতার ক্ষেত্রেও এ ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক য ম র র স মন প রথম আল ক স ম রকল প ক র ম আপ এ ধরন র ন করছ ন ব যবস থ ফ সব ক র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
১৫ দিন নিজের প্রস্রাব নিজে পান করেছি: পরেশ রাওয়াল
নিজের প্রস্রাব নিজে পান করে ‘জাদুকরীভাবে’ সুস্থ হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন বলিউডের প্রবীণ অভিনেতা পরেশ রাওয়াল। কয়েক দিন আগে লালনটপকে দেওয়া সাক্ষাৎকার এমন দাবি করেন ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারজয়ী এই তারকা।
এই আলাপচারিতায় পরেশ রাওয়াল জানান, শুটিং করতে গিয়ে হাঁটুতে আঘাত পান তিনি। এরপর মুম্বাইয়ের নানাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে দেখতে যান অজয় দেবগনের বাবা কোরিওগ্রাফার বীরু দেবগন। তখন পরেশ রাওয়ালকে ‘নিজের প্রস্রাব পান করার’ রীতিবিরুদ্ধ পরামর্শ দেন বীরু দেবগন।
পরেশ রাওয়াল বলেন, “আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যদি নিজের প্রস্রাব পান করতেই হয়, তবে একবারে তা পান করব না। বরং বিয়ারের মতো চুমুক দেব। কারণ আমি এটি সঠিকভাবে করতে চাই।”
আরো পড়ুন:
‘সাজিদ খান আমার পোশাক খুলতে বলেন’
মা হতে যাচ্ছেন শিরিন
পরের ঘটনা বর্ণনা করে পরেশ রাওয়াল বলেন, “আমি টানা ১৫ দিন নিজের প্রস্রাব নিজে পান করেছি। ১৫ দিন পর চিকিৎসকের কাছে যাই। ডাক্তার আমার এক্স-রে করে হতবাক হন। ডাক্তার জানতে চান, ‘এই সিমেন্টিং কীভাবে হলো?’ ডাক্তার দেখলেন, একটি সাদা রেখা তৈরি হচ্ছে। ২ থেকে আড়াই মাস পর আমার ছাড়পত্র পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেড় মাসের মাথায় আমাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এটা জাদুর মতো ছিল।”
পরেশ রাওয়াল অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘দ্য স্টোরিটেলার’। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি মুক্তি পায় এটি। ৬৯ বছরের পরেশ এখনো অভিনয়ে দারুণ সরব। বর্তমানে তার হাতে ৮টি সিনেমার কাজ রয়েছে।
অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয় পরেশ রাওয়াল। ২০১৪ সালে গুজরাট অঞ্চল থেকে বিজেপির টিকিট নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর আর নির্বাচনে অংশ নেননি। কিন্তু বিজেপির প্রতি তার সমর্থন-কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
ঢাকা/শান্ত