চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে নিয়ে জেলার রাউজান ও নগরের বায়েজিদ বোস্তামীতে মাইকিং করেছে পুলিশ। তবে রিমান্ডে থাকা এই ‘সন্ত্রাসীর’ কোনো সহযোগীকে গ্রেপ্তার কিংবা অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, অভিযানে ফেরার পথে ‘সচেতনতা’ সৃষ্টির জন্য মাইকিং করা হয়েছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘রিমান্ডে নেওয়া হয় আসামির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্‌ঘাটনের জন্য। কার কাছে অস্ত্র আছে, কে অর্থ দেয়, নেপথ্যে কে ইত্যাদি জানার বিষয় আছে। মাইকিং করে আসামিকে প্রদর্শনের নজির নেই। এতে পলাতক আসামিরা পালানোর সুযোগ পান।’

গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেন লোকজন। এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি তাঁকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন নগর পুলিশ কমিশনার। তার আগের দিন সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফেসবুক লাইভে এসে পেটানোর হুমকি দেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্রসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।

সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেট কারকে ধাওয়া দিয়ে গুলি করে ঝাঁঝরা করা হয়। এতে দুই আরোহী নিহত হন। ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ও সাজ্জাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশের ধারণা। সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ার জেরে তাঁর অনুসারীরা সরোয়ারের সহযোগীদের ওপর হামলা চালান বলে অনুমান করছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের একজন বখতিয়ার হোসেনের মা ফিরোজা বেগম গত মঙ্গলবার বাকলিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় সাজ্জাদ, তাঁর স্ত্রী তামান্না শারমিনসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। মামলার অন্য পাঁচ আসামি হলেন মো.

হাছান, মোবারক হোসেন, মো. খোরশেদ, মো. রায়হান ও মো. বোরহান। তাঁরা সাজ্জাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এদিকে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ মো. বেলাল, মো. মানিক ও সজীব নামের তিনজনকে শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সাতটি মোটরসাইকেলে ১৩ জন হামলায় অংশ নেন। তাঁদের হাতে ১০টি পিস্তল ও শটগান ছিল। কিন্তু এখনো কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি।

গতকাল রোববার চান্দগাঁও থানার ইট ও বালু ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দফায় সাজ্জাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত বছরের ২১ অক্টোবর দুপুরে গুলি করে খুন করা হয় আফতাব উদ্দিনকে। এরপর রাতে সাজ্জাদকে নিয়ে রাউজানের কদলপুর এলাকায় যায় পুলিশ। সেখানে তাঁকে নিয়ে মাইকিং করে পুলিশ। পরদিন আজ সোমবার বিকেলে বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায়ও মাইকিং করা হয়।

গ্রেপ্তার সাজ্জাদকে নিয়ে পুলিশের মাইকিং করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, চান্দগাঁও থানা–পুলিশ ও পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেররিজমের সোয়াতের সদস্যরা সাজ্জাদকে ঘিরে হাঁটছেন। হাতকড়া পরা সাজ্জাদের গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট ছিল। পুলিশের একজন হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন ‘সন্ত্রাসী ও ত্রাস ছোট সাজ্জাদকে সিএমপি কমিশনার স্যারের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাষ্ট্রের কাছে কোনো সন্ত্রাসের জায়গা হবে না। আপনাদের এলাকায় যদি কোনো সন্ত্রাসী নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠে, তাহলে ছোট সাজ্জাদের মতো তাদের পরিণতি হবে।’

জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সাজ্জাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাউজানে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে ফেরার পথে লোকজনকে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মাইকিং করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রমজীবী নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অবহেলিত

নারী হওয়ার কারণে মজুরি বৈষম্য, কাজের নিরাপত্তাহীনতার সমস্যাসহ বিশেষভাবে যৌন হয়রানির বিষয়টি যুক্ত হয়।

বাংলাদেশে শ্রমজীবী নারীর অনুপাত দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর দুটি বড় কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে– একজন ব্যক্তির আয় দিয়ে একটি পরিবার চলবে– এমন অবস্থা বর্তমান সময়ে নেই। এর ফলে ওই পরিবারের নারী সদস্যকে আয়-রোজগারের পথ খুঁজতে হচ্ছে। খুঁজতে গিয়ে এ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যারা শ্রমজীবী, তাদের যে কাজের সুযোগ থাকে, পোশাক খাত এর মধ্যে অন্যতম।
গার্মেন্টস প্রাতিষ্ঠানিক খাত। এ ছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবেও অনেক ধরনের কাজ রয়েছে। এর মধ্যে মুদি দোকান, মাটি কাটা, গৃহকর্মী থেকে শুরু করে নানা ধরনের কাজ হতে পারে। কোনোটাই স্থায়ী নয়। এগুলোর কোনো নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও নিরাপত্তা নেই। কাজ করতে হয় খুব নাজুক ও অনিশ্চিত অবস্থায়। তবুও জীবিকার তাগিদে এসব কাজ নারীকে করতে হয়। দ্বিতীয় কারণ হলো, অনেক পরিবার ভেঙে যায়। স্বামী কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করে না। বিয়ে করে ছেড়ে দেয়; চলে যায় কিংবা স্বামী থাকা সত্ত্বেও কোনো দায়িত্ব নেয় না সংসার ও সন্তানের। তখন নারীকে বাধ্য হয়ে কাজে নামতে হয়। আবার আত্মসম্মানবোধ ও পরিচয়ের তাগিদ থেকেও একজন নারী নিজের একটি কর্মজীবন তৈরি করেন। 
এসব কারণে আমাদের দেশে নারী শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি; যা সরকারি হিসাবে যথাযথভাবে উঠে আসে না। শ্রমিক হিসেবে তাঁর স্বীকৃতিও এখন পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে আসে না। না আসার ফলে বাংলাদেশে তাদের আয়-রোজগারের নির্দিষ্টতার কোনো বিধিমালা নেই। 
ঈদের আগে গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন করেছে। গত কয়েক মাসে বারকয়েক দেখা গেছে, তারা বকেয়া পরিশোধের জন্য রাস্তায় এসেছে। এটি হলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সব থেকে সংগঠিত শ্রমিকদের অবস্থান। সেখানে নারীরা তাদের মজুরি বাকি, অসম্মানজনক অবস্থাসহ সব দাবি জানাচ্ছে। 
সরকারে পরিবর্তন এলেও, এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সমস্যা। অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার জায়গা আরও বেশি। যেদিন কাজ করবেন, সেদিন তাঁর আয় হবে। যদি তাঁর কোনো অসুখ-বিসুখ হয়, সন্তানের দায়িত্ব নেওয়া ও তাঁর কোনো সমস্যা হলে সেদিন কাজে যেতে পারেন না নারী। কাজ না করলে তাঁর সেদিনের আয়ও নেই। আয় না হলে তাঁর প্রাত্যহিক ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ের কোনো পথ থাকে না। ফলে শ্রমজীবী নারীরা আমাদের দেশে সংখ্যার দিক থেকে গরিষ্ঠ হলেও তারা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। তাদের কোনো মতামত ও কর্মকাণ্ডের ফলে কোনো আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। সরকার পরিবর্তনের পরও তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। নারীরা আরও বেশি বঞ্চিত ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নারী হওয়ার কারণে মজুরি বৈষম্য, কাজের নিরাপত্তাহীনতার সমস্যাসহ বিশেষভাবে যৌন হয়রানির বিষয়টি যুক্ত হয়। গত বছরখানেকের পত্রিকা ঘেঁটে দেখা যাবে, শ্রমজীবী নারী ধর্ষিত, খুন ও নিগৃহীত হওয়ার খবর ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সরকারের কাছেও এর সঠিক কোনো হিসাব নাই। যেসব শ্রমজীবী নারী ধর্ষণ ও খুনের শিকার হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগ কর্মক্ষেত্রে যাওয়া-আসার পথে কিংবা নিজ বাড়িতে। 
এ পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করে শ্রমজীবী নারী টিকে আছেন। তাদের টিকে থাকার মধ্য দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের অস্তিত্ব টিকে থাকা নির্ভর করে। এটি নারী জীবনের একটা যুদ্ধ; যার মধ্য দিয়ে নারী তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজের আগুনে পাঁচজন দগ্ধ
  • ‘এবং বই’ বুক রিভিউ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত
  • দাউদ হায়দার: কবির দেশ ছাড়ার কষ্ট
  • ছিনতাইকারী টান দেয় ভ্যানিটি ব্যাগ, নারীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় প্রাইভেটকার
  • নারীকে গাড়ির সঙ্গে টেনে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা
  • চলন্ত প্রাইভেটকারে ছিনতাইকারী এসে ছোঁ মেরে টান দিল ব্যাগ, টেনে নিয়ে গেল নারীকে
  • বঙ্গীয় সংস্কৃতি বিদেশে, বাঙালি একাত্ম
  • শিশুর জন্য গ্রোথ হরমোন কেন, কখন
  • পুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা
  • শ্রমজীবী নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অবহেলিত