বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের একটি ছয় তলা বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাটসহ ৮ দশমিক ৮৮ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তার নামে থাকা ১৩ ব্যাংক হিসাব ও একটি গাড়ি অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

সোমবার (৭ এপ্রিল) ঢাকার সিনিয়র মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

জব্দ হওয়া বাড়িটি রাজধানীর মিরপুরের পীরের বাগ এলাকা রয়েছে। এছাড়া এক হাজার ১০০ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট পশ্চিম শেওড়াপাড়া এলাকায় রয়েছে। বাড়ি, ফ্ল্যাট ও ৮ দশমিক ৮৮ বিঘা জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৭৯৭ টাকা। তার গাড়ির মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া অবরুদ্ধ হওয়া ব্যাংক হিসাবে ৬৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা রয়েছে।

আরো পড়ুন:

শেরপুরে ২ ইউএনওসহ সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা

বর পক্ষকে উদ্ধারে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ, থানায় মামলা

এদিন দুদকের সহকারী পরিচালক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আল আমিন এসব সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর রুহুল ইসলাম খান শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।

আবেদনে বলা হয়, আবেদ আলীর নামে স্থাবর সম্পদ এবং অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। আবেদ আলীর নামে অর্জিত স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর বা দলিল সম্পাদন বা অন্য কোনো পন্থায় মালিকানা পরিবর্তন বা হস্তান্তরের সম্ভাবনা রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সৈয়দ আবেদ আলীর নামে অর্জিত স্থাবর সম্পদ জব্দ এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা আবশ্যক। 

প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গত বছরের ৮ জুলাই আবেদ আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। গত ৫ জানুয়ারি পাঁচ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন ছাড়াও প্রায় ৪৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে আবেদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

ঢাকা/মামুন/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবর দ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

রৌমারীতে নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করলেন প্রকৌশলী

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার নদী ভাঙন কবলিত এলাকা খেদাইমারী, সুখেরবাতি, ঘুঘুমারী, সোনাপুর ও নামাজের চর পরিদর্শন করেছেন রংপুর পানি উন্নয়ন (বাপাউবো) সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব। সোমবার দুপরে এসব ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। 

প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, ‘রৌমারী ও রাজীবপুর খুবই ভাঙন কবলিত এলাকা। ফলে স্বাভাবিকভাবে আমাদের একটা নজরদারিতে থাকে এই অঞ্চলগুলো। বন্যার আগে কোন এলাকাগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেগুলো পরিদর্শন আমরা মাঝে মাঝে করি। তারপরও বন্যার সময়ে সব জায়গা পরিদর্শন করা হয়। পাশাপাশি বরাদ্দ-চাহিদা পাঠানো হয়। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে কিছু কিছু কাজ করেছি। এবারও একইভাবে নিয়মিত পরিদর্শনের আওতায় কোন জায়গাগুলোতে আগামী বন্যায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, এই তথ্য সংগ্রহ করছি। 

তিনি বলেন, ‘এর বাইরেও এলাকাব্যাপী একটি প্রকল্প দেওয়া আছে। পুরো রৌমারী ও রাজীবপুরকে ঘিরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার, ২৬ কিলোমিটার রৌমারী ও রাজীবপুরে। আর ৪ কিলোমিটার জিঞ্জিরাম নদী তীর সংরক্ষণ দেওয়া আছে। এ প্রকল্পটি যদি পাস হয় তাহলে পুরো এলাকাটাই ভাঙন থেকে মুক্তি পাবে।’ পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান, সহকারী প্রকৌশলী আ.কাদের, রৌমারী নদী রক্ষা সংগঠক মহিউদ্দিন মহির, ট্রোসা-২ প্রকল্পের প্রজেক্ট অফিসার খায়রন্নেসা সরকার ও প্রভাষক আক্তারুজ্জামান প্রমুখ।
    
ভুক্তভোগী স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়া ও কমার সঙ্গে সঙ্গে রৌমারী উপজেলায় দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। এতে খেদাইমারী, সুখেরবাতি, ঘুঘুমারী, সোনাপুর ও নামাজের চর, উত্তর খাউরিয়া, ঘুঘুমারী, চর ইটালুকান্দা, চর খেদাইমারীর প্রায় ৫০০ মানুষের ভিটেমাটি, হাজার হাজার একর আবাদি জমি, পাঁচটির বেশি শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় বাজার, মসজিদসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে কিংবা অন্যের ভিটায় ঠাঁই নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয় ভাঙন কবলিত মানুষদের। নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় নদী তীরবর্তী বাড়ির বাসিন্দাদের। কখন যে ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায় তা নিয়ে দুচিন্তায় থাকতে হয় তাদের। ভিটেমাটি হারানো তাদের প্রতিবছরের দুঃখ গাথা। তবে শুষ্ক মৌসুম ছাড়া সারা বছর কমবেশি ভাঙতে থাকে নদী। 

রৌমারী নদী রক্ষা সংগঠক মহিউদ্দিন মহির বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের বাতাস এখন ভাঙন কবলিত মানুষদের কান্নায় ভারি। টানা বর্ষণে খোলা আকাশের নিচে না করতে পারে রান্না, না থাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই। প্রাকৃতিক ক্রিয়াদির ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত নারীরা। খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে রাত নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। নদীপাড়ের বাসিন্দা ছলেমন অন্যের বাড়িতে কাজ করে চরের মধ্যে দুই কাঠা জমি কিনে ঘর তুলেছিলেন। সেটাও এবার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবু দাবি একটাই- ত্রাণ নয়, নদী ভাঙন থেকে পরিত্রাণ চান তিনি।

২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের বাম তীর রক্ষার নামে সরকারিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার ডিপিপি প্রণয়ন হলেও, তার সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রতিবছর ভাঙনের তালিকায় আসছে নতুন নতুন এলাকা। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে এ অঞ্চলের নিঃস্ব, অসহায় মানুষ বারবার লিখিতভাবে জানানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এতেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

রৌমারীকে বাঁচাতে হলে নদী ভাঙন প্রতিরোধের পাশাপাশি ঘরবাড়ি, জমিহারা মানুষের পুনর্বাসন প্রয়োজন। সরকারকে ভাঙন কবলিত মানুষদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। এই অভাবী জনপদের বেশির ভাগ মানুষকে বছরের ছয় মাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়াতে হয়। এলাকায় কর্মসংস্থান হলে তাদের ছিন্নমূল জীবনের অবসান ঘটবে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ