যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আরও ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে বাংলাদেশ। সরকারে এমন উদ্যোগের কথা জানিয়ে আজ সোমবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কাছে চিঠি লিখেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

এর আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা বাড়তি ৩৭ শতাংশ তিন মাসের জন্য স্থগিত চেয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা প্রত্যাহার করে। এরপর থেকে বাংলাদেশের সকল রপ্তানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়। অথচ বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর গড়ে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। উল্লেখ্য, কাঁচা তুলা ও লোহার স্ক্র্যাপের ক্ষেত্রে আমাদের শুল্ক হার যথাক্রমে শূন্য ও এক শতাংশ।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় তুলা আমদানিকারক দেশ, যা দিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প চালিত হয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের পণ্যগুলোর ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের শুল্ক তালিকায় ১৯০টি পণ্যের ওপর শুল্ক হার শূন্য এবং আরও ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে।

এতের আরও বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) অনুযায়ী, উভয় দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পথে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা যৌথভাবে দূর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সব সময় গঠনমূলক সংলাপ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিতে যদি কোনো বাধা থাকে তা দূর করতে প্রস্তুত। এ বিষয়ে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের বাণিজ্য শাখার সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার শুল্ক হার কমানো, সব ধরনের অশুল্ক বাধা দূর করা এবং পারস্পারিক বাণিজ্যকে আরও লাভজনক করতে বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে: আমদানি নীতির হালনাগাদ, কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, ট্রেডমার্ক ও পেটেন্ট সুরক্ষা ইত্যাদি।

এছাড়া আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি, মার্কিন অটো নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সয়াবিন, গম, তুলা ইত্যাদি বড় আকারে আমদানির উদ্যোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সেবামূলক খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

চিঠিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, তার বিশ্বাস এসব উদ্যোগ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্য আনতে এবং উভয় দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে। প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং তাঁর সরকারসহ বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে ইউএসটিআর দপ্তরের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বেশির দেশের পণ্যে এমন শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। যে দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–ঘাটতি বেশি, সেই দেশের ওপর বেশি হারে শুল্ক আরোপ হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। বাংলাদেশেও সরকারের উচ্চমহল ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ প্রধান উপদেষ্টা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা এ বাড়তি শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে দুই চিঠি দেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ককর ব ণ জ য উপদ ষ ট সরক র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের দুর্ভাগ্য, পেহেলগামের ঘটনায় সবর্দলীয় সভায় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকলেন না: কংগ্রেস সভাপতি

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামের হামলা ‘কাশ্মীরিয়ৎ’–এর ওপর আক্রমণ। জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে আজ সোমবার সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা এক প্রস্তাবে এ কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবে এ কথাও বলা হয়েছে, ওই ঘৃণ্য ও জঘন্য আক্রমণের মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার কূটনৈতিক স্তরে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকার তা অনুমোদন ও পূর্ণ সমর্থন করছে।

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বদলীয় বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেছেন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।

জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার অধিবেশনে প্রস্তাবটি পেশ করেন উপমুখ্যমন্ত্রী সুরেন্দ্র চৌধুরী। পেহেলগামের ঘটনায় নিহতদের স্মৃতিতে কিছু সময় নীরবতা পালন করা হয়। ওই হামলায় নিহত স্থানীয় ঘোড়াওয়ালা সৈয়দ আদিল হুসেন শাহর সাহসিকতা ও মানসিকতার বিশেষ উল্লেখ করে বলা হয়, সন্ত্রাসীদের হাত থেকে নিরীহ পর্যটকদের বাঁচাতে তিনি বীরের মতো প্রাণ দিয়েছেন। দেশের সংবিধানে যে মূল্যবোধের কথা বলা হয়েছে, ওই হামলা ছিল তার প্রতি আক্রমণ। কাশ্মীরি জনতার যাবতীয় মূল্যবোধ, মানবিকতা, সৌভ্রাতৃত্ববোধ, শালীনতা—এককথায় যা ‘কাশ্মীরিয়ৎ’ বলে পরিচিত, ওই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল তাতে আঘাত করা। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা।

পেহেলগামের হামলার পরদিন ভারত যা কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যেমন সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত রাখা, ভিসা বাতিল করা ও অন্যান্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ, প্রস্তাবে তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়।

পেহেলগামের সন্ত্রাসী হানার পর কেন্দ্রীয় সরকার সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিল। সেই বৈঠকে উপস্থিত সব বিরোধী নেতা এই সন্ধিক্ষণে সরকারের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর কথাও জানিয়েছিলেন। প্রত্যেকেই বলেছিলেন, পরিস্থিতির মোকাবিলায় সরকার যা উপযুক্ত মনে করবে, বিরোধীদের তাতে সম্মতি থাকবে।

কিন্তু সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর সেই অনুপস্থিতির কড়া সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। সোমবার রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে এক অনুষ্ঠানে সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশের দুর্ভাগ্য, সব দলের নেতারা পেহেলগাম নিয়ে ডাকা সভায় উপস্থিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রী অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি ব্যস্ত ছিলেন বিহারে ভাষণ দিতে।

খাড়গে বলেন, দেশ সবার আগে। তারপর দল বা ধর্ম। দেশের জন্য সবার জোটবদ্ধ থাকা জরুরি। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যখনই দেশ এগোতে থাকে, এ ধরনের লোকজন চেষ্টা করে তাদের পিছু টানতে। কংগ্রেসকে ওইভাবে দমানো সম্ভবপর নয়।

বিজেপির সমালোচনা করে খাড়গে বলেন, কংগ্রেস ঐকবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে, ওরা দেশকে ভাঙার চেষ্টা করে। কংগ্রেস সংবিধান রক্ষার কথা বলে, ওরা অমান্য করতে চায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ