কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় দুধকুমার নদে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হওয়া মাদ্রাসাছাত্রের মরদেহ এক দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তার মরদেহ নদে ভেসে উঠতে দেখে এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার করে।

ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. তাসিম বিল্লাহ ওরফে সাজিম (১৩)। সে নাগেশ্বরী পৌরসভার পুরাতন বাজারের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। চার মাস আগে নাগেশ্বরী দারুল আবরার ক্যাডেট মাদ্রাসা থেকে হাফেজি পাস করেছে সে।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আরও তিন বন্ধুর সঙ্গে উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের বড়মানী এলাকায় দুধকুমার নদের তীরে বেড়াতে যায় তাসিম বিল্লাহ। পরে তাসিম ও তার এক বন্ধু নদে গোসল করতে নেমে সাঁতার কেটে নদ পার হয়। ফেরার সময় মাঝনদে ডুবে গিয়ে নিখোঁজ হয় তাসিম। এ সময় অন্যদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি করে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। পরে গতকাল বিকেলে রংপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এসে উদ্ধারকাজ শুরুর পর তাকে খুঁজে না পেয়ে অভিযান শেষ করে। এরপর আজ তার মরদেহ নদে ভাসতে দেখে উদ্ধার করেন স্থানীয় লোকজন।

নাগেশ্বরী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, গতকাল নিখোঁজের খবর পেয়ে বিকেল থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়েছিল। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চালানো হয়। আজ আবার উদ্ধারকাজ চলাকালে ঘটনাস্থলের আধা কিলোমিটার ভাটিতে তার মরদেহ ভাসতে দেখেন এলাকাবাসী। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সাঁতার কাটতে গিয়ে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মরদেহ আজ দুধকুমার নদ থেকে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত করার প্রস্তুতি চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র মরদ হ ন গ শ বর গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

রৌমারীতে নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করলেন প্রকৌশলী

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার নদী ভাঙন কবলিত এলাকা খেদাইমারী, সুখেরবাতি, ঘুঘুমারী, সোনাপুর ও নামাজের চর পরিদর্শন করেছেন রংপুর পানি উন্নয়ন (বাপাউবো) সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব। সোমবার দুপরে এসব ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। 

প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, ‘রৌমারী ও রাজীবপুর খুবই ভাঙন কবলিত এলাকা। ফলে স্বাভাবিকভাবে আমাদের একটা নজরদারিতে থাকে এই অঞ্চলগুলো। বন্যার আগে কোন এলাকাগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেগুলো পরিদর্শন আমরা মাঝে মাঝে করি। তারপরও বন্যার সময়ে সব জায়গা পরিদর্শন করা হয়। পাশাপাশি বরাদ্দ-চাহিদা পাঠানো হয়। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে কিছু কিছু কাজ করেছি। এবারও একইভাবে নিয়মিত পরিদর্শনের আওতায় কোন জায়গাগুলোতে আগামী বন্যায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, এই তথ্য সংগ্রহ করছি। 

তিনি বলেন, ‘এর বাইরেও এলাকাব্যাপী একটি প্রকল্প দেওয়া আছে। পুরো রৌমারী ও রাজীবপুরকে ঘিরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার, ২৬ কিলোমিটার রৌমারী ও রাজীবপুরে। আর ৪ কিলোমিটার জিঞ্জিরাম নদী তীর সংরক্ষণ দেওয়া আছে। এ প্রকল্পটি যদি পাস হয় তাহলে পুরো এলাকাটাই ভাঙন থেকে মুক্তি পাবে।’ পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান, সহকারী প্রকৌশলী আ.কাদের, রৌমারী নদী রক্ষা সংগঠক মহিউদ্দিন মহির, ট্রোসা-২ প্রকল্পের প্রজেক্ট অফিসার খায়রন্নেসা সরকার ও প্রভাষক আক্তারুজ্জামান প্রমুখ।
    
ভুক্তভোগী স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়া ও কমার সঙ্গে সঙ্গে রৌমারী উপজেলায় দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। এতে খেদাইমারী, সুখেরবাতি, ঘুঘুমারী, সোনাপুর ও নামাজের চর, উত্তর খাউরিয়া, ঘুঘুমারী, চর ইটালুকান্দা, চর খেদাইমারীর প্রায় ৫০০ মানুষের ভিটেমাটি, হাজার হাজার একর আবাদি জমি, পাঁচটির বেশি শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় বাজার, মসজিদসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে কিংবা অন্যের ভিটায় ঠাঁই নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয় ভাঙন কবলিত মানুষদের। নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় নদী তীরবর্তী বাড়ির বাসিন্দাদের। কখন যে ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায় তা নিয়ে দুচিন্তায় থাকতে হয় তাদের। ভিটেমাটি হারানো তাদের প্রতিবছরের দুঃখ গাথা। তবে শুষ্ক মৌসুম ছাড়া সারা বছর কমবেশি ভাঙতে থাকে নদী। 

রৌমারী নদী রক্ষা সংগঠক মহিউদ্দিন মহির বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের বাতাস এখন ভাঙন কবলিত মানুষদের কান্নায় ভারি। টানা বর্ষণে খোলা আকাশের নিচে না করতে পারে রান্না, না থাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই। প্রাকৃতিক ক্রিয়াদির ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত নারীরা। খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে রাত নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। নদীপাড়ের বাসিন্দা ছলেমন অন্যের বাড়িতে কাজ করে চরের মধ্যে দুই কাঠা জমি কিনে ঘর তুলেছিলেন। সেটাও এবার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবু দাবি একটাই- ত্রাণ নয়, নদী ভাঙন থেকে পরিত্রাণ চান তিনি।

২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের বাম তীর রক্ষার নামে সরকারিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার ডিপিপি প্রণয়ন হলেও, তার সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রতিবছর ভাঙনের তালিকায় আসছে নতুন নতুন এলাকা। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে এ অঞ্চলের নিঃস্ব, অসহায় মানুষ বারবার লিখিতভাবে জানানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এতেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

রৌমারীকে বাঁচাতে হলে নদী ভাঙন প্রতিরোধের পাশাপাশি ঘরবাড়ি, জমিহারা মানুষের পুনর্বাসন প্রয়োজন। সরকারকে ভাঙন কবলিত মানুষদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। এই অভাবী জনপদের বেশির ভাগ মানুষকে বছরের ছয় মাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়াতে হয়। এলাকায় কর্মসংস্থান হলে তাদের ছিন্নমূল জীবনের অবসান ঘটবে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ