২৫৪ কোটি টাকার সেদ্ধ চাল কিনবে সরকার
Published: 7th, April 2025 GMT
দেশের খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-১১ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল কেনার উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এতে মোট ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৫০.
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশে খাদ্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস হতে ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির’ অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল এবং জি টু জি পদ্ধতিতে মায়ানমার থেকে ১ লাখ, পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার এবং ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ মেট্রিক টন আতপ চালসহ মোট ৭ লাখ মেট্রিক টন চাল কেনার চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির লক্ষ্যে চুক্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। চুক্তির বিপরীতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন এবং জি টু জি ভিত্তিতে ২ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ২ লাখ ৪৩ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন এবং জি টু জি ভিত্তিতে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৩৯ মেট্রিক টন চাল সরকারি সংরক্ষণাগারে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এবং জি টু জি পদ্ধতিতে আরো চাল আমদানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সূত্র জানায়, চাল আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক চাল ক্রয়ের জন্য গত ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে মোট ১২ সরবরাহকারী দরপত্র দলিল সংগ্রহ করলেও মোট ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠান ৫টি উৎস দেশ হিসেবে ভারত থেকে এই চাল সরবরাহ করবে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রা.লি. প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ৪১৬.৪৪ ডলার উল্লেখ করায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির নাম সুপারিশ করে যা উৎস দেশগুলোর গড় দর (৪৪৪.৯১ মার্কিন ডলার) অপেক্ষা (৪৪৪,৯১-৪১৬,৪৪)=২৮.৪৭ মার্কিন ডলার কম। এ ছাড়া মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রা.লি. কর্তৃক প্রদত্ত দর বাংলাদেশের বন্দর পর্যন্ত প্রতি মেট্রিক টন ৪১৬.৪৪ মার্কিন ডলার, যা বাজার দর যাচাই কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম হওয়ায় উক্ত দর গ্রহণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করে। মহাপরিচালক, খাদ্য অধিদপ্তর উক্ত সুপারিশের সাথে একমত পোষণ করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে ক্রয় প্রস্তাব পাঠায়।
হিসাব অনুযায়ী, প্রতি মেট্রিক টন ৪১৬.৪৪ মার্কিন ডলার (প্রতি কেজি ৫০.৮০ টাকা) হিসেবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল কেনার জন্য প্রয়োজন হবে দুই কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার; অর্থাৎ গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডলারের বিনিময় হার প্রতি মার্কিন ডলার ১২২ টাকা (সম্ভাব্য) হিসেবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। এই টাকা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চাল ক্রয় খাত থেকে মেটানো হবে।
এই ক্রয় উপলক্ষে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সিডি ভ্যাট সরকার কর্তৃক বহন করতে হবে। এ-সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল খ ম ট র ক টন ম ট র ক টন চ ল চ ল আমদ ন র ৫০ হ জ র ন র জন য কর ত ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের সেনাবাহিনী যুদ্ধের জন্য কতটা সক্ষম
সীমান্তে হুমকির মুখে আছে ভারতের সেনাবাহিনী। অথচ তার আধুনিকীকরণ এখনো শেষ হয়নি। সেই বাস্তবতা সামনে চলে আসতে পারে। এই ঝুঁকি হয়তো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্তে সংযত থাকতে বাধ্য করবে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলতেই থাকে। শেষবার যখন তা সরাসরি মুখোমুখি সংঘাতে রূপ নিয়েছিল, তখন ভারতীয় কর্মকর্তারা এক অস্বস্তিকর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। আর তা হলো দেশের বিশাল সেনাবাহিনী ছিল পুরোনো ও সীমান্তের তাৎক্ষণিক হুমকি মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত নয়।
২০১৯ সালে পাকিস্তানের হাতে একটি ভারতীয় জেট ভূপাতিত হওয়ার অপমান ভারতের সামরিক শক্তির আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টায় গতি এনে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেনাবাহিনীতে কোটি কোটি ডলার ঢালেন। অস্ত্র কেনার জন্য নতুন আন্তর্জাতিক অংশীদার খুঁজে বের করেন। সেই সঙ্গে দেশীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়।
এসব প্রচেষ্টা আদৌ কতটা ফল দিয়েছে, তা হয়তো খুব শিগগির পরীক্ষা হয়ে যেতে পারে।
ভারত ও পাকিস্তান আবারও একটি সামরিক সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। কাশ্মীরে প্রাণঘাতী একটি সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। আর এই হামলার জন্য তারা পাকিস্তান সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ করেছে। উত্তেজনা বেড়ে এমন জায়গায় গেছে যে ভারত পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত একটি প্রধান নদীর প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এর আগে দুই দেশের একাধিক যুদ্ধের সময়েও তা কখনো করা হয়নি।
পাকিস্তান কাশ্মীর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সেই সঙ্গে এই পানিপ্রবাহ বন্ধের সিদ্ধান্তকে তারা ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
ভারতীয় কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ায় ভারতবাসী হতবাক হয়ে গেছেন। পাকিস্তানের ওপর আঘাত হানতে মোদি অভূতপূর্ব অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে পড়েছেন। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংযোগ বহু আগেই স্তিমিত হয়ে গেছে। বৈশ্বিক শক্তিগুলো বর্তমানে অন্য সব সংকট নিয়ে ব্যস্ত। সব মিলিয়ে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে দিচ্ছেন যে এ অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি ও বিপজ্জনক অচলাবস্থার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের সামরিক বাহিনী এখনো রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি মোদিকে সংযত থাকতে বাধ্য করতে পারে।
২০১৮ সালে একটি সংসদীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভারতের সেনাবাহিনীর ৬৮ শতাংশ সরঞ্জাম ছিল ‘প্রাচীন’, ২৪ শতাংশ বর্তমান সময়ের জন্য মানানসই এবং মাত্র ৮ শতাংশ ছিল সর্বাধুনিক। পাঁচ বছর পর, ২০২৩ সালের একটি হালনাগাদে সামরিক কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, চ্যালেঞ্জের বিশালতার কারণে অবস্থার যথেষ্ট পরিবর্তন আসেনি।
সংসদীয় সাক্ষ্যমতে, সর্বাধুনিক সামরিক সরঞ্জামের অনুপাত প্রায় দ্বিগুণ হলেও তা এখনো আধুনিক সেনাবাহিনীর চাহিদার তুলনায় অনেক কম। অধিকন্তু, অর্ধেকের বেশি সরঞ্জাম এখনো পুরোনো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই সীমাবদ্ধতার কারণে মোদি হয়তো আরও সীমিত ধরনের হামলার মধ্যে সীমিত থাকবেন। যেমন সীমান্তের কাছাকাছি ছোটখাটো বিমান হামলা বা বিশেষ বাহিনীর অভিযান। এতে জনরোষ প্রশমিত হবে, বিব্রতকর দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাবে আবার পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়াও খুব বেশি হবে না। পাকিস্তান ইতিমধ্যেই যেকোনো ভারতীয় হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
চ্যালেঞ্জ হলো এসব নতুন অস্ত্রব্যবস্থা এমন দক্ষতায় ব্যবহার করা, যাতে তা প্রতিপক্ষের কাছে ‘কার্যকর প্রতিরোধ’ হিসেবে প্রমাণিত হয়। শুক্লা বলেন, ‘আমি নিশ্চিত হতে চাই, যেন আমরা নিজেদের ধোঁকা না দিই।’জনগণের আবেগ মোদিকে পাকিস্তানের ওপর আঘাত হানতে উদ্বুদ্ধ করলেও, ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই আবার তাকে চাপ দিতে পারে, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।
অন্যদিকে পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে নেপথ্যে থেকে দেশ চালিয়ে এসেছে। তারা সম্ভবত রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে দিয়েই এই সংঘাতকে বাড়তে দেবে। এর ফলে সেনাবাহিনী দেশের ভেতরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারবে।
ভারত নিজেদের এমন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে হাজির করছে, দেখাতে চাইছে যে তারা সহজেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করতে পারবে। যদি এই দাবির সত্যতা পরীক্ষার মুখে পড়ে, তাহলে আরেক প্রতিবেশী চীনও তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
ভারত গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের তুলনায় চীনকে সীমান্তের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে ২০২০ সালে হিমালয়ে ভারতীয় ও চীনা সেনাদের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর। তা ছাড়া চীন বারবার ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশেও করছে।
এর মানে, ভারতের সামরিক নেতাদের এখন পাকিস্তান ও চীন—এই দুই ফ্রন্টে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এর ফলে সরবরাহ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা জটিল হয়ে উঠবে।
২০১৯ সালে পাকিস্তানের হাতে একটি ভারতীয় জেট ভূপাতিত হয়। ঘটনার এক বছরের কম সময় পর ২০২০ সালে ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত হয়েছিল। অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় জেনারেল এবং দিল্লিভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক সেন্টার ফর ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার স্টাডিজের প্রধান দুষ্যন্ত সিং বলেন, সেই জেট ভূপাতিত হওয়ার ঘটনা ভারতের জন্য একপ্রকার সতর্কবার্তা ছিল।
দুষ্যন্ত সিং বলেন, এর পর থেকে ভারত নিজেদের সামরিক ঘাটতি পূরণের জন্য বিভিন্ন পথ অনুসন্ধান করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে নতুন মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সংগ্রহ করা হয়েছে। ফ্রান্স থেকে ডজন ডজন যুদ্ধবিমান আনা হয়েছে। কেনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ড্রোন, হেলিকপ্টার ও মিসাইল।
বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল অনির্ভরযোগ্য হয়ে পড়ায় ভারত নিজস্ব সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনেও প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। এই উদ্যোগ এখনো ধীরগতিতে এগোচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর জন্য তা মজবুত ভিত্তি গড়ে দেবে।
দুষ্যন্ত সিং বলেন, ‘এই আধুনিকীকরণের ফলাফল রাতারাতি আসবে না। এতে সময় লাগবে।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতের সামরিক আধুনিকীকরণের চ্যালেঞ্জ বহুস্তরীয়—প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিকও।
মোদি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটার প্রক্রিয়া সহজ করার চেষ্টা করেছেন। চেষ্টা করছেন বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এ ছাড়া মোদি যে গুরুত্বপূর্ণ জেনারেলকে সেনাবাহিনীর পুনর্গঠনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তিনি ২০২১ সালে এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এতে কাজ আরও জটিল হয়ে পড়ে।
ভারতের অর্থনীতি এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম। পাকিস্তানের অর্থনীতির প্রায় ১০ গুণ বেশি। ফলে সামরিক বাহিনীর জন্য টাকা কোনো সমস্যা নয়। তবে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যয় এখনো মোট দেশজ উৎপাদনের ২ শতাংশের কম। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, তা যথেষ্ট নয়। সরকারকে দেশের বিশাল জনগণের অন্যান্য প্রয়োজনীয়তার দিকেও মনোযোগ দিতে হচ্ছে।
২০২০ সালের চীনের সঙ্গে সংঘাতের পর চার বছরের জন্য ভারতকে সীমান্তে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন রাখতে হয়েছে। এর ফলে আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টা ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। আরেকটি বড় বাধা ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী রাশিয়া থেকে অস্ত্র আসা বিলম্বিত করেছে।
সরকারি সংসদীয় সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, অর্থ বরাদ্দ থাকলেও বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্ডারগুলো আটকে ছিল।
এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে ভারত সবচেয়ে জরুরি ঘাটতিগুলো পূরণের দিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন। পাশাপাশি, গোপন অভিযান বাড়ানো হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানভিত্তিক বহু ভারতবিরোধী জঙ্গিকে টার্গেট করে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।
গত পাঁচ বছরে ইউক্রেনের পর ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক। পাকিস্তান ছিল পঞ্চম স্থানে।
রাশিয়া এখনো ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। কিন্তু গত পাঁচ বছরে ভারতের রাশিয়া থেকে কেনাকাটা প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। ভারত এখন বেশি করে ঝুঁকছে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দিকে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে রাশিয়া থেকে কেনা পাঁচটি এস-৪০০ মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মধ্যে তিনটি মোতায়েন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া থেকে এই মিসাইল কেনায় কড়া আপত্তি জানিয়েছিল।
ফ্রান্স থেকে কেনা ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে। আরও ২৬টি কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। ভারত নিজস্বভাবে তৈরি প্রচুরসংখ্যক যুদ্ধজাহাজও মোতায়েন করছে।
নতুন প্রযুক্তির প্রভাব সম্পর্কে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অজয় শুক্লা বলেন, রাফালের বিমান সংযুক্ত করাটা ভারতীয় বিমানবাহিনীর সক্ষমতায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এনেছে। তবে শুক্লা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, চ্যালেঞ্জ হলো এসব নতুন অস্ত্রব্যবস্থা এমন দক্ষতায় ব্যবহার করা, যাতে তা প্রতিপক্ষের কাছে ‘কার্যকর প্রতিরোধ’ হিসেবে প্রমাণিত হয়।
শুক্লা বলেন, ‘আমি নিশ্চিত হতে চাই, যেন আমরা নিজেদের ধোঁকা না দিই।...ভয় হলো, যদি অস্ত্রব্যবস্থা থাকেও, শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনের সময় দেখা গেল যে আমাদের কাছে তা আসলে নেই।’
মুজিব মাশাল দ্য টাইমসের দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো চিফ
সুহাসিনী রাজ নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদক
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ জাভেদ হুসেন