ছাত্র আন্দোলনে চোখ হারানো যুবককে কুপিয়ে জখম
Published: 7th, April 2025 GMT
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় অবস্থানকালে গুলিতে চোখ হারানো মো. ফরিদ শেখ ওরফে লাবিব (১৭) নামে এক কিশোরকে কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল রবিবার রাতে পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের গোপেরহাট এলাকায় তার ওপর হামলা হয়।
সোমবার (৭ এপ্রিল) ফরিদের পালিত মা সালমা বেগম বাদী হয়ে পাঁচ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৩-৪ জনকে নাম না জানা আসামি করে পিরোজপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
পিরোজপুর সদর থানার ওসি মো.
আরো পড়ুন:
কক্সবাজারে কেএফসি ও পিৎজা হাটসহ ৫ রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর
বর পক্ষকে উদ্ধারে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ, থানায় মামলা
আহত ফরিদ শেখ পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা গ্রামের ইলিয়াছ শেখ ও সালমা বেগমের পালিত ছেলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে ঢাকার প্রেস ক্লাব এলাকায় চোখে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এতে তার বাম চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
থানায় দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ফরিদের সঙ্গে পিরোজপুর সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নের রাজারকাঠী গ্রামের নাছির কাজীর ছেলে রাকিব কাজীর রোজার মধ্যে টোনা গ্রামের একটি মসজিদে কথা কাটাকাটি হয়। ওই সময় মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। এরপর থেকেই রাকিব ফরিদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। রবিবার রাতে রাকিব লোকজন নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফরিদকে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।
আহত ফরিদ বলেন, “গত ৮ রমজান টোনা গ্রামের একটি মসজিদে নামাজের কাতারে দাঁড়ানো নিয়ে নানা বাড়িতে বসবাস করা রাকিব কাজীর সঙ্গে কথা কটাকাটি হয়। পরে বিষয়টি মসজিদের মুসল্লিরা সমাধান করে দেন। গতকাল রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপেরহাট ভাঙ্গা পুল এলাকায় একা পেয়ে রাকিবের নেতৃত্বে সিয়াম শিকদার, নাছির কাজী, শাকিল শিকদারসহ ৭/৮জন আমার ওপর হামলা করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে। তারা আমাকে কুপিয়ে এবং পাইপ ও ইট দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে স্থানীয় লোকজন রাত সাড়ে ১০টার দিকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে এসে আমাকে ভর্তি করে।”
ঢাকা/তাওহিদুল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত অভ য গ মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড
বড় ঋণগ্রহীতা বেশির ভাগই পলাতক। কেউ কেউ আছেন জেলে। এর মধ্যেই খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড হয়েছে। গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা আদায় করেছে। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আদায় ৮ হাজার ২৬ কোটি টাকা, যা প্রায় ৮২ শতাংশ। ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ বন্ধ; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি এবং কোনো কোনো ব্যাংক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আদায় জোরদার করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংকাররা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নীতি নিয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কাছে একটা কঠোর বার্তা গেছে– টিকে থাকতে হলে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে হবে। ঋণ পরিশোধ না করে আর আগের মতো নিয়মিত দেখানো যাবে না। আবার চলতি মূলধন ঋণে সীমা বাড়িয়ে নিয়মিত দেখানোর পথও বন্ধ। চাইলেই আদালত থেকে খেলাপি ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ মিলছে না। দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে রয়েছে। ব্যাংক না টিকলে চাকরি বাঁচবে না– এমন চাপও আছে। এসব কারণে খেলাপিদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ তিন মাসে খেলাপি ঋণের বিপরীতে মোট ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এর আগে কোনো এক প্রান্তিকে সর্বোচ্চ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে এই আদায় হয়েছিল। ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে আদায় হয় ৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালে মাত্র ২ হাজার ৬৭২ কোটি এবং ২০২০ সালে ছিল ২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে খেলাপিদের থেকে আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৯১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর তদারকি করছে। যে ঋণের যা শ্রেণিমান, ব্যাংকগুলোকে তা-ই দেখাতে হচ্ছে। আবার অনেক ব্যাংক নিজের অস্বিত্বের স্বার্থে আদায় জোরদার করছে। অবশ্য কেউ খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিল করতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত ডাউন পেমেন্ট দিয়ে সব নিয়ম মেনে আসতে হচ্ছে। একদিকে কঠোরতা, আরেকদিকে নিজেদের অস্বিস্তের স্বার্থে ঋণ আদায় জোরদার করেছে ব্যাংক।
বিগত সরকারের সময়ে ঋণ আদায়ের চেয়ে নানা কৌশলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর উপায় বের করা হতো। মূলত ব্যবসায়ীদের খুশি করতে ২০১৪ সালের ‘রাতের ভোট’-এর আগের বছর থেকে ব্যাপকভাবে এ সংস্কৃতি শুরু হয়। কখনও নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতপশিল, কখনও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ১২ বছরের জন্য ঋণ নবায়ন কিংবা পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়। এসব ছাপিয়ে করোনার পর ২০২০ সাল থেকে কিস্তি ফেরত না দিয়েও নিয়মিত দেখানোর পথ বাতলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন আর আগের মতো যেনতেন উপায়ে নিয়মিত দেখানোর সুযোগ মিলছে না। লুকানো খেলাপি ঋণের আসল চিত্র সামনে আসতে শুরু করেছে। যে কারণে খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ঠেকেছে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। এক বছর আগের তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ১৩১ কোটি টাকা। আর কেবল শেষ তিন মাসে বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ঋণ আদায়সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ২১ বছর তাঁর ব্যাংকিং ক্যারিয়ার। এর আগে কখনও ঋণ আদায়ে এত চাপ তৈরি হয়নি। ব্যাংকারদের মধ্যে একটা কঠোর বার্তা গেছে– ঋণ আদায় করতে না পারলে চাকরি থাকবে না। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে এই চাপ বেশি। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয় বছরের শেষ প্রান্তিকের পরিস্থিতির ভিত্তিতে। সে অনুপাতে ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ, কর্মীদের ইনসেনটিভ বোনাসসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এবার প্রকৃত আদায় ছাড়া কোনো ব্যাংক খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে পারছে না। আবার কারও প্রভিশন ঘাটতি রেখে লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এসব কারণে ঋণ আদায় বেড়েছে। ঋণগ্রহীতা বড় অংশই পলাতক না থাকলে আরও অনেক বেশি আদায় হতো বলে তিনি জানান।
আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগদানের এক সপ্তাহের মাথায় ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ব্যাপক শিথিল করে ঋণ পুনঃতপশিলের একটি নীতিমালা করা হয়। ওই নীতিমালার পর আগের সব রেকর্ড ভেঙে শুধু ২০২২ ও ২০২৩ সালে পুনঃতপশিল হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪১ কোটি টাকার ঋণ। আর ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে পুনঃতপশিল করা হয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ। এভাবে লুকিয়ে রাখা ঋণই এখন আবার খেলাপি হচ্ছে।