বিপন্ন কাছিম রক্ষায় বন্ধ্যা করা হচ্ছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ৩ হাজার কুকুরকে
Published: 7th, April 2025 GMT
বঙ্গোপসাগরের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের বিপন্ন কাছিমসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দ্বীপের বেওয়ারিশ তিন হাজার কুকুরকে বন্ধ্যাকরণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। দ্বীপে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, দ্বীপে লোকসংখ্যা ১০ হাজার ৭০০ জন। কুকুর আছে সাত হাজারের বেশি। কুকুরের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে দ্বীপে ডিম পাড়তে আসা কাছিমও কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো একটি প্রজাতির অনিয়ন্ত্রিত বংশবৃদ্ধিও প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রের জন্য হুমকি বলে মনে করেন পরিবেশবিদেরা।
পরিবেশ সংগঠনগুলো বলছে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত পাঁচ প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে এ এলাকায় জলপাইরঙা বা অলিভ রিডলে কাছিম বেশি দেখা যায়। এই জাতের কচ্ছপকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন)। বিপন্ন এই কাছিমের ডিম খেয়ে ফেলে দ্বীপের বেওয়ারিশ কুকুর। এ ছাড়া ডিম পাড়তে আসা মা কাছিমকেও কুকুরের আক্রমণের শিকার হতে হয়।
কুকুর নিধনের বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইনে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯ এর ধারা ৭ অনুযায়ী নির্বিচার মালিকবিহীন প্রাণী নিধন বা অপসারণ দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ক্ষেত্রে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। এ কারণে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বন্ধ্যাকরণকে লাগসই উপায় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। এসব দিক বিবেচনা করে দ্বীপের কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পরিবেশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে কুকুর বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি সংস্থা-‘অভয়ারণ্য’। আজ সোমবার অভয়ারণ্যের একটি টিম সেন্ট মার্টিনে গেছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হবে কুকুর বন্ধ্যাকরণের কাজ।
এর সত্যতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক মো.
জমির উদ্দিন বলেন, ইতিমধ্যে দ্বীপে গিয়ে কুকুর জরিপের কাজ হয়েছে। বর্তমানে দ্বীপে কুকুর আছে ষঅথ হাজারের বেশি। এর মধ্যে কয়েক ধাপে থীণ হাজার কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করা হবে। ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ধাপে এক হাজার কুকুরকে বন্ধ্যাকরণের আওতায় আনা হবে। বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ডওয়াইড ভেটেরিনারি সার্ভিস (ডব্লিউভিএস)।’ আর ২০১২ সাল থেকে রাজধানী ঢাকায়ও কুকুর বন্ধ্যাকরণের কাজে যুক্ত রয়েছে অভয়ারণ্য।
প্রথম ধাপে বন্ধ্যাকরণ ১ হাজার
গত জানুয়ারি মাসে সেন্ট মার্টিনে গিয়ে কুকুর জরিপ করেন অভয়ারণ্যের কর্মীরা। তাঁরা দ্বীপের উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, মাঝরপাড়া, পশ্চিমপাড়াসহ কয়েকটির গ্রামের ২০০ ঘরে গিয়ে কুকুরের জরিপ পরিচালনা করেন। জরিপ অনুযায়ী, ৩০ শতাংশ পরিবারে কুকুর রয়েছে। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ বেওয়ারিশ কুকুর। তবে কোনো কুকুরের বন্ধ্যাকরণ হয়নি।
এ প্রসঙ্গে অভয়ারণ্যের চেয়ারম্যান রুবাইয়া আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সেন্ট মার্টিনের প্রতিটি ঘরে চার-পাঁচটি কুকুর পাওয়া গেছে। দুই বছর পরে ২০টি করে কুকুর হবে। তখন সংকট আরও বাড়বে। কুকুর স্থানান্তর কিংবা নিধন করা আইনিভাবে নিষিদ্ধ। এখন কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। প্রথমে তিন হাজার কুকুরকে বন্ধ্যা করা হবে। কর্মসূচি কত দিন চালানো যাবে, তা নির্ভর করছে পরিবেশ–পরিস্থিতির ওপর। এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ-লঘুচাপসহ ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের।
বৈরী পরিবেশে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হলে কিংবা ঝড়-বৃষ্টি লেগে থাকলে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত, ওষুধ-সরঞ্জাম পৌঁছানো কঠিন ও ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এক প্রশ্নের জবাবে রুবাইয়া আহমদ বলেন, ‘প্রথম ধাপে আমরা এক হাজার কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করব। এরপর আরও কয়েক ধাপে ২ হাজার কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করা হবে। এর সঙ্গে কুকুর লালন–পালন, সরকারি আইন এবং বন্ধ্যাকরণ বিষয়ে স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করা হবে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘৩২৯ উপজেলায় হচ্ছে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমদ খান বলেছেন, “দেশের ৩২৯ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পের আওতায় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।”
শনিবার (৫ এপ্রিল) সকালে হবিগঞ্জ সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এতথ্য জানান।
শোয়াইব আহমদ খান বলেন, “বিদেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে দক্ষ জনশক্তি পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। দেশের দেড় কোটি লোক বিদেশে স্বল্প মজুরিতে চাকরি করার কারণে আশানুরূপ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ, বাহুবল, শায়েস্তাগঞ্জ, চুনারুঘাট ও লাখাই উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি উপজেলায় ৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। কোনো দানশীল ব্যক্তি জমি দান করতে চাইলে তা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে নবীগঞ্জ ও বাহুবলের জন্য দুইজন ব্যক্তি ভূমি দান করেছেন।”
এসময় হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফরিদুর রহমানসহ বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/মামুন/মাসুদ