গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বের করা বিক্ষোভ মিছিল থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার শহরে কয়েকটি দোকান-রেস্তোরাঁয় হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে কিছু লোক। আজ সোমবার এ হামলা চালানো হয়।

আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকায় পাঁচটি দোকানে ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে একদল লোক। এ সময় চারটি রেস্তোরাঁ ও একটি জুতার দোকানে ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে দুটি রেস্তোরাঁর বাইরের কাচের দেয়াল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কে বা কারা এ হামলা করেছে, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরের বিপ্লব উদ্যান থেকে একটি বিশাল মিছিল জিইসির দিকে যাচ্ছিল। সেখান থেকে কয়েকজন এসে রেস্তোরাঁগুলোতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাঁরা এ সময় ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান দেন। লুটপাট চালানোর চেষ্টা করলে সেখানে কয়েকজন ছাত্র ও সাধারণ মানুষ বাধা দেন। রেস্তোরাঁগুলো আমেরিকান ও ইসরায়েলি মালিকানাধীন দাবি করে এ ভাঙচুর করা হয়।

নগরের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েকটি রেস্তোরাঁ ও দোকানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত করে দেখছি।’

কক্সবাজারে হামলা-ভাঙচুর

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনে পাঁচটি রেস্তোরাঁ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করা হয়েছে। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল থেকে এই হামলা চালানো হয়।

ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদে ‘ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আজ দুপুরে শহরজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে শহরের পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দান থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। প্রধান সড়কের ঝাউতলা-হলিডে মোড়-লাবণী পয়েন্ট হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হোটেল-মোটেল জোনের কলাতলী সৈকত সড়কে ওঠে। এ সময় ইটপাটকেল ছোড়া হয়। মিছিলের আগে-পিছে পুলিশ থাকলেও মাঝখানে থাকা কিছু ব্যক্তি রেস্তোরাঁগুলোতে ভাঙচুর চালান।

রেস্তোরাঁয় হামলার নিন্দা জানিয়ে কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, ইসরায়েলি পণ্য রাখার অজুহাতে কাঁচা লঙ্কা, পানসিসহ পাঁচটি রেস্তোরাঁয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ভাঙা কাচ লেগে কয়েকজন পর্যটক আহত হয়েছেন।

জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘ফিলিস্তিনের প্রতি সব মুসলিমের সংহতি রয়েছে। আজকের বিক্ষোভ মিছিলেও আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। তবে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক কক্সবাজারের রেস্তোরাঁসমূহে হামলা-ভাঙচুর পর্যটনের জন্য অশনিসংকেত। ইসরায়েলের পণ্য যাঁরা বিক্রি করেন, তাঁদের সতর্ক করলেই হতো।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

ইলিয়াস খান বলেন, বিক্ষোভ মিছিলটির আগে-পিছে পুলিশ ছিল। মিছিলটি বেশ লম্বা ছিল। হঠাৎ মধ্যখান থেকে অতি উৎসাহী কিছু লোক ইসরায়েলের পণ্য রাখার অভিযোগে কয়েকটি রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর চালায়। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড

বড় ঋণগ্রহীতা বেশির ভাগই পলাতক। কেউ কেউ আছেন জেলে। এর মধ্যেই খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড হয়েছে। গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা আদায় করেছে। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আদায় ৮ হাজার ২৬ কোটি টাকা, যা প্রায় ৮২ শতাংশ। ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ বন্ধ; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি এবং কোনো কোনো ব্যাংক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আদায় জোরদার করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংকাররা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নীতি নিয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কাছে একটা কঠোর বার্তা গেছে– টিকে থাকতে হলে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে হবে। ঋণ পরিশোধ না করে আর আগের মতো নিয়মিত দেখানো যাবে না। আবার চলতি মূলধন ঋণে সীমা বাড়িয়ে নিয়মিত দেখানোর পথও বন্ধ। চাইলেই আদালত থেকে খেলাপি ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ মিলছে না। দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে রয়েছে। ব্যাংক না টিকলে চাকরি বাঁচবে না– এমন চাপও আছে। এসব কারণে খেলাপিদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ তিন মাসে খেলাপি ঋণের বিপরীতে মোট ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এর আগে কোনো এক প্রান্তিকে সর্বোচ্চ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে এই আদায় হয়েছিল। ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে আদায় হয় ৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালে মাত্র ২ হাজার ৬৭২ কোটি এবং ২০২০ সালে ছিল ২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে খেলাপিদের থেকে আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৯১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর তদারকি করছে। যে ঋণের যা শ্রেণিমান, ব্যাংকগুলোকে তা-ই দেখাতে হচ্ছে। আবার অনেক ব্যাংক নিজের অস্বিত্বের স্বার্থে আদায় জোরদার করছে। অবশ্য কেউ খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিল করতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত ডাউন পেমেন্ট দিয়ে সব নিয়ম মেনে আসতে হচ্ছে। একদিকে কঠোরতা, আরেকদিকে নিজেদের অস্বিস্তের স্বার্থে ঋণ আদায় জোরদার করেছে ব্যাংক।

বিগত সরকারের সময়ে ঋণ আদায়ের চেয়ে নানা কৌশলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর উপায় বের করা হতো। মূলত ব্যবসায়ীদের খুশি করতে ২০১৪ সালের ‘রাতের ভোট’-এর আগের বছর থেকে ব্যাপকভাবে এ সংস্কৃতি শুরু হয়। কখনও নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতপশিল, কখনও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ১২ বছরের জন্য ঋণ নবায়ন কিংবা পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়। এসব ছাপিয়ে করোনার পর ২০২০ সাল থেকে কিস্তি ফেরত না দিয়েও নিয়মিত দেখানোর পথ বাতলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন আর আগের মতো যেনতেন উপায়ে নিয়মিত দেখানোর সুযোগ মিলছে না। লুকানো খেলাপি ঋণের আসল চিত্র সামনে আসতে শুরু করেছে। যে কারণে খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ঠেকেছে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। এক বছর আগের তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ১৩১ কোটি টাকা। আর কেবল শেষ তিন মাসে বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ঋণ আদায়সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ২১ বছর তাঁর ব্যাংকিং ক্যারিয়ার। এর আগে কখনও ঋণ আদায়ে এত চাপ তৈরি হয়নি। ব্যাংকারদের মধ্যে একটা কঠোর বার্তা গেছে– ঋণ আদায় করতে না পারলে চাকরি থাকবে না। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে এই চাপ বেশি। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয় বছরের শেষ প্রান্তিকের পরিস্থিতির ভিত্তিতে। সে অনুপাতে ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ, কর্মীদের ইনসেনটিভ বোনাসসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এবার প্রকৃত আদায় ছাড়া কোনো ব্যাংক খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে পারছে না। আবার কারও প্রভিশন ঘাটতি রেখে লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এসব কারণে ঋণ আদায় বেড়েছে। ঋণগ্রহীতা বড় অংশই পলাতক না থাকলে আরও অনেক বেশি আদায় হতো বলে তিনি জানান।
আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগদানের এক সপ্তাহের মাথায় ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ব্যাপক শিথিল করে ঋণ পুনঃতপশিলের একটি নীতিমালা করা হয়। ওই নীতিমালার পর আগের সব রেকর্ড ভেঙে শুধু ২০২২ ও ২০২৩ সালে পুনঃতপশিল হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪১ কোটি টাকার ঋণ। আর ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে পুনঃতপশিল করা হয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ। এভাবে লুকিয়ে রাখা ঋণই এখন আবার খেলাপি হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ