শিশুরা কি সোশ্যাল অ্যাংজাইটিতে বেশি ভোগে?
Published: 7th, April 2025 GMT
একজন মানুষ যত বড় হতে থাকে, আস্তে আস্তে পারিপার্শ্বিকতা বুঝতে শুরু করে। ছোটবেলায় ভালো-মন্দ বোধ যেখানে ছিল না, সেখানে আস্তে আস্তে গড়ে উঠতে থাকে পরিমিতিবোধ। কখন কার সঙ্গে কী করা যাবে, কী করা যাবে না, সেই জ্ঞান গড়ে ওঠে অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে। এসব সামাল দিতে না পেরে সামাজিক পরিস্থিতিতে গিয়ে অনেকেই নার্ভাস হয়ে পড়েন, এই নার্ভাসনেসই হলো ‘সোশ্যাল অ্যাংজাইটি’।
অনেকের ধারণা, নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে সোশ্যাল অ্যাংজাইটি গড়ে ওঠে। ব্যাপারটি তেমন নয়। সোশ্যাল অ্যাংজাইটি গড়ে ওঠার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যখন থেকে একটি শিশু তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝতে শুরু করে, তখন থেকেই তার মধ্যে সোশ্যাল অ্যাংজাইটি গড়ে উঠতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোরদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে সোশ্যাল অ্যাংজাইটি তুলনামূলক বেশি। এই গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল শিশুদের প্রিয় ভিডিও গেমস।
৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী ২১৪ জন শিশুর ওপর চালানো হয় এই গবেষণা। ‘জার্নাল অব চাইল্ড সাইকোলজি অ্যান্ড সাইকেট্রি’ থেকে চালানো এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। প্রত্যেককে একটি গেমের সামনে বসিয়ে গবেষকেরা দেখতে চেয়েছিলেন ভুল করার পর তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়। ভিডিও গেমে ভুল করা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। কিন্তু এই স্বাভাবিক বিষয়টি বয়সভেদে প্রভাব ফেলছে শিশুদের ওপর। ১১ বছরের নিচের শিশুদের ছোট্ট ভুল করার পর গেমে মনোযোগ দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। অন্যদিকে ১১ বছরের ওপরের শিশুরা খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পেরেছিল।
অ্যাংজাইটি যখন থেকে মনে বাসা বাঁধতে শুরু করে, তখন থেকেই মানুষ ছোটখাটো ভুল করতে শুরু করে। কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে কিংবা ভুল করলে তার ফলাফল কী হতে পারে, এমন ভয়ও থাকে মনে। ফলে হুট করে প্যানিক করা, কাজে ফোকাস করতে না পারার মতো ঘটনা ঘটে। এমন ছোটখাটো বিষয় শিশুদের মনে বড় প্রভাব ফেলে।
তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শিশুরা নিজেদের মানিয়ে নিতে শুরু করে। ভিডিও গেমের ক্ষেত্রে বিষয়টি বিশেষ করে চোখে পড়েছে গবেষকদের। ব্যর্থ হওয়ার পর অপেক্ষাকৃত ছোট শিশুরা যখন নার্ভাস হয়ে পড়েছে, বড় শিশুরা সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করেছে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শিশুরা নার্ভাসনেসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করে। শিশুদের নার্ভাসনেস কাটাতে তাই মা-বাবার প্রয়োজন আলাদা করে নজর রাখা।
ক্লাসে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, ক্যানটিনে খেতে বসা থেকে শুরু করে হুট করে কোনো ভুল করে ফেলা; এসব চিন্তা মাথায় খেলে তাদের মনে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ল কর
এছাড়াও পড়ুন:
খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড
বড় ঋণগ্রহীতা বেশির ভাগই পলাতক। কেউ কেউ আছেন জেলে। এর মধ্যেই খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড হয়েছে। গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা আদায় করেছে। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আদায় ৮ হাজার ২৬ কোটি টাকা, যা প্রায় ৮২ শতাংশ। ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ বন্ধ; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি এবং কোনো কোনো ব্যাংক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আদায় জোরদার করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংকাররা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নীতি নিয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কাছে একটা কঠোর বার্তা গেছে– টিকে থাকতে হলে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে হবে। ঋণ পরিশোধ না করে আর আগের মতো নিয়মিত দেখানো যাবে না। আবার চলতি মূলধন ঋণে সীমা বাড়িয়ে নিয়মিত দেখানোর পথও বন্ধ। চাইলেই আদালত থেকে খেলাপি ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ মিলছে না। দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে রয়েছে। ব্যাংক না টিকলে চাকরি বাঁচবে না– এমন চাপও আছে। এসব কারণে খেলাপিদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ তিন মাসে খেলাপি ঋণের বিপরীতে মোট ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এর আগে কোনো এক প্রান্তিকে সর্বোচ্চ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে এই আদায় হয়েছিল। ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে আদায় হয় ৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালে মাত্র ২ হাজার ৬৭২ কোটি এবং ২০২০ সালে ছিল ২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে খেলাপিদের থেকে আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৯১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর তদারকি করছে। যে ঋণের যা শ্রেণিমান, ব্যাংকগুলোকে তা-ই দেখাতে হচ্ছে। আবার অনেক ব্যাংক নিজের অস্বিত্বের স্বার্থে আদায় জোরদার করছে। অবশ্য কেউ খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিল করতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত ডাউন পেমেন্ট দিয়ে সব নিয়ম মেনে আসতে হচ্ছে। একদিকে কঠোরতা, আরেকদিকে নিজেদের অস্বিস্তের স্বার্থে ঋণ আদায় জোরদার করেছে ব্যাংক।
বিগত সরকারের সময়ে ঋণ আদায়ের চেয়ে নানা কৌশলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর উপায় বের করা হতো। মূলত ব্যবসায়ীদের খুশি করতে ২০১৪ সালের ‘রাতের ভোট’-এর আগের বছর থেকে ব্যাপকভাবে এ সংস্কৃতি শুরু হয়। কখনও নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতপশিল, কখনও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ১২ বছরের জন্য ঋণ নবায়ন কিংবা পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়। এসব ছাপিয়ে করোনার পর ২০২০ সাল থেকে কিস্তি ফেরত না দিয়েও নিয়মিত দেখানোর পথ বাতলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন আর আগের মতো যেনতেন উপায়ে নিয়মিত দেখানোর সুযোগ মিলছে না। লুকানো খেলাপি ঋণের আসল চিত্র সামনে আসতে শুরু করেছে। যে কারণে খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ঠেকেছে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। এক বছর আগের তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ১৩১ কোটি টাকা। আর কেবল শেষ তিন মাসে বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ঋণ আদায়সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ২১ বছর তাঁর ব্যাংকিং ক্যারিয়ার। এর আগে কখনও ঋণ আদায়ে এত চাপ তৈরি হয়নি। ব্যাংকারদের মধ্যে একটা কঠোর বার্তা গেছে– ঋণ আদায় করতে না পারলে চাকরি থাকবে না। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে এই চাপ বেশি। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয় বছরের শেষ প্রান্তিকের পরিস্থিতির ভিত্তিতে। সে অনুপাতে ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ, কর্মীদের ইনসেনটিভ বোনাসসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এবার প্রকৃত আদায় ছাড়া কোনো ব্যাংক খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে পারছে না। আবার কারও প্রভিশন ঘাটতি রেখে লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এসব কারণে ঋণ আদায় বেড়েছে। ঋণগ্রহীতা বড় অংশই পলাতক না থাকলে আরও অনেক বেশি আদায় হতো বলে তিনি জানান।
আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগদানের এক সপ্তাহের মাথায় ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ব্যাপক শিথিল করে ঋণ পুনঃতপশিলের একটি নীতিমালা করা হয়। ওই নীতিমালার পর আগের সব রেকর্ড ভেঙে শুধু ২০২২ ও ২০২৩ সালে পুনঃতপশিল হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪১ কোটি টাকার ঋণ। আর ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে পুনঃতপশিল করা হয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ। এভাবে লুকিয়ে রাখা ঋণই এখন আবার খেলাপি হচ্ছে।