ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান বর্বরতার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সোমবার (৭ এপ্রিল) সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। রাইজিংবিডি ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক, জেলা প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য ও ছবি নিয়ে প্রতিবেদন।

মিছিলে উত্তাল ময়মনসিংহ
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে মিছিলে মিছিলে উত্তাল ময়মনসিংহ নগরী। সোমবার সকালে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণ নগরীর টাউন হল মোড়ে জড়ো হন। এ সময় মাথায় কালো কাপড় ও হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শফিকুল ইসলাম খান বলেন, “গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি সকাল থেকে চলমান রয়েছে। সেসব কর্মসূচি যেন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় সে লক্ষ্যে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।”

কক্সবাজারে মিছিল
ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন উপজেলা ও শহরে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। সোমবার দুপুরে এসব মিছিল জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

আরো পড়ুন:

মার্কিন শুল্ক পুনর্বিবেচনা চেয়ে ট্রাম্পকে প্রধান উপদেষ্টার চিঠি

বাধ্যতামূলক ছুটিতে ইসলামী ব্যাংকের এমডি

কুষ্টিয়ায় বিক্ষোভ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আয়োজনে কুষ্টিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ জনতা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি আলহাজ্ব আহমদ আলী, সাধারণ সম্পাদক জি এম তাওহীদ আনোয়ার প্রমুখ।

আশুলিয়ায় বিক্ষোভ
গাজার জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে সাভারের আশুলিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (নিটার) শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে ক্যাম্পাসের ‘ইয়ার্ন শেড’ প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

কালীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল 
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। সোমবার কালীগঞ্জের সর্বস্তরের জনগণের আয়োজনে সরকারি কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে কালীগঞ্জের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণে শেষে কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পথসভায় মিলিত হয়।

কিশোরগঞ্জে বিক্ষোভ
কিশোরগঞ্জে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ বিক্ষোভ কর্মসুচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুরে শহীদি মসজিদ চত্বরে কিশোরগঞ্জ সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ শেষে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচিতে সবার অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলে বিভিন্ন ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব‌্যানারে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। 

যশোরে বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনে চলমান নির্মম গণহত্যা ও আগ্রাসনের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে যশোরের ছাত্র-জনতা। সকাল ১১টায় শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে যশোর ঈদগাহ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

ফিলিস্তিনে হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ নাটোরে
দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ইসরাইলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়ে নাটোরে ফিলিস্তিনি হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে সর্বদলীয় তৌহিদি জনতা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন হেফাজতে ইসলাম নাটোর জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রফিকুল ইসলাম।

ধামরাইয়ে মিছিল-সমাবেশ 
ঢাকার ধামরাইয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাধারণ জনগণ অংশ নেয়। সোমবার উপজেলার থানা রোড এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে এসে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান তারা। পরে মিছিল নিয়ে ঢুলিভিটা হয়ে ধামরাই বাজারসহ পৌরসভার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

নরসিংদীতে ক্লাস বর্জন 
গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করেন নরসিংদীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা শহরের বিভিন্ন স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন উপজেলার সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন।

ঝিনাইদহে বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনে হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে ঝিনাইদহে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে । সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ঝিনাইদহবাসীর আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।

বিক্ষোভে উত্তাল রাঙামাটি
রাঙামাটিতে সকালে ‘নো ওয়ার্ক, নো ক্লাস’ কর্মসূচির পর দুপুরে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সাধারণ মানুষ শহরের দোয়েল চত্ত্বরে যোগ দেন। সেখানে প্রতিবাদকারীরা ইসরায়েল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন। এছাড়া সকালে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে রাঙাামটির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ
গোপালগঞ্জে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে করেছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। এছাড়া সমাবেশে বক্তারা ইসরাইল-আমেরিকান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন।

[ প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন কাঞ্চন, মিলন, সাব্বির, রফিক, রুমন, রিটন, আরিফুল, হৃদয়, সোহাগ, শংকর, বাদল ও তারেকুর ]

ঢাকা/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ব ক ষ ভ কর ইসর য় ল স মব র ব র হয় শহর র উপজ ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি মাসেই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি

আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এ মাস থেকে শুরু হবে তাদের নানা কর্মসূচি। ধীরে ধীরে এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে তারা। এর আগে সরকারের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে আগামী সপ্তাহে আবারও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন বিএনপি নেতারা। সেখানে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানানো হবে। এ ছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিও জানানো হবে।

বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দলের নেতারা জানান, নির্বাচন নিয়ে সরকারের একেক সময়ে একেক বক্তব্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এতে রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি আরও অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে। দেশ-বিদেশেও খারাপ বার্তা পৌঁছানোর আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। আবার অনির্বাচিত সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে এটি জাতির জন্য আরেকটি নেতিবাচক উদাহরণ সৃষ্টি হবে। এ জন্য উদার রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ডান ও বাম দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে অভিন্ন দাবিতে এসব দল সোচ্চার রয়েছে। খুব শিগগির আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল নেওয়া হবে। সেখান থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হবে। একই সঙ্গে একই দাবিতে পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ভূমিকা রাখবে এসব দল। এতেও কাজ না হলে ধীরে ধীরে কর্মসূচির তীব্রতা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে ওইসব দলের। তবে আপাতত সরকারের ওপর সমর্থন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে জানান, ‘রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য এতদিন ধরে তারা সরকারের কাছে যে আহ্বান জানিয়ে আসছেন, ঈদের পর তা আরেকবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে চান। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আনুষ্ঠানিকভাবে হয়তো আহ্বান জানাব। তিনি কী পদক্ষেপ নেন এবং কী ঘোষণা দেন, তার জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করব আমরা। এর পরও প্রত্যাশিত ঘোষণা না এলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরব।’

তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যদি একেক সময় একেক কথা বলেন, ‘দেখতে হবে কেন এভাবে বলছেন? আমরা আগে তাঁর সঙ্গে কথা বলে নেব। তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কী করেন, তা দেখব। তার পর আমাদের রাজনৈতিক বক্তব্য মাঠে-ময়দানে, জনগণের কাছে কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তুলে ধরব।’

এদিকে আগামী নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ধোঁয়াশা রয়েছে। বিভিন্ন দলের মধ্যে নির্বাচনের ইস্যুতে ঐকমত্যের অভাবও দেখা যাচ্ছে। 

মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট। ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাস। এখনও কোনো রোডম্যাপ প্রকাশিত হয়নি। আমরা স্পষ্ট রোডম্যাপ এবং দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম মন্তব্য করেন, সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচন হলে সেটি মেনে নেওয়া হবে না। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলে নতুন একটি দাবির কথা উঠে এসেছে, যেখানে ইউনূস সরকারকে অন্তত ২০২৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্প্রতি ফেসবুকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (উত্তরাঞ্চল) এ দাবি করেন। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে এ দাবি উঠে আসতে পারে, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় সরকারে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টা হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, এ সরকারের মেয়াদ বাড়ানো দেশের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতার মতে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হলে এবং বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের কোনো মৈত্রী তৈরি না হলে সংগত কারণে জামায়াত ক্ষমতার মধুচন্দ্রিমা থেকে ছিটকে পড়বে। এ অবস্থায় জামায়াত চায় না শিগগির নির্বাচন হোক। জামায়াত প্রভাবিত ছাত্রদের অংশটিও নির্বাচন চায় না। তাদের সঙ্গে কিছু বুদ্ধিজীবীরও এটি চাওয়া। এ কারণে তারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত প্রচারণা শুরু করেছেন।

তাদের মতে, এ সরকার বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছে। শুরুতেই জামায়াত ও ইসলামপন্থিদের প্রতি সরকারের অতিরিক্ত সখ্যের কারণে উদারপন্থিরা সরকারের কাছ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। নানা রকমের বিভাজনের কারণে ছাত্রদের জনপ্রিয়তাও দিন দিন কমতে শুরু করেছে। নারীর প্রতি সহিংসতাসহ নানা ঘটনা সমাজে গভীর ভীতি তৈরি করেছে। সারাদেশে মাজার ভাঙচুর, মেয়েদের ফুটবল টুর্নামেন্ট, গানের অনুষ্ঠান বন্ধ করা, শিল্পীদের হুমকি-ধমকিতে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যাতে মনে হয় দেশে ইসলামপন্থি উগ্রবাদের ব্যাপক উত্থান ঘটেছে। বিশেষ করে যত্রতত্র মব তৈরি করার মধ্য দিয়ে যেভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে, তাতে বহু মানুষ উদ্বিগ্ন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে স্থিতিশীল সরকার চায়। সেনাবাহিনীও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় বলে বারবার জানিয়েছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্বাচন আয়োজন প্রাধান্য পাওয়া উচিত। তাছাড়া নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করলে সেই সরকার সব দিক থেকে জাতীয় সরকার হবে বলে বিএনপি বারবার বলে এসেছে। সেই সরকারেও ড. ইউনূসের দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগ থাকবে। 

সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সতর্ক করতে বিএনপির নেতারা আগে থেকেই বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেছেন। ঈদের আগের দিন বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল বলেছেন, নির্বাচনের আগে সরকার নিরপেক্ষতা হারালে বিএনপি তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। তারা সরকারের পূর্ণ নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা করে, বিশেষ করে অধ্যাপক ইউনূসের কাছ থেকে। যদি প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেন, তাহলে জনগণের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হবে যে, এ সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

চট্টগ্রামে দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময়ের সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একটি শক্তি ক্ষমতায় থাকার জন্য নতুন নতুন পন্থা বের করছে। ফ্যাসিস্টরা দাঁড়াতে পারেনি। এ শক্তিও যাতে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য বাংলাদেশের মানুষ প্রস্তুত রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান রয়টার্সের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না হলে জনগণের মধ্যে জোরালো অসন্তোষ এবং দেশে অস্থিরতা তৈরি হবে বলে সতর্ক করেছেন।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সমকালকে বলেন, ‘এই সরকারের ব্যর্থতা আমরা চাই না। সরকার যাতে বোঝে, সেটা চাইছি। দেশের মানুষের মনের আকুতি অনুযায়ী জাতীয় ঐক্য নিয়ে সরকার যেন কাজ করে এবং দ্রুত নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে তাদের বিদায় নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মানুষ এ সরকারকে দুর্বল ও অকার্যকর মনে করায় নৈরাজ্যের বিস্তার ঘটছে। গণঅভ্যুত্থানের আট মাসেও মানুষের জীবনে স্বস্তি আসেনি। এ অবস্থা চলতে দিলে জনগণের জানমাল আরও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। তাই এ সরকারের সময় বাড়ানোর যেসব কথা বলা হচ্ছে, সেটি না করাই উত্তম। 

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, কিছুদিনের মধ্যে সরকার সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিলে অতীতের মতো সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎভাবে আন্দোলনে নামব।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হলে তা প্রধান উপদেষ্টার জন্য সম্মানজনক বিষয় হতে পারে। নির্বাচনের সময়সীমা স্পষ্ট করা না হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হতে পারে, যা কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় বাংলাদেশের তীব্র নিন্দা
  • গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যায় বাংলাদেশের নিন্দা
  • গাজায় হামলা: রাবি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের পৃথক কর্মসূচি
  • গাজায় নির্যাতিতদের পক্ষে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর
  • ঢাকা-দিল্লির পদক্ষেপই ঠিক করবে সম্পর্কের গতিপথ
  • গণহত্যার দায়ে আ’লীগের বিচার দাবি বিএনপির
  • রাজনৈতিক দলে সংস্কার যে কারণে জরুরি
  • ‘‘মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধ করে দেন, জনগণ আস্ত একটা মিডিয়া’’
  • চলতি মাসেই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি