পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ আরোপিত সংস্কৃতি: মৎস্য উপদেষ্টা
Published: 7th, April 2025 GMT
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘‘পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ আমাদের কোনো সংস্কৃতির অংশ না। যারা ঢাকায় থাকেন, তারা এটা চালু করেছেন। এটা আরোপিত সংস্কৃতি।’’
সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপরে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘মানুষ পহেলা বৈশাখে ইলিশ খায় কেমন করে? এ সময় তো ইলিশ পাওয়ার কথা না। এ সময় ইলিশের জাটকা থাকে। পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ আমাদের সংস্কৃতির অংশ না। এটা আমি পরিষ্কার করতে চাই। যেহেতু ঢাকায় এটা চালু হয়েছিল।’’
‘‘পহেলা বৈশাখে যারা ইলিশ খাবেন, তারা জাটকাই খাবেন। একই সঙ্গে তারা আইন লঙ্ঘন করবেন। কাজেই বাজারে ইলিশ পাওয়াটাও আইনের লঙ্ঘন। এই সময়টাতে আমরা জোরালোভাবে জাটকা সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করার কথা বলেছি’’ যোগ করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘‘অন্য যে কোনো সময় ইলিশ খেলে আমাদের কোনো বিষয় না। কিন্তু ১৪ এপ্রিল পান্তার সঙ্গে ইলিশ খাওয়া হয়, সেটা যেন না খাওয়া হয়, সেই অনুরোধটা করব। কারণ এ সময় ইলিশ নয়, জাটকা খাওয়া হয়। সে হিসেবে জাটকা সংরক্ষণ করে ইলিশে রূপান্তর করার আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পহেলা বৈশাখের আগের দিন বাঙালি সংস্কৃতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সেটা হলো চৈত্র সংক্রান্তি। সেখানে কোনো আমিষ খাওয়া হয় না। সেদিন ১৪ রকমের শাক খাওয়া হয়, বিশেষ করে তেতো শাক যেমন গিমা শাক।’’
চৈত্র সংক্রান্তি পালন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এসব উপলক্ষে আপনারা বাতাসা খান, দই, চিড়া, মিষ্টি, ছাতুর শরবত খান, ভাত, শাক-সবজি খান।’’
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গে রামনবমীতে বিজেপি-তৃণমূলের মিছিল
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রামনবমী উপলক্ষে আজ রোববার মিছিল বের হয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টিসহ (বিজেপি) বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের উদ্যোগে এই মিছিল হয়। এদিকে এ উপলক্ষে মিছিল বের করেছে তৃণমূল কংগ্রেসও।
রামের জন্মদিন উপলক্ষে এই রামনবমীর মিছিলে অস্ত্র হাতে, বিশাল বিশাল সাউন্ড বক্স বাজিয়ে জয়ধ্বনি করে রামভক্তদের হাঁটতে ও নাচতে দেখা যায়। কয়েক জায়গায় পুলিশ মিছিল আটকালে বিজেপির রাজনৈতিক নেতাসহ ভক্তরা পথে বসে পড়েন।
তৃণমূল কংগ্রেসও এদিন পাল্টা পথে নেমেছে। তাঁদের নেতা-নেত্রীরাও রামনবমী পালন করতে পথে নেমেছেন। দলের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রামনবমী উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীরা বলেন, তাঁরা বিজেপির মতো অস্ত্র নিয়ে নয়, অস্ত্র ছাড়া রামের পূজা করছেন।
হুগলি জেলার তৃণমূলের সংসদ সদস্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি উপোস করে পথে মিছিল করতে নেমেছি। ওদের দিকে (বিজেপি) একজনও কেউ দেখাতে পারবেন যে উপোস করে নেমেছেন? আমরা পূজা করি পূজার মতো করে। ওদের মতো বাঁদরামি করি না।’
বীরভূমের সংসদ সদস্য অভিনেত্রী শতাব্দী রায় বলেন, ‘বিদ্বেষ ভুলে, পারস্পরিক সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে আমরা পথে নেমেছি। আমরা সীতা-রামকে মানি অর্থাৎ রামের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী সীতাকেও আমরা মানি। তাঁকে ভুলে গেলে হবে না। আর আমরা মনে করি যে অস্ত্র ছাড়াই ভগবানকে ডাকা সম্ভব, আমরা সেটাই করি।’
এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম অঞ্চলে একটি নতুন রামমন্দিরের শিলান্যাস করেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী। ওই মন্দির নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজ চলছে জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হিন্দুবিরোধী রাজনীতির বিরুদ্ধে আজ হিন্দু ঝড় উঠেছে, রাম হিন্দুদের ভগবান। আর আজ হিন্দুরা পীড়িত, সে কারণেই আজ এখানে আমরা সমাবেশ করলাম। রামমন্দির নির্মাণের কথা ঘোষণা করলাম, কারণ এখানে অনেক হিন্দু শহীদ হয়েছেন।’
কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই এদিন প্রথমবার বেশ বড় করে রামনবমী পালিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগে এদিন পূজা হয়।
তবে হুগলির কেষ্টপুর অঞ্চলে বিজেপির সাবেক সংসদ সদস্য লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। সেখানে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। হাওড়া জেলায় ১৬টি মিছিল এদিন বেরোনোর কথা, যার কয়েকটি ইতিমধ্যেই বেরিয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘অঞ্জনি পুত্র সেনা’ নামের একটি হিন্দু সংগঠন। মিছিল ঘিরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মালদায় স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ রামভক্তদের মিষ্টি খাওয়ান। সেখানকার বিজেপির সংসদ সদস্য খগেন মুর্মুকেও মিষ্টিমুখ করান মুসলমান বাসিন্দারা। মুর্মু বলেন, এটাই বাংলার ঐতিহ্য, যেখানে সবাই মিলেমিশে থাকেন।
শহরের কেন্দ্রে অবস্থান চাকরিহারা ব্যক্তিদেরঅন্যদিকে কলকাতায় ধর্মতলা অঞ্চলেও বড় ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশে বসেছেন কয়েক হাজার মানুষ। এরা সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে চাকরি হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে আজ কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গ বিক্ষোভ ও মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
শহীদ মিনারে আজ অবস্থান শুরু করেছেন বেশ কয়েক হাজার চাকরি হারানো মানুষ। গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার স্কুলশিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি গেছে। চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল।
আগামীকাল সোমবার শহরের নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারা ব্যক্তিদের বড় সমাবেশ আছে। সেখানে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চাকরি হারানো মানুষদের কথা শুনবেন বলে আগেই জানিয়েছেন।