গোড়ালির হাড় বৃদ্ধিজনিত সমস্যায় তাসকিন
Published: 7th, April 2025 GMT
কাঁধের চোট পরিচর্যা করে তিন সংস্করণেই খেলে যাচ্ছিলেন তাসকিন আহমেদ। ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় দিয়ে নিজেকে দেশের সেরা পেস বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ভালো খেলার পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ‘এ’ প্লাস ক্যাটেগরি পেয়েছেন তিনি।
৩০ বছর বয়সী এ ফাস্ট বোলারের স্বপ্ন যখন আকাশছোঁয়া, সে মুহূর্তে নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বাঁ-পায়ের গোড়ালির হাড়ের বৃদ্ধি। বেশির ভাগ সময়ই ব্যথা নিয়ে ম্যাচ খেলতে হয় তাসকিনকে। সমস্যা বড় হওয়ায় বিকল্পও ভেবে রাখতে হচ্ছে বিসিবির মেডিকেল বিভাগকে। টাইগার ফাস্ট বোলারের গোড়ালির সমস্যার গভীরতা নির্ণয়ে গতকাল এমআরআই করা হয়েছে।
পেস বোলারদের ল্যান্ডিং পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখেন ফিজিশিয়ানরা। গোড়ালির একিলিস টেন্ডনের নিচের দিকের হাড় বেড়ে থাকে।
বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীর মতে, ‘বছরের পর বছর বোলিং করার কারণে পেস বোলারদের গোড়ালির হার বাড়তে পারে। সবারই কম-বেশি বাড়ে। এ কারণে গোড়ালিতে ব্যথা হওয়ার ঘটনা কম। যেটা সাধারণত ঘটে না, সেটাই হয়েছে তাসকিনের ক্ষেত্রে। ম্যাচ খেললে ব্যথা হয় তার। বিশ্রাম নিলে ব্যথা থাকে না। আলট্রাসনোগ্রাম করে হাড় বৃদ্ধির বর্তমান অবস্থান আমরা দেখেছি। এমআরআই করা হয়েছে বিকল্প ভাবনা থেকে। মেডিকেলি কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হলে যেন এমআরআই রিপোর্ট বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো সম্ভব হয়, সে জন্য করা।’
গোড়ালির হাড়ে অস্ত্রোপচার জটিল প্রক্রিয়া বলে জানান দেবাশীষ। দেশে কোনো ক্রীড়াবিদের গোড়ালির হাড়ের এ ধরনের সমস্যা সমাধানে অস্ত্রোপচার করার রেকর্ড নেই বলে দাবি তাঁর।
তিন মাস আগে বাঁপায়ের গোড়ালির ব্যথার কথা বিসিবির চিকিৎসকদের জানান তাসকিন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হাড় বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেন চিকিৎসকরা। চোট পরিচর্যা এবং ‘ওয়ার্ক লোড’ নিয়ন্ত্রণে রেখে খেলার পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে। জাতীয় দলের ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম খান ‘রিহ্যাব’ প্রক্রিয়া দেখভাল করেন।
এ ব্যাপারে দেবাশীষ চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘তাসকিনকে প্রোগ্রাম দেওয়া আছে আগে থেকেই। এ কারণে ঢাকা লিগে সে তিনটি ম্যাচ খেলেছে। ঈদের পর কোনো ম্যাচ খেলেনি। বিশ্রামে থাকতে হয়েছে ব্যথামুক্ত হতে। মূলত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলার জন্যই লিগে কম খেলেছে। টেস্ট খেলার ক্ষেত্রেও তাকে বেছে বেছে খেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
গতকাল পর্যালোচনা শেষে টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকদের ইতিবাচক বার্তাই দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। টেস্ট খেলার ব্যাপারে তাসকিনের আপত্তি নেই। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন তাসকিন।
বাংলাদেশ এ বছর খুব বেশি টেস্ট না খেললেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঠাসা সূচি। ২০ এপ্রিল জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে শুরু হবে মৌসুম। মে মাসে পাকিস্তানে খেলবে পাঁচ ম্যাচ টি২০ সিরিজ, জুন-জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে হবে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ। জুলাই-আগস্টে হোমে টি২০ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এর পরই হোম সিরিজ হবে ভারতের বিপক্ষে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও খেলতে হবে তাসকিনদের। স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে ফিট রাখতে বিশ্রাম নীতিতে যেতে হতে পারে তাঁকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
একমাত্র এমআরআই যন্ত্র ঠিক করতে ৪২ বার চিঠি
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের লাখো রোগীর দুর্দশা কোনোভাবেই কাটছে না। চার বছর ধরে অচল পড়ে আছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) যন্ত্রটি। এ যন্ত্রের রোগ সারাতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চার বছরে ৪২ বার চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতবার চিঠি দেওয়ার পরও ঘুম ভাঙেনি প্রশাসনের।
এদিকে বছরের পর বছর যন্ত্রটি নষ্ট থাকায় প্রতিদিন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী। সরকারিভাবে মাত্র ৩ হাজার টাকায় যে এমআরআই পরীক্ষা চমেকে করানো যায়, বেসরকারি হাসপাতালে সেটি করতে গুনতে হয় ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা, যা একজন স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে বহন করা অসম্ভব। এ পর্যন্ত একাধিক টিম যন্ত্রটি দেখে গেলেও হয়নি সমস্যার সমাধান। এখন এটি সচলে প্রয়োজন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ব্যাটারি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সেটি চীন থেকে এসেছে, এখন অপেক্ষা প্রতিস্থাপনের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালে ১০ কোটি টাকা মূল্যের জাপানি হিটাচি ব্র্যান্ডের এমআরআই যন্ত্রটি চমেক হাসপাতালে বরাদ্দ দেয়। পরে ঢাকার মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড মেশিনটি সরবরাহ করে। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিলে শুরু হয় এটির সেবা কার্যক্রম। তিন বছরের ওয়ারেন্টির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই এটি ২০২০ সালের অক্টোবরে অচল হয়ে পড়ে। প্রায় সাত মাস পর ২০২১ সালের মে মাসে এটি মেরামত করে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এর এক মাস না যেতেই ফের অকেজো হয়ে পড়ে যন্ত্রটি। সেই থেকে এখনও অচল পড়ে আছে। এর পর থেকে এমআরআই কক্ষে ঝুলছে তালা। তাই একাধিকবার গিয়েও পরীক্ষা না করে ফিরে যেতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনকে। আবার তাদের কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, যন্ত্রটি সচল করতে গত চার বছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ নিমিউ অ্যান্ড টিসি, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক দপ্তরে ৪২ বার চিঠি পাঠানো হয়েছে। এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ফাইল যেতে বিলম্ব হওয়া, অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নানা ছলচাতুরী, দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে যন্ত্রটি এখনও সচল করা সম্ভব হয়নি।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে পাঠানো একাধিক চিঠিতে ‘বিষয়টি অতীব জরুরি’ বলেও উল্লেখ করা হয়। যন্ত্রটি মেরামতে প্রায় ৭ কোটি টাকা প্রয়োজন।
এই অঞ্চলের কয়েক লাখ রোগীর একমাত্র ভরসার ২ হাজার ২০০ শয্যার চমেক হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় চার হাজার। প্রতিদিন শুধু বহির্বিভাগেই চিকিৎসা নেন আরও তিন হাজার রোগী। এর মধ্যে প্রতিদিন দুই শতাধিকের বেশি রোগীকে এমআরআই পরীক্ষার জন্য রেফার করেন বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরা।
মায়ের এমআরআই করাতে আসা ছেলে বখতিয়ার হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাওয়ায় চিকিৎসক মায়ের এমআরআই পরীক্ষার পরামর্শ দেন। পরীক্ষাটি করাতে গিয়ে একাধিকবার ফিরে আসতে হয়েছে। যন্ত্রটি কখন সচল হবে, সেটিও নিশ্চিত করতে পারছে না কেউ। আমার মতো অনেক রোগীর পক্ষে বাড়তি খরচে বেসরকারিতে পরীক্ষা করানো অসম্ভব।
চিকিৎসকদের মতে, মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্নায়ু, টিউমার, স্ট্রোক, মেরুদণ্ড, লিগামেন্টসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের সূক্ষ্ম রোগ নির্ণয়ের জন্য এমআরআই পরীক্ষা জরুরি। এটির রিপোর্ট পাওয়া সাপেক্ষেই মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিমিউ অ্যান্ড টিসি বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এটি সচলে আর্থিক, প্রশাসনিক অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একাধিকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নানাভাবে গড়িমসি করা হয়েছে। এ কারণেই সারানো সম্ভব হয়নি।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন সমকালকে বলেন, কয়েকদিন আগে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি এসেছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা যন্ত্রটি সচলে এরই মধ্যে যাবতীয় কাজ শুরু করেছেন। তারা পরীক্ষামূলকভাবে কিছুদিন এটির কার্যক্রম তদারকি করবেন। তাদের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পাওয়া সাপেক্ষে তা রোগীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। নতুন ব্যাটারির পাশাপাশি এমআরআই যন্ত্রটিতে আরও বেশ কিছু যন্ত্রপাতি সংযোজনের প্রয়োজন হচ্ছে। টানা কয়েক বছর এটি বন্ধ থাকায় পুরোপুরি সচলে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করছি সপ্তাহের মধ্যে এটি আবারও সচল হবে। এটি যত তাড়াতাড়ি সচল হবে, তা রোগী-স্বজনদের মতো আমাদের মাঝেও স্বস্তি ফিরবে।
জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সভাপতি ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের কোটি মানুষের প্রধান ভরসার কেন্দ্রে এমআরআই মেশিন আছে মাত্র একটি, যা চার বছর ধরে নষ্ট পড়ে আছে। যে কারণে প্রতিদিন শত শত গরিব-অসহায় রোগী সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মাত্র কয়েক কোটি টাকার অভাবে এত রোগীর প্রয়োজনীয় যন্ত্রটি নষ্ট থাকাটি চরম দুর্ভাগ্যের। এটি দায়িত্বশীলদের অবহেলা ও গাফিলতির বহিঃপ্রকাশ।