ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই। একের পর এক বোমা বর্ষণে নির্বিচারে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরপরাধ ফিলিস্তিনিরা। এমন অবস্থায় গাজার মানুষদের জন্য হৃদয় কাঁদছে মানুষের। সঙ্গে বিশ্বব্যাপী চলছে ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ।

বাংলাদেশের রাস্তায় রাস্তায় ফিলিস্তিনের পক্ষে নেমেছে সাধারণ মানুষ। এ থেকে বাদ যায়নি শোবিজ তারকারাও। এই নৃশংসতার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের পক্ষে মুখ খুলেছেন দেশের জনপ্রিয় তারকারা।

গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে গাজাবাসীর পক্ষে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন শাকিব খান। এ পোস্টে তিনি লিখেন, “গাজা শুধু একটি ভৌগোলিক নাম নয়; এটি যেন আজ নির্যাতিত মানুষের প্রতীক! দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছু করতে না পারা! তাদের (ফিলিস্তিনি) পাশে আছি— ভালোবাসা, সংহতি, আর শান্তির প্রত্যাশায়।”

আরো পড়ুন:

গাজা নির্যাতিত মানুষের প্রতীক: শাকিব খান

বরবাদ নিয়ে স্রেফ ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল: ডিওপি শৈলেশ

শাকিব ছাড়াও গাজায় বর্বর হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। বিশ্ব নেতাদের সমালোচনা করেছেন তিনি। ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, “দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি সেনারা ১৫ জন জরুরি চিকিৎসাকর্মীকে হত্যা করেছে। গাজায় যে নিষ্ঠুর আর হৃদয়হীন গণহত্যা ইসরায়েল চালিয়ে আসছে, এটা তারই অংশ। পৃথিবীকে তারা ফিলিস্তিনিশূন্য করার নিয়ত নিয়ে নেমেছে।”

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা সিয়াম আহমেদ গতকাল বিকালে নিজের ফ্রি প্যালেস্টাইন স্যুটের একটি ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন, “আমি যখন এই পোস্ট লিখছি ততক্ষণে গাজার অস্তিত্ব কী মুছে গেছে? আমরা কি পারলাম না এই শহরটাকে, এই দেশটাকে বাঁচাতে? ফিলিস্তিনের এই ধ্বংসাবশেষের দায় কি আমরা কেউ এড়াতে পারব?”

আক্ষেপ ও অসহায়ত্বের কথা উল্লেখ করে ঢালিউডের আরেক চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ লিখেছেন, “গাজার আকাশের যে ধোঁয়া আর অশ্রুর বৃষ্টি সেই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে আমরা শুধু প্রার্থনা করতে পারি, কাঁদতে পারি, আর চিৎকার করতে পারি। এই মানুষগুলোর অপরাধ কি শুধু এই যে, তারা নিজেদের মাটিতে বাঁচতে চায়?”

গায়ক আসিফ আকবর গাজাবাসীদের নিয়ে লিখেছেন, “বিদায় রাফাহ্-গাজার জান্নাতি শহীদেরা। শ্রেষ্ঠ ধর্মের অনুসারী আর তাদের নিকৃষ্ট শাসকরা আনন্দে থাকুক জ্বলন্ত জমিনের দোজখে।”

নব্বইয়ের দশকের একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনও এক ভিডিও বার্তায় গাজার প্রতি নিজের সমর্থন জানিয়েছেন। এছাড়াও ঢাকার শোবিজের গাজার সমর্থনে সরব হয়েছেন।

আল জাজিরা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং এর মধ্যেই এক দিনে আরো অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এতে করে ভূ-খণ্ডটিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ জনে পৌঁছেছে।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে মিত্রদের পাশে চান ট্রাম্প

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পরই যুক্তরাষ্ট্রকে কার্যত মিত্রশূন্য করেছেন ট্রাম্প। গত তিন মাসে দশকের পর দশক ধরে চলা ঐতিহাসিক মিত্রদেরও দূরে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। এমনকি তাদের ওপর উচ্চমাত্রায় শুল্ক বসিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছেন। তবে এখন এসে পুরোনো মিত্রদের সহায়তার প্রয়োজন অনুভব করছে ট্রাম্প প্রশাসন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে পুরোমাত্রায় বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেও কীভাবে জয়ী হবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর হুমকির কাছে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নতি স্বীকার না করায় বেইজিংয়ের ওপর শক্তি প্রয়োগে মিত্রদের পাশে চাইছেন তিনি। 

দ্য গার্ডিয়ান জানায়, বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চমাত্রায় শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিকে টালমাটাল অবস্থায় ফেলে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে এক সপ্তাহের মাথায় পিছু হটেন। চীন বাদে এবং ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক রেখে অতিরিক্ত শুল্ক স্থগিত করেন তিনি। আর কয়েক ধাপে চীনের পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করেন। পাল্টা জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। এ অবস্থায় বেইজিংকে চাপে ফেলতে চাইছে ওয়াশিংটন। 

শনিবার বিবিসি জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন স্মার্টফোন ও কম্পিউটারকে অনুরূপ পাল্টা শুল্ক বা রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফের আওতার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও বর্ডার প্যাট্রল নোটিশ জারি করে। সেখানে বলা হয়, অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ও কম্পিউটার সমানুপাতিক পাল্টা শুল্কের বাইরে থাকবে। অ্যাপলের আইফোন, স্যামসাংসহ বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির জন্য এটি বড় সুখবর হতে পারে। অ্যাপল তাদের আইফোনের ৮০ শতাংশ চীনের কারখানায় তৈরি করে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক শক্তি কাজে লাগাতে পারেন, তবে চীনা বাজারে প্রবেশাধিকার, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি চুরি, শিল্প গুপ্তচরবৃত্তিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে বেইজিংয়ের ওপর চাপ তৈরি করা সম্ভব। তবে একটা সমস্যা হলো, এ পদ্ধতি ট্রাম্পের ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রথম’ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এ সপ্তাহে ফক্স নিউজকে বলেন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের মতো মার্কিন মিত্ররা শিগগির ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় বসবে। এর মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনামও। তিনি বলেন, সবাই টেবিলে আসছে এবং মূলত চীন চারদিক থেকে ঘেরা পড়েছে। আলোচনার বিষয়বস্তু একটি যৌথ লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমরা কীভাবে বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের অংশগ্রহণকে ভারসাম্যে আনতে পারি, এটাই এখানে বড় জয়। 

শুক্রবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিটকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ট্রাম্প যখন বন্ধু ও শত্রু উভয়ের সঙ্গেই সমান আচরণ করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা কেন চীনকে মোকাবিলায় সহায়তা করবে? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আপনাকে আমাদের মিত্রদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যারা যোগাযোগ করছে। তারা স্পষ্ট করেছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন, আমাদের বাজার প্রয়োজন এবং আমাদের ভোক্তা ভিত্তি প্রয়োজন।’ 

তবে ওভাল অফিসে ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প যা কিছু করেছেন, তা মিত্রদের বারবার অস্বস্তিতে ফেলেছে। এ সপ্তাহে বেশ কয়েকবার তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরোধিতা করেন। আর কেবল তিনিই ইউরোপবিদ্বেষী নন। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স মিউনিখ সুরক্ষা ফোরাম ও ইয়েমেনে বিমান হামলা সম্পর্কে কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপ চ্যাটে মহাদেশটির প্রতি তাঁর বিতৃষ্ণার কথা জানান। এদিকে, ঐক্যবদ্ধ উত্তর আমেরিকার বাণিজ্য শক্তিকে দীর্ঘদিন ধরে চীনের বিরুদ্ধে একটি সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু ট্রাম্প বারবার কানাডা দখলের হুমকি দিয়েছেন এবং শুল্ক আরোপের মাধ্যমে মেক্সিকোকে লক্ষ্যবস্তু করেছেন। কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি সতর্ক করে দিয়েছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাঁর দেশের ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে। 

এখন প্রশ্ন হলো, ট্রাম্প কি যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুদের এতটাই বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন যে, তারা তাঁর আহ্বান শুনবে না? বারাক ওবামা প্রশাসনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি জেসন ফারম্যান বৃহস্পতিবার সিএনএনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বিশ্বের যে কারও কাছেই অবিশ্বাস্য এক অংশীদার। তবে আমি জানি না আমরা কীভাবে নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠব। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ