মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস তাঁর সম্পদের ১ শতাংশের কম অংশ তাঁর সন্তানদের দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার চেয়ে সন্তানদের নিজের প্রচেষ্টায় সফল হওয়া উচিত। সম্প্রতি ‘ফিগারিং আউট উইথ রাজ শর্মা’ পডকাস্টে মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বিল গেটস তাঁর মূল্যবোধের কথা তুলে ধরেন। বিল গেটস বলেন, ধনী পরিবারগুলোতে তাদের উত্তরাধিকারের বিষয়টি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের মূল্যবোধ অনুযায়ী হয়ে থাকে।

মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তিরই তাঁর পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তাঁর সন্তানেরা বেশ ভালোভাবে বেড়ে উঠেছেন ও সুশিক্ষা পেয়েছেন। তবে তাঁরা সম্পদের ১ শতাংশের কম সম্পদ পাবেন।

বিল গেটস বলেন, ‘এটি কোনো রাজবংশের বিষয় নয়। আমি তাদের মাইক্রোসফট চালাতে বলছি না। আমি তাদের নিজেদের মতো করে আয় করার এবং নিজেকে সফল করে গড়ার সুযোগ দিতে চাই।’

বিল গেটস ও তাঁর সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডার তিনটি সন্তান রয়েছে। তাঁরা হলেন রোরি গেটস, জেনিফার গেটস নাসার ও ফোয়েবে গেটস।

৬৯ বছর বয়সী বিল গেটস মি.

শামানিকে বলেন, তিনি চান না তাঁর সন্তানেরা তাঁদের বাবার ‘বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও সাফল্যের ছায়ায়’ বসবাস করুক। বরং তাঁরা নিজেদের মেধায় ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ হয়ে উঠুক।

বিল গেটস আরও বলেন, তিনি চান না তাঁর সন্তানেরা কখনোই যেন তাঁর ‘সমর্থন ও ভালোবাসা’ নিয়ে বিভ্রান্ত না হন। তিনি মনে করেন, যে কারও তাঁদের সন্তানদের প্রতি এমন আচরণ করা উচিত, যা তাঁদের জীবনে ‘অসাধারণ সুযোগ’ এনে দিতে সহায়তা করে।

ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার সূচক অনুযায়ী, বর্তমানে বিল গেটস ১৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের মালিক। এই সম্পদের ১ শতাংশ হচ্ছে ১৫৫ কোটি ডলার। গেটসের তিন সন্তান তাঁদের বাবার মতো বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক না হলেও তাঁদের এই সম্পদও তাঁদের বিশ্বের ধনীদের কাতারে রাখবে।

বিল গেটসই একমাত্র ধনী ব্যক্তি নন, যাঁরা তাঁদের বিপুল সম্পদ কেবল সন্তানদের জন্য রেখে না যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

অ্যাপলের স্টিভ জবস, অ্যামাজনের জেফ বেজোসের মতো অনেক বড় বড় প্রযুক্তি ব্যবসায়ী তাঁদের সম্পদকে জনকল্যাণমূলক কাজে খরচ করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। মৃত্যুর সময় জবস ৭০০ কোটি ডলারের সম্পদ রেখে গেছেন। তাঁর স্ত্রী লরিন পাওয়েল জবস তখন ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাঁদের সন্তানেরা এই অর্থ পাবেন না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ল গ টস র ১ শত

এছাড়াও পড়ুন:

রাখাইনের জন্য করিডোর দিতে সম্মত বাংলাদেশ

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রাখাইনের মধ্যে একটি মানবিক করিডোর স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মার্চ কিংবা এপ্রিলে রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে– এমন শঙ্কা থেকে সেখানে মানবিক সহায়তা দিতে বাংলাদেশের কাছে করিডোর চেয়েছিল সংস্থাটি। এ করিডোর ব্যবহারে কিছু শর্ত মানতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল রোববার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে করিডোরের ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। কারণ, এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সে ব্যাপারে বিস্তারিত আপাতত বলছি না। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ করিডোর বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ হবে কিনা– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা মালপত্র যাওয়ার ব্যবস্থা; অস্ত্র তো আর নেওয়া হচ্ছে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, বাংলাদেশে প্রশাসনিক পর্যায়ে এ করিডোর নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। তবে জাতিসংঘের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এটি দিতে রাজি হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিশ্বের কোনো মানবিক করিডোরই নিরাপত্তা ঝুঁকির বাইরে ছিল না। যদিও মানবিক করিডোর দেওয়া হয় সাধারণ নাগরিকের সহায়তার জন্য। তবে এ ধরনের করিডোর অপরাধীরা নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। করিডোর দিয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমও সংঘটিত হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকায় যুদ্ধাবস্থার কারণে যত মানবিক করিডোর দেওয়া হয়েছে, সেগুলো দিয়ে নানা অপকর্ম সংঘটিত হতে দেখা গেছে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, মানবিক করিডোর ব্যবহারের শর্ত জাতিসংঘকে দেওয়ার আগে ঢাকা ও নেপিদোকে এই করিডোর ব্যবহার বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে হবে। শর্তগুলো নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা করবে ঢাকা।
প্রসঙ্গত, আনুষ্ঠানিক করিডোর না থাকলেও গত ছয় মাসে অন্তত দুইবার টেকনাফ থেকে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে জাতিসংঘ।

মানবিক করিডোরের নিরাপত্তা ঝুঁকি
জাতিসংঘ সম্প্রতি বাংলাদেশকে জানায়, রাখাইনে পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেখানে খাদ্য বিপর্যয়ের শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বাংলাদেশকে বলছে, রাখাইনের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করা না গেলে এবার শুধু রোহিঙ্গা নয়, সেখানে বসবাসরত বাকি জনগোষ্ঠী সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকতে পারে। তাই সেখানকার দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় মানবিক করিডোর দিয়ে সহায়তা পাঠাতে চায় জাতিসংঘ। 

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি- ইউএনডিপি রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে; আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। 

বাংলাদেশ করিডোরকে মানবিক ক্ষেত্রে ত্রাণ পাঠানোর জন্য চিহ্নিত করলেও এটি ঝুঁকিপূর্ণ। সহজ করে বললে, আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে সব সরবরাহ আটকে দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এখন বাংলাদেশ হয়ে যে ত্রাণ যাবে, তা রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকের কাছে পৌঁছাবে, নাকি আরাকান আর্মি সেগুলো দখলে নেবে– এর নিশ্চয়তা নেই।
এমনিতেই রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে জাতিসংঘকে। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের চাহিদার বিপরীতে পূর্ণ সহযোগিতা পায়নি সংস্থাটি। ফলে বাংলাদেশের করিডোর ব্যবহার করে রাখাইনে যে মানবিক সহায়তা যাবে, তা পর্যাপ্ত না হলে সেখানকার নাগরিকদের ত্রাণের উৎসে একসঙ্গে হামলে পড়ার শঙ্কা থাকে।

মিয়ানমারের এ অঞ্চলটি মাদক, অস্ত্র এবং নারী ও শিশু পাচার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। করিডোর দিলে মাদক বা অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে ঢোকার শঙ্কা থাকবে। এ ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে বর্তমানে কোনো স্বীকৃত প্রশাসন নেই। ফলে সেখানকার অস্বীকৃতদের সঙ্গে কোনো ধরনের দরকষাকষির আলাদা ঝুঁকি রয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তো রয়েছেই। মানবিক করিডোর পেতে শুধু বাংলাদেশের ওপর নির্ভর না করে প্রতিবেশী অন্য দেশেও চেষ্টা করা উচিত জাতিসংঘের।

গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরের সময় রাখাইনে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রভাব নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। শুধু বাংলাদেশ নয়, মিয়ানমারের সব প্রতিবেশী দেশকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যেন সহিংসতা বন্ধে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ তৈরি হয়।

তিনি বলেন, প্রথমেই সহিংসতা বন্ধ, একই সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাধানের পথ বের করতে হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম হবে। একই সময়ে মিয়ানমারের ভেতরে মানবিক সহায়তা বাড়াতে হবে, যেন শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরি হয়। এ কারণেই আমাদের আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে মানবিক সহায়তা পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়েও কথা হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে না
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল জানিয়েছেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে যতটুকু প্রয়োজন সেটুকু আমরা নিশ্চয়ই যোগাযোগ করব। নিজেদের স্বার্থেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারব না।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটা হলো পরে। তবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত তো আমাদের স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কারণ, মিয়ানমারের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। তাদের আমরা ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছি। ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে যা কিছু প্রয়োজন, সেটা তো আমাদের করতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। সীমান্তে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিজেদের স্বার্থে কোনো না কোনোভাবে আমরা যোগাযোগ করতে পারি। তবে আমরা অবশ্যই আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করতে পারি না। কারণ, আরাকান আর্মি স্বীকৃত কোনো শক্তি না।’ 
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি প্রবেশ করে বর্ষবরণ করেছে– এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করছে। এ বিষয়ে আমি বলতে চাই না।’

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে পরের কয়েক মাসে মিয়ানমার থেকে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। বর্তমানে ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ৫ হাজার ৬৭৫। এখনও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থেমে নেই। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘ এখন এদের ঘর করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে বলছে।

 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ