প্রিয় এসএসসি পরীক্ষার্থী, তোমাদের জীবনে এটি প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষার ফলাফল জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে। তাই এ পরীক্ষার প্রস্তুতি গুরুত্ব সহকারে নেবে।

 পাঠ্যবই খুব ভালো করে পড়তে হবে। প্রতিটি বিষয়ের মূল বিষয়বস্তু যদি ভালো করে বুঝে নাও, জেনে নাও, তবে ভালো নম্বর পাবেই। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখে পড়বে এবং প্রস্তুতি নেবে।  সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি অংশে পরীক্ষা হবে। সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি অংশে ভালো করতে হলে বিষয়টি অবশ্যই ভালোভাবে জানতে হবে। একটা কথা মনে রেখো, যা পড়েছ, তা-ই ভালো করে রিভিশন দাও। তবেই ভালো করতে পারবে। মনে আত্মবিশ্বাস রেখো।

 * পরীক্ষার আগে

ইতোমধ্যে তোমরা প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা শেষ করেছ। প্রতিটি বিষয়ের পাঠ্যবইয়ের নির্ধারিত সিলেবাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখবে। প্রতিটি বিষয়ের প্রতি সমান গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিটি বিষয়ে ভালো পরীক্ষা হলেই সামগ্রিক ফল ভালো হবে। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখে পড়তে হবে, প্রস্তুতি নিতে হবে।

*সব বিষয়ের গুরুত্ব সমান

সব বিষয়ের ওপর সমান গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক- এই তিনটি বিভাগের প্রতিটিরই আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের পাঠ্যসূচির সঠিক ও পরিষ্কার ধারণা রাখা দরকার। ভাসা ভাসা ধারণা দিয়ে ভালো উত্তর লেখা যায় না। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোর নিচে আন্ডারলাইন দিয়ে রাখলে রিভিশন দিতে সুবিধে হয়। মনেও থাকে বেশি।

 *স্বাস্থ্য ঠিক রাখা

তোমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সারা রাত জেগে পড়ার দরকার নেই। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়াও জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। নির্দিষ্ট রুটিনমাফিক পড়াশোনা করলেই চলবে। অহেতুক দুশ্চিন্তা করা ঠিক হবে না। সব সময় প্রাণবন্ত থাকবে।

 *পরীক্ষার আগের দিন করণীয়

তোমাদের নিশ্চয় জানা আছে, পরীক্ষার আগের দিনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তোমাদের হাতে প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড আছে। এগুলোর কিছু ফটোকপি করে রাখবে। প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড কখনো লেমিনেটিং করবে না। পরীক্ষার দিন কী কী সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে তার একটি তালিকা তৈরি করে রাখবে। যেমন প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডের মূল কপি, জ্যামিতি বক্স, তিন-চারটি কলম, পেনসিল, রাবার, ক্যালকুলেটর, লম্বা স্কেল, হাতঘড়ি ইত্যাদি পরীক্ষার উপকরণ প্রস্তুত করে রাখতে হবে। যেন পরের দিন এই নিয়ে ভাবতে না হয়। সব উপকরণ একটি স্বচ্ছ ফাইলে ভরে রাখবে। যে কলম দিয়ে দ্রুত লেখা যায় এমন কলমই ব্যবহার করবে। গণিত পরীক্ষার দিন তিন-চারটি পেনসিল আগে থেকেই মসৃণ করে রাখবে। নতুন শার্পনার ব্যবহার করবে। পরীক্ষার আগের দিন কোনো অবস্থাতেই বেশি রাত জাগবে না।

*পরীক্ষার দিন

পরীক্ষার প্রথম দিন কমপক্ষে সকাল ৯.

০০ টার মধ্যেই পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নেবে, যেন রাস্তায় যানজটে পড়ে উদ্বিগ্ন হতে না হয়। অন্যান্য দিন ৯.৩০ টার আগে অবশ্যই কেন্দ্রে পৌঁছতে হবে। তবে রাস্তার কথা ভেবে কিছু সময় আগে এসে কেন্দ্র প্রাঙ্গণে কোনো কোলাহলমুক্ত স্থানে অবস্থান করবে। প্রথম ওয়ার্নিংয়ের পরপরই ধীরে ধীরে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করবে। কোনো রকম দুশ্চিন্তা করবে না। মাথায় কোনো চাপ রাখবে না। থাকবে খুব স্বাভাবিক।

 *পরীক্ষার আসনে বসে

পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে স্বাভাবিকভাবেই নির্দিষ্ট আসনে বসবে। নির্দিষ্ট সময়ে বহুনির্বাচনি পরীক্ষার জন্য ওএমআর শিট ও রচনামূলক পরীক্ষার উত্তরপত্র হাতে পাবে। উভয় উত্তরপত্রের নির্দিষ্ট স্থানে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড ইত্যাদি লিখে অবশ্যই মিলিয়ে নিতে হবে। মিলিয়ে নেওয়ার পর খালি ঘরে যে ডিজিটটি লেখা হয়েছে তার নিচের সঠিক বৃত্তটি সাবধানতার সঙ্গে ভরাট করবে। কোনোরূপ তাড়াহুড়া করা ঠিক হবে না। সকল বৃত্ত অবশ্যই কালো বল পয়েন্ট কলম দিয়ে সঠিক নিয়মে ভরাট করবে। কোনো কারণে বৃত্ত ভরাটে ভুল হয়ে গেলে দুশ্চিন্তা না করে সঠিক বৃত্তটি ভরাট করে দেবে। এ ক্ষেত্রে একই কলামে দুটি বৃত্ত ভরাট থাকবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না। মনে রাখবে সঠিক ডিজিটের বৃত্তটি অবশ্যই ভরাট থাকতে হবে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই রচনামূলক উত্তরপত্রের প্রতিটি পৃষ্ঠার বামে এবং ওপরে মার্জিন করে নেবে। প্রতিদিন হাজিরা শিটে নির্দিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষার তারিখের পাশা নির্দিষ্ট স্থানে স্বাক্ষর করতে হবে। স্বাক্ষরের ঘরে নিজের পূর্ণ নাম লিখলে ভালো হয়। প্রতিদিনের স্বাক্ষর একই রকম হতে হবে।

 *পরীক্ষা শুরু হলে 

প্রথমেই বহুনির্বাচনি প্রশ্ন হাতে পাবে। প্রশ্ন পাওয়ার পরপরই নির্দিষ্ট ঘরে সেট কোড লিখবে এবং ভরাট করবে। বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করবে, যাতে কোনোরূপ ভুল না হয়। বহুনির্বাচনি প্রশ্নে ৪টি উত্তর খুব কাছাকাছি থাকে। তাই বুঝে উত্তর করতে হবে। এ ছাড়া যেহেতু বিভিন্ন বিষয়ে বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ১৫টি। কিন্তু প্রশ্ন থাকবে ২৫/৩০টি এবং সময় ২০ মিনিট। তাই প্রশ্ন বাছাই করতে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবে না।  

সৃজনশীল প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর সব কটি প্রশ্ন ভালোভাবে পড়ে নেবে। যে প্রশ্নটি তোমার কাছে সহজ মনে হবে সেটির উত্তর আগে দেবে। প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য সম্পূর্ণ সময়কে পরিকল্পিতভাবে ভাগ করে নেবে।

*রিভিশন জরুরি

উত্তর লেখার পর রিভিশনের জন্য কিছু সময় হাতে রাখবে। রিভিশনের মাধ্যমে অনেক ভুলত্রুটি দূর হতে পারে। গণিতের ক্ষেত্রে রিভিশন অধিক জরুরি। এতে অনেক ভুলত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে অনেক নম্বর প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। অন্যান্য বিষয়েও রিভিশন দেওয়াটা নিশ্চিত করতে হবে।

 *ওভার রাইটিং এড়াতে হবে

পরীক্ষার খাতায় কোনোরূপ উপরিলিখন বা ওভার রাইটিং করবে না। কোনো লেখা ভুল হলে এক টানে কেটে দেবে। বারবার কেটে সৌন্দর্যহানি ঘটাবে না। ওভার রাইটিংয়ে অনেক সময় পরীক্ষক বিরক্ত হতে পারেন। গণিতের ক্ষেত্রে ওভার রাইটিং করলে পরীক্ষকের সঠিক সংখ্যাটি বুঝতে অসুবিধে হয়। তাই ভুল সংখ্যাটি এক টানে কেটে দিয়ে সঠিক সংখ্যাটি পাশে লিখে দেবে। কখনো একাধিকবার কেটে সৌন্দর্য নষ্ট করবে না।

 * পরীক্ষা শেষে

পরীক্ষা শেষ হলে প্রশ্ন নিয়ে বিশ্লেষণ করার দরকার নেই। কার কয়টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর সঠিক হয়েছে, কার কয়টি হয়নি- এসব নিয়ে একদমই মাথা ঘামাবেনা। কোন অঙ্কের উত্তর কত, কার কী কোথায় ভুল হয়েছে- এসব আলোচনা না করা ভালো। কারণ, এসব আলোচনার কারণে কখনো কখনো তোমার মন খারাপ হয়ে যেতে পারে, যার প্রভাব পরবর্তী পরীক্ষায় পড়তে পারে। তাই পরীক্ষা কক্ষ থেকে বের হয়ে সোজা বাসায় চলে আসবে। হাত-মুখ ধোবে, খাওয়া-দাওয়া করবে এবং বিশ্রাম নেবে। তারপর পরবর্তী পরীক্ষার বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবে।

 প্রধান শিক্ষক,গবর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুল,ঢাকা।   

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ত র জন য প রব শ ট করব প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুরে ফরম পূরণ করেও প্রবেশপত্র পায়নি ৭৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী, মানববন্ধন

রংপুরে দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্বে ফরম পূরণ করেও এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র পায়নি ৭৩ পরীক্ষার্থী। এতে ১০ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্করিনী ইউনিয়নের পালিচড়া এম এন উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্রতিবাদে আজ শনিবার দুপুরে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে মানববন্ধন করেছে পরীক্ষার্থীরা।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার মোট ৭৩ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দেবে। গত ডিসেম্বরে আড়াই হাজার টাকা ফি দিয়ে পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করে শিক্ষার্থীরা। তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন সহকারী শিক্ষক রেজাউল ইসলাম। তিনি ব্যাংকে টাকা জমা না দেওয়ায় প্রবেশপত্র দিচ্ছে না শিক্ষা বোর্ড।

তামান্না আখতার নামের এক পরীক্ষার্থী বলে, ‘পরীক্ষার মাত্র পাঁচ দিন আছে। কিন্তু এখনো প্রবেশপত্র হাতে পাইনি। এখন পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়। অথচ পরীক্ষা দিতে পারব কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি।’

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ১১ মার্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান আমিনুর রহমান নামের এক শিক্ষক। তাঁর দাবি, রেজাউল ইসলাম প্রধান শিক্ষক থাকাকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা নেন। কিন্তু টাকা ব্যাংকে জমা না রাখায় তাঁরা প্রবেশপত্র আনতে পারছেন না, রেজাউল ইসলামও কোনো যোগাযোগ রাখছেন না। তবে এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে রেজাউল ইসলামের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

রংপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিষয়টি জেনেছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষককে আগামীকাল রোববারের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান করতে বলেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি, প্রাণ গেল যুবকের
  • পরীক্ষার কক্ষে তোমার করণীয় ৭টি টিপস
  • এসএসসি পরীক্ষায় বসা হলো না সাকিবের
  • এসএসসি পরীক্ষা ২০২৫: একনজরে নম্বর বণ্টন ও সময় বিভাজন
  • ‘বুকে পাথর বাইন্ধা কবরের সামনে খাড়ইয়া থাহি’
  • আর এসএসসি পরীক্ষায় বসবে না হৃদয়-নয়ন
  • রংপুরে ফরম পূরণ করেও প্রবেশপত্র পায়নি ৭৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী, মানববন্ধন
  • ‘প্রস্তুতি নিয়ে আগামী বছর পরীক্ষা দেব’- বিসিবিকে তামিম 
  • মীরসরাইয়ে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল এসএসসি পরীক্ষার্থীর