যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপে সৃষ্ট বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে গতকাল রোববার লেনদেন চলাকালে ৫০ হাজার কোটি রিয়ালের বেশি বাজারমূল্য হারিয়েছে সৌদি আরবের শেয়ারবাজার। এ বাণিজ্যযুদ্ধে পতনের মুখে পড়েছে উপসাগরীয় অন্যান্য শেয়ারবাজারও। সপ্তাহান্তে জ্বালানি তেলের ব্যাপক মূল্যহ্রাস ও বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে দরপতনও উপসাগরীয় বাজারে পতনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।

সৌদি আরবের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক তাদাউল অল শেয়ার ইনডেক্স (টিএএসআই) ৭০০ পয়েন্টের বেশি (৬ দশমিক ১ শতাংশ) কমে ১১ হাজার ২০০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে। এই পতনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে সৌদি আরামকো। কোম্পানিটির বাজারদর ৩৪ হাজার কোটি রিয়ালের বেশি কমেছে। অন্যান্য উপসাগরীয় সূচকেও সামগ্রিকভাবে পতন দেখা গেছে। গতকাল কাতার, কুয়েত, ওমান ও বাহরাইনও শেয়ারবাজারে পতনের খবর জানিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্যান্য দেশের মতো উপসাগরীয় পণ্য আমদানির ওপর ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর বাজারে পতন শুরু হয়। নতুন এই মার্কিন শুল্ক ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা অন্যায্য বাণিজ্যিক চর্চা মোকাবিলায় এ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জে টিএএসআই ও নোমু সূচকে তালিকাভুক্ত ৩৪টি কোম্পানি গতকাল লেনদেনের শুরু থেকে দুপুর পর্যন্ত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দরপতন দেখেছে। বাণিজ্যযুদ্ধ ও চার বছরের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম সর্বনিম্ন স্তরে নেমে আসার কারণে মূলত এই দরপতন হয়েছে।

সৌদি কোম্পানি তাকউইন, আল আমার, অ্যারাবিয়ান ড্রিলিং, গালফ জেনারেল, সাইফ গ্যালারি, ফার্স্ট মিলস, ফোর্থ মিলস, অ্যারাবিয়ান মিলস, আল নাহদি, এন্তাজ, আদ্দিস, আমেরিকানা, তালকো, দার আল–মা’দাত, দেরায়াহ, রায়দান, সামাস্কো, ফাকিয়েহ হেলথ, লুমি, নাইস ওয়ান, নাকি ও হার্ফি ফুডসের শেয়ারের দাম রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।

অন্যদিকে সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক নোমু প্যারালাল মার্কেট ইনডেক্স দুপুর নাগাদ ৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ৬০০ পয়েন্ট হারিয়েছে। টানা পাঁচ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা থেকে পরপর দুই দিন সূচকটি পতনের মুখ দেখেছে। নোমুতে ১৩টি কোম্পানির শেয়ারের দাম রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এর মধ্যে রয়েছে তাকাত, ওবাইকান গ্লাস, অ্যারাবিকা স্টার, জানা, আমওয়াজ ইন্টারন্যাশনাল, তাইবা, মানাওয়ালা, রেশিও, আল বাতাল ফ্যাক্টরি, লামাসাত, সুলতান ফুড, শামু আল মাদি ও হাদাব আল খালিজ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র পতন র

এছাড়াও পড়ুন:

বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে দরপতন, দেশের বাজারেও উৎকণ্ঠা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের প্রভাবে বৈশ্বিক শেয়ারবাজার নাস্তানাবুদ। ঈদের ছুটির কারণে লেনদেন বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এখনো অবশ্য ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কা লাগেনি। লম্বা ছুটি শেষে আজ রোববার দেশের শেয়ারবাজারে খুলছে। তবে বিশ্ব শেয়ারবাজারের টালমাটাল অবস্থা দেখে দেশের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগ-আতঙ্কে আছেন বলে জানান।

বৈশ্বিক গণমাধ্যম বিবিসি ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, ২ এপ্রিল ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পরবর্তী দুই দিনে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের সূচকগুলোর বড় পতন ঘটেছে। ব্যাপক দরপতনে মার্কিন শেয়ারবাজারের মূলধন ৫ লাখ কোটি ডলার কমেছে। ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর থেকে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৬ শতাংশের বেশি কমেছে। একই অবস্থা নাসডাক ও ডাও জোন্সের মতো সূচকের। ২০২০ সালের পর এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা যায়নি মার্কিন বাজারে।

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যাবে—সেই আশঙ্কা আছে। এর জেরে মন্দা দেখা দিতে পারে মার্কিন অর্থনীতিতে। জেপি মর্গ্যানসহ একাধিক সংস্থা ইতিমধ্যে এমন আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা একধরনের আতঙ্কে ভুগছেন। লোকসান এড়াতে তাঁরা বাজার থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশের বড় রপ্তানিবাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশ থেকে যত তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, তার প্রায় ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। পোশাক ছাড়া এই বাজারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৬৬৩ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। আর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ২৮ কোটি ডলারের। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে হোমটেক্সটাইল, হিমায়িত মৎস্য, পাট ও পাটপণ্য, প্লাস্টিক পণ্যসহ আরও বেশ কিছু পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ প্রায় ৭৬০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। যার বড় অংশই ছিল তৈরি পোশাক।

দেশের প্রধান রপ্তানি খাত বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের ৫৪টি কোম্পানি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত। এর বাইরে জুতা, হিমায়িত মৎস্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং সিরামিক খাতের আরও কিছু তালিকাভুক্ত কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এসব কোম্পানির কারণেই ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার ধাক্কা সবচেয়ে বেশি লাগবে পোশাক খাতে। এরপর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যসহ অন্যান্য রপ্তানি খাতেও বড় প্রভাব পড়বে। পাল্টা শুল্কের কারণে দেশের রপ্তানি খাতে কী প্রভাব পড়ে, তা বুঝতে অবশ্য আরও কয়েক মাস লাগবে। কিন্তু তার আগেই এ নিয়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। কারণ, দেশের রপ্তানি খাতের বেশ কিছু কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। তাই বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, রপ্তানি কমলে তাতে এসব কোম্পানির আয়ও কমতে পারে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে কোম্পানির শেয়ারের দাম ও বছর শেষের লভ্যাংশে।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্কের সরাসরি প্রভাব পড়ার আগেই মনস্তাত্ত্বিক চাপে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশ্বের বড় বড় শেয়ারবাজারের দরপতনের খবর প্রচারিত হচ্ছে। তাতে দেশের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। এ কারণে ঈদের ছুটির পর প্রথম কার্যদিবসে আজ রোববার দেশের শেয়ারবাজারে কী প্রভাব পড়ে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। বৈশ্বিক ও দেশীয় যেকোনো বড় ধরনের ঘটনায় শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব দেখা যায়।

দেশের প্রধান রপ্তানি খাত বস্ত্র ও পোশাকের ৫৪টি কোম্পানি প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষস্থানীয় জুতা রপ্তানিকারক কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারসহ হিমায়িত মৎস্য, পাট ও পাটজাত পণ্য ও সিরামিক খাতের আরও কিছু তালিকাভুক্ত কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এসব কোম্পানির কারণেই ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও দেশের শেয়ারবাজারে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প শুল্কের উত্তাপ পড়বে কি না—এ নিয়ে সন্দিহান অনেকে। তাঁরা বলছেন, ‘এমনিতেই আমাদের শেয়ারবাজারে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মন্দা বিরাজ করছে। তাতে ভালো মানের অনেক কোম্পানির শেয়ারের দামও অবমূল্যায়িত পর্যায়ে রয়েছে। এই অবস্থায় শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতনের আশঙ্কা কম। এ ছাড়া শেয়ারবাজারের মূল্যসূচকে রপ্তানি খাতের কোম্পানিগুলোর সমন্বিত প্রভাবও কম। এ কারণে পোশাক খাতসহ রপ্তানিসংশ্লিষ্ট কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম কমলেও অন্যান্য শেয়ারের দাম যদি ঊর্ধ্বমুখী থাকে, তাতে সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

বিশ্ব শেয়ারবাজারের দরপতনের প্রভাব দেশের বাজারে পড়বে কি না—এ নিয়ে গতকাল শনিবার কথা হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর থেকে বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন। অনেকে ফোন করে নিজেদের করণীয় বিষয়েও জানতে চাইছেন। এ ছাড়া ঈদের ছুটির পর নতুন করে যাঁরা বিনিয়োগে আসার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন, তাঁদের সেই আগ্রহেও ভাটা পড়তে পারে।

একটি শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউসের একাধিক শীর্ষ নির্বাহী বলেন, ২০০৭-০৮ সালে বিশ্বজুড়ে যখন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তখন দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। ওই সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিশ্বজুড়ে মন্দার ওই সময়টাতেই দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থানের ভিত্তি তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের মাধ্যমে সেই উত্থানের যবনিকা ঘটে। ২০০৭-০৮ সালের মন্দা যেখানে বিশ্ব অর্থনীতিকে কাবু করে ফেলেছিল, সেখানে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের সিদ্ধান্ত প্রাথমিক ধাপ পেরোয়নি। ফলে রপ্তানিমুখী তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো আদৌ ক্ষতিগ্রস্ত হবে নাকি উল্টো লাভবান হবে, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। তাই রপ্তানিকারক কোম্পানির আয়ে এখনই শুল্কের কোনো প্রভাব পড়ার কথা নয়। তাই এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো গত বছরের লভ্যাংশ ঘোষণা করতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত বছর ব্যাংকগুলো খুব ভালো মুনাফা করেছে। ফলে এ সময়ে এসে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। এই আগ্রহ যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ঈদ-পরবর্তী শেয়ারবাজারে নেতৃত্বের অবস্থানে থাকবে ব্যাংক খাতের শেয়ারগুলো। সেটি হলে সূচকে তার ইতিবাচক প্রভাবই দেখা যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, ছুটির পর রোববার (আজ) লেনদেন শুরুর প্রথম এক ঘণ্টার ধাক্কা সামাল দিতে পারলে বাজার তার স্বাভাবিক ধারা ফিরে পাবে। প্রথম ঘণ্টায় যদি বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দেন, তাহলে হয়তো পতন হতে পারে সূচকের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মার্কিন শুল্কনীতির ধাক্কায় এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ারবাজারে বড় ধস
  • প্রভাব কম দেশের শেয়ারবাজারে
  • সিদ্ধিরগঞ্জে সাজাপ্রাপ্ত আসামি আজিজুল হাকিম গ্রেপ্তার
  • দরপতনে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু, তবে মাত্রা কম
  • বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে দরপতন, দেশের বাজারেও উৎকণ্ঠা
  • সব মার্কিন পণ্যে চীনের শুল্ক
  • চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপ, সতর্ক করলেন ট্রাম্প